বিদেশে পাঠানোর টাকা নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে বাক-বিতন্ডার জের –
লাশ দাফন করতে গিয়ে ধাওয়া খেয়ে পলায়ন
চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের শেখ বাড়িতে ২ সন্তানের জননী খালেদা বেগম (২৭)-এর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে গৃহবঁধুর লাশ গোপনে দাফন করতে গিয়ে এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে শ্বশুর-শাশুড়ী বাড়ী যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ২০০৪ সালে কচুয়া উপজেলার ৮নং কাদলা ইউনিয়নের আয়মা গ্রামের মাও. সোলায়মান হোসেনের মেয়ের সাথে লক্ষীপুর গ্রামের মাও. মঈনুদ্দিন শেখের ছেলে হাবিবুর রহমানের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই হাবিব সৌদি আরব চলে যায়। তার শ্যালক শাহাদাৎ হোসেনকে সৌদিআরব নেয়ার কথা বলে শশুর মাওলানা মোঃ সোলেমানের কাছ থেকে গত ২ বছর পূর্বে ৪ লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু টাকা নিয়েও শ্যালককে বিদেশ না পাঠানোর কারনে তার স্ত্রী খালেদা বেগম বিদেশ পাঠানোর টাকা স্বামীর কাছে ফেরত চায়। ঐ টাকা চাওয়ায় তার শ্বশুর-শাশুড়ী গৃহবধু খালেদা বেগমকে প্রায়ই শারীরীক নির্যাতন করতো।
গত রোববার গভীর রাতে এ নিয়ে খালেদাকে তার শ্বশুর মারধর করে।এ খবর খালেদা মোবাইলে তার পরিবারকে জানায়। ঘটনার দিন খালেদার রহস্যজনক মৃত্যু হলে এ খবর এলাকার মানূষ জানতে পেরে সকাল সাড়ে ৯টায় তার বড় বোনের স্বামী গাজী মোঃ আনোয়ার হোসেনের মোবাইলে মৃত্যুর সংবাদটি জানায়। খবর পেয়ে তার শ্বশুরকে ফোন করলে শ্বশুর মহিউদ্দিন শেখ মৃত্যুর খবরটি অস্বীকার করে বলেন, সে অসুস্থ হয়েছে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। এ খবর শুনার পর পর বাড়ীতে এসে তার মৃতদেহ মাটিতে পরে থাকতে দেখে চাঁদপুর মডেল থানায় গিয়ে থানা পুলিশকে অবহিত করে গৃহবধূর পরিবার। চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম, উপ-পরিদর্শক ফিরোজ আলম ও সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনা তদন্ত করে। এলাকাবাসী জানায়, ঘটনার আগেরদিন রাতে শ্বশুর-শাশুড়ী গৃহবধু খালেদা বেগমকে শারীরীক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। ঐ গৃহবঁধুর সুমাইয়া আক্তার (৮) ও আব্দুর রহমান (১) নামে দুটি সন্তান বাসায় ছিলো। শিশুদের সামনে তার মাকে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘটনা অন্যদিকে ধাবিত করার জন্য তার শ্বশুর মহিউদ্দিন শেখ চেষ্টা চালায়। এলাকাবাসী জানতে পেরে তার বাড়ীতে প্রবেশ করার সময় শ্বশুর মহিউদ্দিন বাঁশ নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে তাদের ধাওয়া করে। শ্বশুর-শাশুড়ী ও বড় ছেলের স্ত্রী কারিমাকে সাথে নিয়ে নিজেদের বাড়ীর প্রবেশ পথ আটক করে গরম পানি বসিয়ে লাশের গোসল করানোর জন্য গোপনে দাফন করার চেষ্টা চালায়। এ সময় এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে তাদেও ধাওয়া করলে শশুর মহিউদ্দিন খান ও শাশুড়ী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এ মৃত্যুকে খালেদার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিত হত্যা বলে অভিযোগ করেছে। নিহত খালেদার ভাই শাহাদাত জানায়,বিয়ের পর থেকে হাবিব ও তার পরিবারের লোকজন বিদেশে পাঠানোর ৪ লক্ষ টাকা ফেরত চাইলে তাকে শারিরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করতো।
গতকাল সোমবার রাতে বিদেশী নম্বর থেকে ১জন আমাকে ফোন করে জানান, আপনার বোন অসুস্থ্য। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।
এরই পরিপেক্ষিতে রোববার রাতে আমার বোনকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এ ব্যাপাওে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম জানায়, গৃহবঁধূ খালেদা বেগমের ময়না তদন্তের পর প্রকৃত মৃত্যুর রহস্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুুতি চলছে।