চাঁদপুর: শিশুকালে ঢাকায় দাদা লাল মিয়া সাথে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট মেধাবী শিশু সবুজ এখন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। আপন ঠিকানা হারিয়ে প্রবাসী জীবনের মত আঠারটি বছর পার করে রাশেদ আলম সবুজ। সবুজ বর্তমানে সিরাজগঞ্জ খাজা ইউনুস আলী ইউনিভার্সিটির একজন মেধাবী শিক্ষার্থী।
একটি সংস্থার মাধ্যমে এখন আপন ঠিকানার সন্ধান পাওয়ার পর চাঁদপুর জেলাধীন শাহরাস্তি উপজেলার সুচিপড়া গ্রাামের খলিল মেম্বার বাড়ির মো: বাসু মিয়ার ছেলে সবুজ (২২), তার আপন ঠিকানা জন্মস্থান পিতা-মাতার কাছে সে ফিরে যাচ্ছে।
শিশুকালে সন্তানকে হারিয়ে ১৮টি বছর ধরে সন্তান হারানোর বেদনায় কাঁদছে, সবুজের মা’খোদেজা বেগম। আঠার বছর পর গর্বধারীনি মা’ তার আপন সন্তানকে ফিরে পাওয়ার অধিরআগ্রহে এখন পথ চেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সেই ছোট্ট শিশু এখন ২২ বছরে যুবক, সবুজও মায়ের কোলে ফিরে যাওয়ার অধির অপেক্ষায় সময় পার করছে।
তাকে পাওয়া ও দেখার জন্য আরো অপেক্ষার প্রহন গুনছে তার বাবা মো: বাসু মিয়া ও বড় বোন শিউলি, ছোট বোন সাথী,ছোট ভাই শাকিব ও সাকিল।
এদিকে ২০ এপ্রিল ব্রেন্ডিং বাংলাদেশ আরজে কিবরিয়ার আপন ঠিকানায় সবুজকে নিয়ে আসেন ফেমিলিজ ফর চিলড্রেন এর পরিচালক শিখা বিশ্বাস। সেখানে তিনি ভিডিওটি প্রচারের এক ঘন্টার মধ্যে কেশরাঙা গ্রামের রাশেদ আলম সবুজের মামা নিশ্চিত করেন সবুজ তার ভাগীনা এবং ২০০৪ সালে ঢাকাতে তার দাদা লাল মিয়ার সাথে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া এই সেই সবুজই তার ভাগিনা সবুজ। রাশেদ আলম সবুজের মামা জানান,যে খালুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সবুজ হারিয়ে যায়। সে খালুর মুদি দোকানটি এখনো ঢাকাতে আছে। সেই খালুও সেখানে মুদি ব্যবসা করছেন।
এদিকে সুচিপাড়া উত্তর ইউনিয়নের কাজী ভগ্নিপতি মাওলানা মোস্তফা কামাল এবং তার ছেলে হাসান মাহমুদ সবুজদের বাড়িতে গিয়ে নিশ্চিত করেছেন এই সবুজ ২০০৪ সালে হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট শিশু সবুজ।
আপন দাদা লাল মিয়ার সাথে, ২০০৪ সালের কোনএকদিন রাশেদ আলম সবুজ, রাজধানী ঢাকাতে খালুর বাসায় বেড়াতে যান। খালুর বাসায় কয়েকদিন বেড়ানোর পর দাদা লাল মিয়ার সাথে, বাড়িতে আসার জন্য রওয়ানা করে। বাড়ি ফেরার সময় তার খালা সবুজকে কিছু টাকা দিয়েছে খেলনা কেনার জন্য। প্রতিমধ্যে বাড়ি ফেরার পথে খেলনার দোকান দেখে সবুজ খেলনা কিনে দিতে বায়না ধরে। তাকে ফুটবল কিনে দিতে হবে, দাদা লাল মিয়া বললো- তোমাকে বাড়ি গিয়ে খেলনা কিনে দিবো, কিন্ত সবুজ একগুঁয়েমি হয়ে নাছোড়বান্দা খেলনা ছাড়া যাবেনা। এতে দাদা লাল মিয়া রেগে গিয়ে বললো- তুই থাক আমি যাচ্ছি, এই বলে লাল মিয়া একটু সামনে যাওয় মাত্র প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে পড়ে গেলো সবুজ। এতেই নানা নাতির মধ্যে হয়ে গেল দুরুত্ব ও হারানো বিচ্ছেদ। দাদা লাল মিয়া সবুজকে না পেয়ে ঢাকা থেকে চাঁদপুর জেলাধীন শাহরাস্তি উপজেলার সুচিপড়া গ্রাামে চলে আসেন। দিন যেতে যেতে ১৮টি বছর পার হয়ে গেল।
অতঃপর সবুজ দাদা লাল মিয়াকে হারিয়ে বসে বসে কাঁদতে লাগলো তখন এক মুদি দোকানদার সবুজকে বাসায় নিয়ে গেলো এবং পর দিন ডেমরা থানায় সাধারণ ডায়রি করে তাকে পুলিশের কাছে পৌছে দেয়। পরে থানা পুলিশ অপরাজয় বাংলাদেশ নামে একটি এনজিওর কাছে সবুজকে হস্তান্তর করে। অপরাজয় কয়েক মাস তাদের কাছে রেখে সবুজের পরিবারের সন্ধান না পেয়ে ২০০৫ সালে আরেক বেসরকারি এনজিও ফেমিলিজ ফর চিল্ড্রেন এর নিকট হস্তান্তর করেন।
ফেমিলিজ ফর চিল্ড্রেন এর পরিচালক শিখা বিশ্বাস জানান, সবুজ অনেক মেধাবী ছাত্র তাই ফেমিলিজ ফর চিল্ড্রেন স্থানীয় স্পন্সরের সহযোগিতায় সবুজকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। সবুজ বর্তমানে সিরাজগঞ্জ খাজা ইউনুস আলী ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত।
ব্রেন্ডিং বাংলাদেশ আপন ঠিকানার পরিচালক আরজে কিবরিয়া বলেন, লক ডাউন ২৮ এপ্রিল শেষ হওয়া মাত্রই আমরা আল্লাহ্ অশেষ রহমতে সবুজকে তার পরিবারের কাছে শাহরাস্তি উপজেলার সুচিপড়া গ্রাামে ফিরিয়ে দেওয়ার সকল পরিকল্পনা আমরা করে রেখেছি।
সিনিয়র করসপন্ডেন্ট/চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/