একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা পাক হানাদার বাহিনীকে পথঘাট চেনাতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম দফায় ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকার, আলবদর ও আলশামস্রে নাম এ তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল ১৫ ডিসেম্বর রোববার সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রাজাকারের নামের তালিকা ঘোষণা করেন।
প্রকাশিত তালিকার মধ্যে ৩টি তালিকায় কুমিল্লা জেলার (বর্তমান চাঁদপুর জেলার) বিভিন্ন উপজেলার ১১ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত নামগুলো হচ্ছে : ১. জয়নাল আবেদিন, পিতা মনসুর আলী, বত্তারহাট, পোঃ রূপসা, ফরিদগঞ্জ, কুমিল্লা। ২. আব্দুল খালেক, পিতা আদের আলী মিয়া, গল্লাক বাজার, ফরিদগঞ্জ, কুমিল্লা। ৩. রশিদ, পিতা সাদেক আলী, ফতেপুর, মতলব, কুমিল্লা। ৪. এলাহী বঙ্, পিতা আব্দুল জলিল সরকার, খন্দকারকান্দি, মতলব, কুমিল্লা। ৫. ওজাহের আলী, পিতা আক্কাছ আলী মিয়া, নায়েরগাঁও, পোঃ এখলাছপুর, মতলব, কুমিল্লা। ৬. হুমায়ুন, পিতা সিরাজ আলী মজুমদার, গ্রাম : নাগদা, পোঃ খাদেরগাঁও, মতলব, কুমিল্লা। ৭. আব্দুস ছাত্তার, পিতা আব্দুল মজিদ, আশ্রাফপুর, থানা : কচুয়া, কুমিল্লা। ৮. বাদশা মিয়া, পিতা রোস্তম আলী, বাগলাকান্দি, থানা : চাঁদপুর, কুমিল্লা। ৯. আব্দুল মতিন, পিতা আব্দুল কাদের, রঘুনাথপুর, থানা : চাঁদপুর, কুমিল্লা। ১০. জয়নাল আবেদীন, পিতা আব্দুল মতিন মিয়া, লুধুয়া, থানা : মতলব, কুমিল্লা। ১১. মোঃ আমজাদ, পিতা শরীফ মিয়া, নাদারা, থানা : হাজীগঞ্জ, কুমিল্লা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করেছি। ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধিনতাবিরোধীরা রাজাকার-আলবদর নামে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো। চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের আগে তাদের নামের তালিকা প্রণয়ন করা ছিল আমার প্রতিশ্রুতি। সংসদেও এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম। এরই আলোকে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেকর্ড সংগ্রহ করে রাজাকারদের তালিকা করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকার সময় অনেক রাজাকার-আলবদরের রেকর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, রাজাকারদের নাম-পরিচয় নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্যই তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন করে কোনো তালিকা করিনি। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং যেসব পুরানো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিলো সেটুকু প্রকাশ করেছি। তৎকালীন বিভিন্ন জেলার রেকর্ডরুম থেকে এবং বিজি প্রেসে ছাপানো তালিকাও সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে। যাচাই-বাচাই করে ধাপে-ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছিল। ওই সময় গ্রামে-গঞ্জে বেসিক ডেমোক্রেসি মেম্বার ছিল, তাদের রাজাকার বাহিনীতে লোক সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। গ্রামের এসব মেম্বার এবং বিভিন্ন দল (যেমন জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, জামাতে ওলামা, কনভেনশন মুসলিম লীগ) যারা পাকিস্তানের সমর্থক- ওই রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়।
এসব দলের নেতা রাজাকার বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে রাজাকার বাহিনী তৈরির পেছনে ছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী এবং তাদের জেনারেলরা।
ওইসব বেতনভুক্ত রাজাকার এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যাদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল, তাদের নিয়েই রাজাকারের তালিকা চূড়ান্ত করেছে সরকার। (সূত্র : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবপোর্টাল)