চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের ২.১৯ একর ভিপি সম্পত্তি ভূমিদস্যুদের কুদৃষ্টিতে পড়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সরকারের থেকে ওই সম্পত্তি লিজ নিয়ে প্রায় ৬০ বছর যাবৎ ভোগদখলে থাকা একশ’টি পরিবার সেখান থেকে এখন উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা করছে। শুধু তাই নয়, সরকারি কৌঁসুলির রহস্যজনক ভূমিকার কারণে সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লীজ গ্রহীতাদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রীট করা হলে হাইকোর্ট চাঁদপুর জজ কোর্টের ১টি মামলার রায় ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। কিন্তু সরকারি কৌঁসুলি জক কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপীল না করায় এতে করে সরকারের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর প্রতিকার ও সুষ্ঠু বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী লিজ গ্রহীতাদের পক্ষে ইতিপূর্বে মোঃ ইব্রাহীম খান জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, আমরা ৩৫নং আশিকাটি মৌজার অন্তর্গত সি.এস ২৯২, এস.এ ২৪৬ নং খতিয়ান, দাগ নং ৭০৭, ৭০৮, ৭১৫/১৫৮১, ৭০৯, ৭১২, ৭১৩, ৭৫১, ৭৫২, ৭৫৩ মোঃ ২.১৯ একর ভূমি আমরা ৬০ বছর যাবৎ ভোগদখল করে আসছি। গত ৪১ বছর সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বাড়ি-ঘর তুলে এবং চাষাবাদ করে প্রায় ১শ’ পরিবার ভোগদখল করে প্রতি বছর লিজ মানি রিসিটের মাধ্যমে রাজস্ব পরিশোধ করে আসছি। বর্তমান সরকার অর্পিত আইন পাস করার পর ক তফসিল ভূমি অর্পিত মামলা আনয়ন করে। তৎপ্রেক্ষিতে আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে পরামর্শ অনুসারে মাননীয় জেলা দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ কৌঁসুলিকে জেলা প্রশাসক থেকে এনে সরকারের পক্ষে যাবতীয় কাগজপত্র বুঝিয়ে দেন। এদিকে জনৈক হেমন্দ্র নাথ কর ভুয়া মালিক সেজে চাঁদপুর জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। তার ছেলেকে দিয়ে অর্পিত মামলা পরিচালনা করার জন্য আম-মোক্তারনামা করে দেন। কিন্তু উক্ত সম্পত্তি নিয়ে জনৈক হেমন্দ্র নাথ কর সরকারি ভূমি অবমুক্তি করার জন্য বিগত ১৯৭৩ সনে ১১৯/৭৩ স্বত্ব মোকদ্দমা দায়ের করেন। কুমিল্লার সাব জজ আদলতে মামলা করলে সরকারপক্ষে বিজ্ঞ কৌঁসুলি মামলা পরিচালনা করে সরকারের সঠিক কাগজপত্র দাখিল করলে মাননীয় সাব জজ উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা ও উভয়পক্ষের বিজ্ঞ কৌঁসুলিদের শুনানির জন্য ১০/০২/১৯৭৫, ১১/০২/১৯৭৫, ১৩/০২/১৯৭৫ তারিখে দো-তরফা শুনানির পর সরকারের পক্ষে মামলা রায় ডিক্রি হয়। তৎকালীন সরকার ১২০১/- টাকা জরিমানা বাদীর কাছ থেকে আদায় করার আদেশ দেয়। আদালত রায় ডিক্রি প্রদান করেন। উক্ত ১১৯/১৯৭৫ মামলার রায় ডিক্রির বিরুদ্ধে বাদী উচ্চ আদলতে কোনো আপিল করেন নি বিধায় সরকারের পক্ষেই রায় বহাল আছে। পরবর্তীতে একই ব্যক্তি হেমন্দ্র নাথ কর পূর্বে রায় ডিক্রি গোপন করে চাঁদপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বাদী হয়ে ১০৭/৯৬ দেওয়ানী স্বত্ব মোকদ্দমা দায়ের করলে সরকার পক্ষের নিযুক্তীয় কৌঁসুলি পূর্বের কুমিল্লা সাব জজ আদালতে দেওয়ানী ১১৯/৭৫ মামলার রায় ডিক্রি দাখিল করলে দো-তরফা শুনানির পর ১০৭/৯৬ মামলা খারিজ হয়। উক্ত বাদী হেমন্ত্র নাথ সরকারের বিরুদ্ধে আবার চাঁদপুর সিনিয়র জজ আদালতে দেঃ স্বত্ব ২০/২০০৮ মামলা করলে ঐ মামলাও সরকারের পক্ষে মামলার রায় ডিক্রি হয়। বাদীর মামলা খারিজ হয়। তিনটি মামলা করে হারার পর একই ব্যক্তি আবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অর্পিত ট্রাইব্যুনালে বাদী হয়ে অর্পিত মামলা করেন। মামলার নম্বর ১২/২০১২, ১৩/২০১২, ১৪/২০১২, ১৫/২০১২, ১৬/২০১২ ও ১৩৯/২০১২ এই ছয়টি মামলা রুজু করেন। মামলা চলিতাবস্থায় ১২/০৫/১৩ তারিখে শুনানির দিন ধার্য হলে সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক সাহেব বিজ্ঞ কৌঁসুলিকে যাবতীয় পূর্বের রায় ডিক্রি ও আবশ্যকীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি সরকারের পক্ষের জবাবে কোনো পূর্বের রায় ডিক্রি ফিরিস্তি করে আদালতে জমা করেন নি এবং জেরাতে বাদীকে পূর্বে তিনটি রায়ের বিষয়ে কিছুই জেরা করেন নি। ইতিপূর্বে ছয়টি মামলার মধ্যে ১২/২০১২ মামলার রায় হয়েছে। রায় সরকারের বিপক্ষে চলে গেছে। এতে সরকারের ৪/৫ কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বিষয়টি অবগত হয়ে জিপি রুহুল আমিন সরকারকে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখিতভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারি সম্পত্তি রৰায় এ ব্যাপারে মামলার আপিলের জন্য। কিন্তু গত দেড় মাসেও তিনি ১২/২০১২ মামলার ফাইল পর্যন্ত রেডি করেননি বা এ ব্যাপারে তাঁর আন্তরিকতাও দেখা যাচ্ছে না। পরবর্তীতে নিরূপায় হয়ে লীজপ্রাপ্ত ওই পরিবারগুলির পৰে ঢাকা হাইকোর্টে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রীট করা হয়। রীট নং- ১০০৭৩/১৩। মাননীয় হাইকোর্টে উক্ত রীট মঞ্জুর করে চাঁদপুর জজ কোর্টের ১২/১২ মামলার রায় ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। বর্তমানে সরকারের নিকট হতে যেসব লোকজন লিজ নিয়ে দীর্ঘ ৪১ বছর সরকারকে মানি রিসিটের মাধ্যমে ভোগদখল করে আসছে, তারা এখন আতঙ্কিত এবং বাকরুদ্ধ। এখন তাদের মাথার উপর আসমান ভেঙ্গে পড়ার সামিল হয়েছে। তাদের ২০১৩ সালের চৈত্র বাংলা হাল নাগাদ লিজ পরিশোধ আছে। এহেন অবস্থায় সরকারের কৌঁসুলির অবহেলার কারণে সরকারের প্রায় ৪/৫ কোটি টাকার ভূমি হাতছাড়া হওয়ার পথে এবং বাকি পাঁচটি মামলার সম্পত্তি প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বর্তমানে লিজ নেয়া মানুষগুলি বড় অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ভূমি দস্যুদের অব্যাহত হুমকির মুখে লীজ গ্রহীতাগণদের পক্ষে আশিকাটি গ্রামের মৃত কেরামত আলী খানের ছেলে মোঃ বশির খান (৫০) চাঁদপুর মডেল থানায় একই এলাকার রামু করের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন। যার নং- ১৪৫৫।