ডাঃ এস.জামান পলাশঃ
যাঁদের বয়স ১৬ থেকে ৪০-এর মধ্যে এবং যাঁদের এমনিতে কোনো অসুখ নেই, নিজেকে সুস্থ মনে করছেন তাঁদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা খুব সহজ। তাঁদের বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। তবে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে পারলে ভালো।
* যে ধরনের খাবার নিয়মিত খেয়ে অভ্যস্ত্ম তাই দিয়ে সেহরি করম্নন। অনেকেই এমনিতে দুধ খেতে অভ্যস্ত্ম নন, অথচ সেহরিতে দুধ-ভাত খান। এতে সারা দিন পেটের অস্বস্ত্মিতে ভুগতে পারেন। তাই নতুন ধরনের কোনো মেন্যু চেষ্টা না করে স্বাভাবিক খাবার খান।
* অতিরিক্ত খাবার সেহরিতে না খাওয়া উচিত। পরিমাণে বেশি না খেয়ে পুষ্টিকর খাবার খান। সেহরিতে যেন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ও ফল থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন। মাছ, মাংস, ডিম, পনির, রম্নটি, আম, কলা, স্যুপ, মিষ্টি, দই ইত্যাদি মিলিয়ে একটি মেন্যু তৈরি করতে পারেন।
* অনেকে সারা দিনের পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করার জন্য সেহরিতে প্রচুর পানি পান করেন। এতে অস্বস্ত্মি বেড়ে যায়। সেহরিতে দুই থেকে তিন গস্নাসের বেশি পানি পান না করাই ভালো; কিন্তু ইফতারের পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত্ম বারবার পানি, শরবত বা জুস পান করম্নন। এতে সারা দিনের পানির অভাব পূরণ হয়ে যাবে।
* ইফতারে ভারী খাবার খেলে রাতের খাবারে দুধ (অভ্যাস থাকলে), ক্র্যাকার, টক দই, ফল ইত্যাদি হালকা খাবার খান। এতে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে। রাতে বেশি খেলে বদহজম হতে পারে।
* অনেকে রাতে খেয়ে একবারে ঘুমিয়ে পড়েন, সেহরিতে আর উঠেন না। অনেকে সেহরিতে শুধু পানি পান করেন। এতে প্রায় ২০-২২ ঘণ্টা পাকস্থলী একেবারে খালি থাকে, যা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ভালো নয়।
্* একান্ত্মই যদি বাইরে ইফতার করতে হয়, তবে ভালো কোনো দোকানের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবেন। সম্ভব হলে মিনারেল পানি পান করম্নন। রাস্তার পাশে উন্মুক্ত স্থানে কেটে রাখা ফল খাবেন না।
* সেহরি ও ইফতারে তৈলাক্ত খাবার পরিহার করম্নন।
* যাঁরা পেটজ্বলা, ব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন তাঁরা ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল বা ইসমিপ্রাজল জাতীয় ওষুধ সেহরি ও ইফতারে খেয়ে নিন।
* যাঁরা স্কুল-কলেজ ও অফিসে বা কাজের প্রয়োজনে বাইরে যান, তাঁদের চেষ্টা করা উচিত ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা ও অপ্রয়োজনীয় কায়িক পরিশ্রম পরিহার করা।
৪০ থেকে ৬৫ বছর বয়সের ক্ষেত্রে
এ বয়সে যাঁরা কোনো রোগে আক্রান্ত্ম হননি, তাঁদের জন্যও বাড়তি কিছু সতকর্তা অবলম্বন করা দরকার। যেমন-
* এ বয়সে রক্তের গস্নুকোজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। তাই সতর্কতা হিসেবে সেহরিতে সিরিয়াল, ছাতু, চিঁড়া, দই ইত্যাদি খাবার খাওয়া ভালো। এ ক্ষেত্রে সারা দিনে ধীরে ধীরে খাবারগুলো থেকে গ্লুকোজ উৎপাদিত হয় ও রোজা রাখা অবস্থায়ও রক্তের গস্নুকোজ একটি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে।
* এ বয়সশ্রেণীতে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। সেহরি ও ইফতারে আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করম্নন। স্বাস্থ্যকর খাবার মেন্যুতে আঁশ বা ফাইবার থাকা খুব জরম্নরি।
* বয়সের কারণেই অনেকের ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স হতে পারে, তাই কায়িক পরিশ্রম পরিহার করতে হবে, রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করা যাবে না।
* যাঁদের প্রচুর চা বা কফি খাবার অভ্যাস, তাঁরা সেহরি ও ইফতারে চা বা কফি খেতে পারেন।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য রোজা
গর্ভবতী অবস্থায়ও রোজা রাখা যায়। যদি সব কিছু ঠিক থাকে ও কোনো জটিলতা না থাকে, তবে রোজা রাখলে শারীরিকভাবে কোনো ক্ষতি হয় না, বিশেষ করে সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার বা মধ্যবর্তী সময়ে। তবে গর্র্ভের প্রথম তিন মাস রোজা রাখলে শিশুর ওজন কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অনেক গর্ভবতী মা রক্তশূন্যতা, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিতে ভোগেন। এসব ক্ষেত্রে রোজা না রাখাই মা ও অনাগত শিশুর জন্য ভালো।
যেসব গর্ভবতী মা রোজা রাখবেন তাঁরা নিচের বিষয়গুলো লক্ষ রাখুন।
* রোজা রাখা অবস্থায় যদি দুর্বলতা, অত্যধিক ক্লান্তি, মাথা ঝিম ঝিম করা ইত্যাদিতে আক্রান্ত হন অথবা বাচ্চার নড়াচড়া টের না পান বা বাচ্চার নড়াচড়া কম মনে হয়, তবে রোজা ভেঙে ফেলুন ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
* সেহরি ও ইফতারে কী খাবেন বিশেষজ্ঞ ডায়েটেশিয়ানের কাছে জেনে নিন। খাবারে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, প্রোটিন থাকা অপরিহার্য।
* বাচ্চাকে দুধদানকারী মায়েদের জন্য রোজা না রাখাই শিশুর জন্য উপকারী।
যাঁদের আছে অসুখবিসুখ
বেশি অসুস্থ মানুষের জন্য রোজা না করার বিধান আমাদের ধর্মেই আছে। তবে কিছু কিছু অসুখ আছে, যা ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি। এগুলোতে কিছু নিয়মকানুন মানলে কোনো অসুবিধা ছাড়াও রোজা রাখা যায়। যেমন- ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত্ম রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। তবে সব ডায়াবেটিক রোগীই পারবেন তা কিন্তু নয়। যাঁদের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা নেই বা রক্তের সুগার খুব বেশি ওঠানামা করে না, তাঁদের জন্য রোজা রাখা সহজ। তবে-
* ডায়াবেটিস আক্রান্ত্ম রোগী রোজা রাখতে চাইলে রোজা শুরম্নর আগেই ডায়বেটোলজিস্টের শরণাপন্ন হয়ে রক্তের গ্লুকোজ, লিপিড ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। একই সঙ্গে দেখতে হবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। এসব পরীক্ষা- নিরীক্ষার ফল অনুযায়ী চিকিৎসক আপনাকে রোজা রাখার বিষয়ে কী কী নিয়ম মানতে হবে, কী ধরনের খাবার খেতে হবে, তা লিপিবদ্ধ করে দেবেন। পুরো রোজার সময়টা সে নিয়ম মেনে চলতে হবে।
৬৫ ঊর্ধ্বদের ক্ষেত্রে রোজা :
বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা অবস্থায় পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাঁদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বয়সের কারণেই কমে যায় বলে সেহরির সময় ব্লাড সুগার বেড়ে যায়। সকাল পর্যন্ত্ম বেশি বেশি প্রস্রাব হয় বলে আকস্মিক পানিশূন্যতা হয়ে থাকে। ডিহাইড্রেশনের ফলে রক্তের জমাটবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা বাড়ায় স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে। কাজেই ঘন ঘন পিপাসা লাগলে, গলা শুকিয়ে গেলে প্রয়োজনে রোজা ভাঙতে হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের রোগী : উচ্চ রক্তচাপে যাঁরা আক্রান্ত তাঁরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে রোজা রাখতে কোন সমস্যা হয় না।
ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
চাঁদপুর
www.zamanhomeo.com
০১৭১১-৯৪৩৪৩৫