ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী লঞ্চের কেবিনে তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চাঁদপুর নৌ পুলিশ আবে জমজম লঞ্চের ৩ স্টাফকে আটক করেছে। তবে লঞ্চের সুপারভাইজার রিপনকে আটক না করায় এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক তিনজন হচ্ছে লঞ্চের স্টাফ রাসেল খান (২৮), সুজন মোল্লা (২২) এবং মাসুম গাজী (৪২)। এই তিনজনই ওই লঞ্চের গ্রিজারম্যান।
এদিকে নৃশংস ঘটনার ৬দিন পার হলেও এখনো পরিচয় মেলেনি নিহত তরুণীর। এমনকি মেয়েটির সঙ্গে থাকা পালিয়ে যাওয়া ঘাতককেও চিহ্নিত করা যায়নি।
এ ঘটনায় চাঁদপুর নৌথানার এসআই ইলিয়াছ বাদী হয়ে অজ্ঞাত খুনিকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আর ওই লঞ্চের ৩ স্টাফকে মামলায় সন্দেহজনক আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
নৌ-পুলিশ থানার ওসি কবির হোসেন খান জানান, খুনিকে সনাক্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। পিআইবি মেয়েটির হাতের আঙুলের ছাপ নিয়েছে। যদি সে ভোটার আইডি কার্ড করে থাকে তাহলে তার আঙুলের ছাপ মিলিয়ে পরিচয় শনাক্ত করা হবে। সেই পরিচয় জানতে পারলে খুনির পরিচয় তদন্ত করে বের করা যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে অবস্থানকারী এমভি আব এ জমজমের দ্বিতীয় তলার ২৩৫নম্বর তালাবদ্ধ কেবিন থেকে ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় সিআইডি, পিবিআই, নৌ পুলিশ ও জেলা পুলিশ মরদেহ ও ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আদালত সংগ্রহ করে। তবে লঞ্চটিতে সিসি ক্যামেরা না থাকায় তরুণীর সঙ্গে কেবিনে অবস্থানকারী এবং পরবর্তীতে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তির পরিচয় এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
জানা যায়, বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীর সদরঘাট থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে এমভি আব-এ-জমজম। লঞ্চটি ছাড়ার আগে তরুণীর সঙ্গে আসা ব্যক্তিটি ৭০০ টাকার বিনিময়ে লঞ্চের স্টাফ সুজন মোল্লা থেকে কেবিনটি ভাড়া নেন। তবে লঞ্চটি চাঁদপুর টার্মিনালে পেঁৗছালে কেবিনে তালাবদ্ধ করে তরুণীর সঙ্গের ব্যক্তিটি গা ঢাকা দেয়। তরুণীর মরদেহের সুরতহালে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে ধর্ষণের পর তরুণীর পরনের স্যালোয়ারের ফিতা গলায় জড়িয়ে ফাঁস দিয়ে এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিআইডি এবং পিবিআই তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ক্রাইমসিন থেকে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করে ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৬ সালে ঠিক একই লঞ্চের কেবিন থেকে আরেক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই ঘটনার ৪ বছর পার হলেও এখনো কোনো কূল-কিনারা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানী সদরঘাট থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে রাতে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বেশকিছু লঞ্চের কেবিনে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা অবস্থান করেন। ভোর রাতে এসব লঞ্চ চাঁদপুরে পেঁৗছালে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ফিরে তারা আবার নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়।
চাঁদপুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, রাজধানীর সদরঘাটে এই বিষয় একটু নজরদারি করা হলে হয়তো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। না হয়, একটার পর একটা ঘটনা ঘটবেই।