প্রতিনিধি
১৮ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে রাজপথের একমাত্র বাহন রিক্সার কদর বেড়েছে। মানুষ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে এখন রিক্সাই একমাত্র অবলম্বন। তাই রিক্সা এখন মহাসড়ক পুরোটাই দখল করেছে। আর এ কারণে এখন রিক্সা চালকদের পোয়াবারো। হরতাল-অবরোধে মোটরযান বন্ধ থাকায় রিক্সা চালকদের একচেটিয়া আয়ে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। হাজার টাকার উপরে প্রতিদিন আয়ের কারণে বুট-বাদাম বিক্রেতা, সিএনজি স্কুটার চালকসহ অনেকেই এখন রিক্সা চালানো পেশায় ফিরে আসতে শুরু করেছে।
১৮ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলাবাসী যখন যানবাহনের অভাবে গন্তব্যে যেতে পারছে না, ঠিক তখনই পায়ে চালিত ৩ চাকার বাহন রিক্সা একমাত্র বাহন হিসেবে মানুষের কাছে বেশ কদর পেয়েছে। গত প্রায় এক দশকে দেশের সড়ক/মহাসড়ক কিংবা গ্রামীণ জনপদে মাটির সড়কগুলো একচেটিয়া দখল করে নেয় সিএনজি স্কুটার নামের গ্যাস চালিত ৩ চাকার মোটর গাড়ি। আর এই স্কুটারের কারণে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও রিক্সা নামের অতিপরিচিত পুরানো এ বাহনটির আধিক্য অনেক কমে যায়।
টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে ধীরে ধীরে রাজপথে রিক্সার পরিমাণ বাড়তে থাকে। যাত্রীরাও উপায়ন্তর না পেয়ে রিক্সায় চলাচল শুরু করে। বর্তমানে রিক্সায় যাতায়াত করছে সরকারি/বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাষিত প্রতিষ্ঠানের অফিসগামী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এদের এখন অফিসে যাতায়াতে প্রধান বাহন হচ্ছে রিক্সা। এছাড়া যানবাহন বন্ধ থাকায় বিপদে পড়া লোকজনও বর্তমানে রিক্সায় চলাচল করতে শুরু করেছে।
এসব মানুষকে পারাপার করতে গিয়ে দিনে দিনে সড়কগুলোতে রিক্সা বাড়ছে। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে রিক্সা চালকরাও যা ইচ্ছা তাই ভাড়া আদায় করছে যাত্রী সাধারণ থেকে।
চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে হাজীগঞ্জ বাজারের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রিক্সায় জোড়া যেতে ভাড়া গুণতে হয় ৫শ� থেকে ৬শ� টাকা। বাকিলা থেকে চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ডের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। রিক্সা ভাড়া জোড়া কমপক্ষে ৩শ� টাকা। আবার লোকাল ভাড়া আরো বেশি। বলাখাল বাজার থেকে বাকিলা বাজারের দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। জোড়া প্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা।
এভাবে ভাড়া আদায় করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতি রিক্সা চালক দৈনিক কমপক্ষে ১ হাজার টাকা আয় করছে বলে একাধিক নতুন রিক্সা চালকের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আগে রিক্সা চালাতেন কিন্তু গত ক�বছর ধরে সিএনজি স্কুটার চালাচ্ছেন এমন একজন চালক যার নাম সিদ্দিক মিয়া। বাড়ি হাজীগঞ্জের বলাখাল এলাকার সুবিদপুরে। গতকাল সোমবার স্থানীয় হাজীগঞ্জ বাজারে এ চালকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সিএনজি স্কুটার চালিয়ে মালিককে প্রতিদিন জমা ৭শ� টাকা দিতে হতো। তার উপর আবার স্ট্যান্ডের চাঁদা, জিপি, পৌর ট্যাক্সসহ অনেক খরচ যেতো আমার আয় থেকে। আজ প্রায় ১ মাস ধরে রিক্সা চালাচ্ছি। নিজের খোরাকি (খাওয়া খরচ) ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা এখন প্রতিদিন রুজি করতে পারছি।
আগে রিক্সা চালাতেন। সিএনজি স্কুটার দেশে আসার পরে ড্রাইভিং না জানার কারণে ঐ পেশা ছেড়ে দিয়ে বাদাম বিক্রি করছেন হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজারে। বাড়ি জেলার শাহতলী এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বাদাম বিক্রেতা এখন আবার রিক্সা চালানো পেশায় ফিরে গেছেন। তিনি জানান, মাঝে মাঝে দৈনিক ২ হাজার টাকাও আয় হচ্ছে।