স্টাফ রিপোর্টার:
হঠাৎ করেই দেশের বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে রসুনের দাম। প্রতি কেজিতে এর দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় এবং দেশি রসুন (বড়) বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। আর দেশি রসুন (ছোট) বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগে এসব বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় এবং দেশি রসুন ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে দেশের খুচরা বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুনের দাম ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা এবং প্রতি কেজি দেশি রসুন ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। সরকার দ্রুত পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রসুনের দাম ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ার কারণ চীনা রসুনের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমদানিকারকরা জানান, চায়না রসুনের সরবরাহ ও মজুত কম। খুচরা দোকানিরা দামের দিক থেকে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছেন। তবে খুচরা দোকানিরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাছাড়া, বাজারের দামে যথেষ্ট তফাৎও পাওয়া গেছে। ভোক্তারা এ ব্যাপারে টিসিবি’র হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় এখন চীনা রসুনের দাম প্রায় ১৬৭ শতাংশ বেশি। চীনা রসুনের দাম কেজিতে ৬০ টাকা বেড়েছে। সংস্থাটির বাজার দরের তালিকা মতে, আমদানি করা রসুন ২৫০ টাকা থেকে ২৭০ টাকা এবং দেশি রসুন ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ শুক্রবার আমদানি করা রসুন ১৭০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় এবং দেশি রসুন ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সংস্থাটির হিসাব মতে, দুইদিনের ব্যবধানে আমদানি করা প্রতিকেজি রসুনের দাম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা এবং দেশি রসুনের দাম ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশ এবং আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। গত এক মাস আগে দেশি রসুন ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ১৭৫ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে কী কারণে দাম বেড়েছে সে সম্পর্কে টিসিবি জানায়নি। সূত্র জানায়, দেশে বছরে ৫ লাখ টন রসুনের চাহিদা আছে। এর সিংহভাগই দেশে উৎপাদিত হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রসুন উৎপাদিত হয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টন। গত নয় মাসে আমদানি হয়েছে ৩৮ হাজার টন রসুন।
কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী আবদুর রহমান জানান, মাসখানেক পরে চীনে নতুন মৌসুমের রসুন বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন দাম কমে যাবে। এ কারণে এখন কেউ আমদানি করতে চাইছে না। এখন যেসব চীনা রসুন বাজারে আছে সেগুলোর আমদানি খরচ কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা পড়েছে। রাজধানীর বাজারে দেশি এক গোটার রসুনও বিক্রি হয়। সেটার দাম আরো বেশি। বাছাই করা এক গোটার রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩২০ টাকা দরে।
এদিকে রোজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিনি ও ছোলাসহ নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, এরপরও কেউ কারসাজি করে দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, টিসিবি ও অন্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে আলাপ করে সংসদীয় কমিটি নিশ্চিত হয়েছে রোজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে। এরপরও কয়েকটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা আশ্চর্য হচ্ছি। অচিরেই মজুতদারি ও দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য দায়ী কোনো গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা কিংবা কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির দেখায়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তিনি জানান, বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঢাকায় ১৪টি টিম কাজ করবে।
এদিকে হলুদ ও মরিচের দামও বেড়েছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। অন্যদিকে ২০ টাকা বেড়ে মানভেদে শুকনা মরিচ ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান কাওরান বাজারের বিক্রেতারা। আদার দাম কমেছে। প্রতি কেজি চীনা আদা ৬০ টাকা ও দেশি আদা ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে কেজিতে ২০ টাকা বেশি ছিল। পিয়াজের দাম অপরিবর্তিত আছে। কেজিপ্রতি দেশি পিয়াজ ৪৫ টাকা ও ভারতীয় পিয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানের আগেই রসুনসহ অন্য পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবারের রমজানে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যদি এভাবে দাম বাড়তে থাকে তাহলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই শিগগিরই সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করা উচিত বলে মনে করেন তারা।