মিজান লিটন :
প্রতিমাসে মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে কাজ করতে ঢাকায় আসে পটুয়াখালীর জিয়রকাটি গ্রামের আদুরী, ১১ বছর বয়সী ছোট্ট মেয়েটি। প্রথমে কথা ছিলো, শুধু মাত্র গৃহকর্তার মেয়েদের সাথে খেলাধুলার জন্য তাকে নেয়া হচ্ছে ঢাকায়। আর কিছু না হোক, অন্তত তিনবেলা ভাত জুটবে আদুরীর, এমন ভেবেই মেয়েকে ঢাকায় পাঠায় তার মা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আদুরীর ঠাঁই হয় নওরীন জাহান নদীর মতো এক মানবতাহীন, মানসিক রোগীর ঘরে। দিনের পর দিন নদীর বিকৃতির শিকার হয় আদুরী।
মৃত ভেবে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া আদুরীর গত বুধবার জ্ঞান ফেরার পর, তার মুখ থেকেই কিছুটা জানা যায়, পৈশাচিকতার নমুনা। আদুরীর মাথার সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এ টেস্টগুলোর রিপোর্ট রোববার ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছেছে। রিপোর্টগুলোর মধ্যে রক্তের হিমোগ্লোবিন পাওয়া গেছে মাত্র ৫ দশমিক ৭, যা সাধারণ মাত্রার চেয়ে অনেক কম। এছাড়াও তার মাথার খুলির ডানপাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আদুরীর চিকিৎসার ব্যাপারে আজ সোমবার আবার মেডিকেল বোর্ড বসবে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে আদুরীর নির্যাতনকারী নদী স্বীকার করেছেন আদুরীকে নির্যাতন করার কথা। আদুরীর শরীরের কঙ্কালসার অবস্থা দেখে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, আদুরী উদ্ধারের অনেকদিন আগ থেকেই খাবার পাচ্ছিল না। এছাড়া নির্যাতনের পর তাকে বাইরে বের করে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে তার এ অবস্থা হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুরোপুরি সুস্থ হলে আদুরীর কাছ থেকে নির্যাতনের তথ্য জানা যাবে। ওসিসির কো-অর্ডিনেটর ডা. বিলকিস বেগম জানান, রক্তশূন্যতার কারণে তার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। তাকে রক্ত দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবার মেডিকেল বোর্ডে এ সিদ্ধান্ত নেবে। চিকিৎসকরা জানান, আদুরী এখনও পুরোপুরি স্মৃতিশক্তি ফিরে পায়নি। তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হলেও, এখনো বিপদের আশঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি।
অন্যদিকে, ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) কামাল হোসেন জানান, রিমান্ডে আদুরীকে নির্যাতনের কথা নদী স্বীকার করেছেন। ধারাবাহিকভাবেই কারণে-অকারণে তিনি আদুরীর ওপর নির্যাতন করতেন। নদী বেশ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে দাবি করেছেন তিনি। এসি কামাল হোসেন বলেন, গ্রেফতারের পর নদী পুলিশকে বলেছিলেন তার বাসা থেকে দুই মাস আগে আদুরী চলে যায়। তবে এ তথ্যটি নিজেকে বাঁচানোর জন্য কৌশলে ব্যবহার করেছেন। নদীকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের আওতায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে। রোববার নদীর ৩ দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন ছিল। রিমান্ডে মেয়াদ শেষ হলে জবানবন্দির জন্য তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
এদিকে গৃহকর্মী নির্যাতন মামলা দ্রুত বিচার আইনের আওতায় আনতে আবেদন করা হবে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।