সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
একের পর এক নাটকীয়তা আর চমক দেখাতে পারদর্শী হাসিনার সরকার। সরকারের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীর পদ থেকে মোহাম্মদ হানিফকে সরিয়ে দেয়া হয়।দীর্ঘ পাঁচটি বছর আওয়ামীলীগের তুখোড় বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমদকে হঠাত করে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে ডেকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে অধিক পর্যায়ে ব্যস্ত ও গুরুত্বের সাথে তুলে এনে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় করা হয়।
হানিফের বিরুদ্ধে এবং যখন তখন অযাচিত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, বিশেষ করে বিরোধীদলের বক্তব্য খণ্ডনে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী এবং একইসাথে আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার বক্তব্য সুধী, রাজনীতি এবং কূটনৈতিক পাড়ায় বরাবরই বিরক্তির উদ্রেক করে আসছিলো। প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি বেশ কয়েকবার ভারতীয় দূতাবাস থেকে এ ব্যাপারে আগাম সতর্ক করে দেয়া হয়েছিলো। মাঠ পর্যায়ের তৃণমূল নেতাদের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হানিফের দক্ষতা ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে অভাব ও আবোল-তাবোল বক্তব্যের সার মর্ম ইতিমধ্যে পৌঁছে দেয়া হয়েছিলো বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে। অথচ হানিফ দিব্বি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহানুভূতি ও বিশ্বস্ততায় এগিয়ে থেকে সকল সমালোচনা ও মিডিয়া বিরাগভাজন হওয়া সত্যেও সপদে বহাল থেকে প্রতিদিন নসিহত দিতে থাকেন।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কুষ্টিয়ার তৃণমূলের প্রতিনিধি সভায় হানিফের অযাচিত বক্তব্য নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং সংস্থাপন উপদেষ্টা ঠাণ্ডা লড়াই সকলের গোচরীভূত এড়ায়নি।সেদিনের প্রতিনিধি সভায়ই মূলত হানিফের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। শুধু ছিলো মোক্ষম সময়ের টার্গেট মাত্র। কেননা ইতিমধ্যে বিরোধীদলের ডাকা আন্দোলনে দেশ উথাল হয়ে উঠার আশঙ্কায় পিএম ঐ সময় পর্যন্ত হানিফের ভাগ্য ঝুলিয়ে রাখেন।
ইতিমধ্যে হানিফ ভারতীয় ট্রান্সশিপম্যান্টের কাজের বড় রকমের কাজের আদেশে ভাগ বসিয়ে দেন, যা প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশের দূতাবাসের বিরাগভাজনে ঘিয়ের মতো কাজ করে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ভাগ্য অনিশ্চিত যাত্রীর সওয়ারী হওয়ার পর পরই প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশের পছন্দের তালিকায় জাঁদরেল নেতা তোফায়েল আহমেদ পছন্দের শীর্ষে চলে আসেন। যদিও এর অনেক আগে থেকেই তোফায়েল ক্রেজ প্রতিবেশী দেশের হাইকমান্ডের রিকমেন্ডেশনে শীর্ষে থাকা সত্যেও পিএম এর ব্যক্তিগত জেদাজেদির ও বিগত ১/১১ সংস্কারের তকমা গায়ে লেগে থাকার কারণে তোফায়েল ক্রেজে ঢেউ তুলতে পারেনি। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব বাবুর সরাসরি ফোন কলও এতে পিএম এর সন্দেহের দানা আরো বাধিয়ে দেয়। এর মধ্যে পদ্মায় অনেক জল গড়িয়ে যায়।বিরোধীদল, জামায়াত, হেফাজত একাট্রা হয়ে পিএম ও আওয়ামীলীগ বিরোধী আন্দোলন তীব্র করার সকল বন্দোবস্ত দেখে প্রতিবেশী দেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে হানিফ করে বসেন লোভে পাপ, পাপে মৃত্যুর কাজ। আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হয়েও দলীয় সাধারণ সম্পাদকের মতো পদ পদবীকে তোয়াক্কা আর আলেম সমাজের সাথে উস্কানিমূলক কাজ করে তাদেরকে বিএনপির কোর্টে ছেড়ে দেয়া, সুরঞ্জিত বাবুর মনোরঞ্জনে ব্যর্থ ও বর্ষীয়ান নেতাকে তাচ্ছিল্য-প্রতিবেশী দেশের নীতি নির্ধারকদের উদ্বিগ্ন করে তুলে, জায়গা, জমি, পরিত্যক্ত বাড়ি দখল, সকল প্রকারের টেন্ডার ও ভাগ ভাটোয়ারা ও পুলিশের থেকে শুরু করে সকল বদলী বাণিজ্যে ভাগ ভাটোয়ারা, বিএনপি-জামায়াত বিরোধী আন্দোলনে সাংগঠনিক সীমাহীন ব্যর্থতা, মার্কিনীদের বিরাগভাজন, ব্রিটিশদের উপেক্ষা করা আর প্রভাবশালী উপদেষ্টার সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়লে-সব মিলিয়ে হানিফের শনির ভাগ্য উল্টে যায়।জরুরী তলব পড়ে যায় পিএম দপ্তরে। তাৎক্ষণিক পদত্যাগ নয়তো বহিষ্কার। ফলে যা হবার তা হয়ে যায় অতি দ্রুত।
সংলাপ ও নির্বাচন প্রশ্নে পিএম এর সহকারী হিসেবে সীমাহীন ব্যর্থতার দায় নিয়ে হানিফ এখন অনেকটাই মুষড়ে পড়েছেন।রাজনীতির লাইম লাইটে এখন সক্রিয় তোফায়েল আহমেদ।শেখ সেলিম, তোফায়েল, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম, আমির হোসেন আমু এখন আওয়ামীলীগের জন্য সব চাইতে অপরিহার্য হয়ে পড়েছেন। হাসিনা এখন বুঝতে পারছেন তোফায়েল-কাদের-নাসিমদের পরামর্শ ইতিবাচক ও রাজনৈতিক কৌশলী রাজনীতি গ্রহণ না করে কেবলমাত্র হানিফ-কামরুলদের মতো নেতাদের পরামর্শে নেগেটিভ রাজনৈতিক কুশলী খেলা খেলতে গিয়ে আলেম-উলামা সহ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে করেছেন উপেক্ষিত।হেফাজতের মতো কট্রর আলেমদের বাগে আনার জন্য দরকার ছিলো শুরু থেকেই তোফায়েল-আমুদের মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের। হাসান-কামরুল-হানিফরা আলেম উলামাদের সঠিকভাবে হ্যান্ডল করার পরিবর্তে আলেম উলামাদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছেন। ইফার ডিজি শামীম এর সাথে মিলে প্রাইম মিনিস্টারের জন্য হেফাজত এখন গোদের উপর বিষ ফোঁড়া হয়ে আছে। উপরন্তু হেফাজত কার্ড এখন বিএনপি ও জামায়াতের সাথে মিলে মিশে মাঠে নামলে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি কোনভাবেই ঠেকানো যাবেনা। আর ক্ষমতায় হানিফ-হাসান-কামরুল আর ইফার ডিজি শামীমদের রেখে হেফাজত সরকারের সাথে কোন ধরনের সমঝোতায় পৌছবেনা-এটা এখন নিশ্চিত।
মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, আওয়ামীলীগ ঘুরে দাঁড়াতে পারে, যদি অর্বাচীন এবং দাম্ভিক নেতাদের সরিয়ে দিয়ে দক্ষ ঝানু ও নেতা-কর্মীদের কাছে পরীক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য তোফায়েল-আমু-নাসিম-কাদের আর মান্না-আখতার-সুলতান-মুকুলবোস-বাহাদুরদের মতো দক্ষ সাংগঠণিক সম্পাদকদের দূরে নয়, কাছে ডেকে নিয়ে মাঠে নামিয়ে বাংলাদেশ চষে বেড়ালে হাসিনার সরকারকে শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধের মতো অসাম্প্রদায়িক ইস্যু আর টেকসই উন্নয়ন কৌশল নিয়ে জনতার কাতারে গিয়ে বিনয়ের সাথে ভোট প্রার্থনা করলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারে। তার উপর সাম্প্রতিক সময়ে সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার নেতৃত্বে যে চৌকস ১৫০জনের ওয়েব এক্সপার্টদের সমন্বয়ে টিম গঠন করে মাঠে নামানোর অপেক্ষায় রয়েছে, শুধু মাত্র অসাধারণ ওয়েবসাইট করলেই হবেনা, সেই সাথে ঐ সব দক্ষ তরুণদের মতামত নিয়ে সুপরিকল্পিত নির্বাচনী প্রচারণাই পারে হানিফ-কামরুল আর ইফার ডিজিদের অরাজনৈতিক কার্যকলাপ পেছনে ফেলে বৈপ্লবিক এক আশার আলোর সঞ্চার করতে। নতুবা আওয়ামীলীগকে এখন এই হানিফ-কামরুল আর ইফার ডিজির ভুলের মাশুল আগামী নির্বাচনে বড় করুণ ও নিষ্ঠুরভাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে গোয়েন্দারা আগাম রিপোর্ট দিয়েছেন। যদিও ইতিমধ্যে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, পিএম একশন নিতে অনেক দেরী করে ফেলেছেন। রাজনীতির বল এখন বিরোধীদের হাতে। হানিফ কিংবা আর কাউকে এখন বাদ দিয়ে কতোটুকু শেষ রক্ষা হয়, সেটাই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হয়ে আছে।
Salim932@googlemail.com
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ :