স্টাফ রিপোর্টার : জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কুমারডুগী গ্রামস্থ খান বাড়ির মৃত মোঃ নুরুল আমিন খানের ছোট ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আঃ আজিজ খান ভুট্টোকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নিলীমা আক্তার রীনা বাদী হয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় গত ১৯ মে ২০২০ ইং তারিখে একই বাড়ির সিরাজ খানের পুত্র সোহাগ খানকে প্রধান আসামী করে আরো ৫ জনকে এজহারভুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১৬।
গত সোমবার (১৮ মে) রাত পৌনে ১১টার দিকে এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে ভুট্টো মারধরের শিকার হন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
তবে স্থানীয়রা বলেছেন, জায়গা-জমি নিয়ে পূর্বশত্রুতা ছিল। ধারনা করা হচ্ছে এর জের ধরেই খুন হয়েছেন। তবে নিহতের বন্ধু শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সামছুজ্জামান পাটওয়ারী বলেন, ভুট্টো পারিবারিকভাবে ৩ সন্তানের জনক।
তার বড় ছেলে চাঁদপুর হাসান আলী হাই স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে, দ্বিতীয় ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র এবং মেয়েটির বয়স মাত্র ৩ বছর। তিনি আরো জানান, সম্পত্তিগতভাবে সোহাগসহ অন্যন্যদের সাথে ৪টি মামলা ছিলো। ৩টি মামলা ভুট্টোর পক্ষে রায় হয়ে আরেকটি মামলা চলমান আছে।ধারনা করা হচ্ছে সম্পত্তিগত বিরোধের জেড় ধরেই এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
এ হত্যা মামলায় এজহার নামীয় ৩জন আসামীকে আটক করেছে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- মনসুর খান (৩৮) পিতা মৃত আ: লতিফ খান, মোস্তফা খান কালু (৪৮) পিতা মৃত: শামছুল হক খান, সুমন খান (৩৪) পিতা হান্নান খান সব সাং কুমারডুগী ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন, চাঁদপুর সদর।আটককৃতদের আদালতে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ।
২০ মে ভোরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাশেদের নেতৃত্বে মডেল থানার একদল পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করতে সক্ষম হয়।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাশেদ বুধবার সকালে জানান, এ মামলায় এজহারনামীয় ৩জন আসামীকে আটক করেছি।
তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং রিমান্ড চাওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত সম্পতিগত বিরোধই এ হত্যাকান্ডের কারণ দেখা যাচ্ছে।তারপরও আসামীদের রিমান্ডে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। সেই সাথে প্রধান আসামী সোহাগ খানকে যে কোন মুহুর্তে গ্রেফতার করা হবে।
মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই কি কারণে ভুট্টো খানকে হত্যা করা হয়েছে তার মোটিভ বের করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান এর নির্দেশে মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে পুলিশ। সেই সাথে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি নাসিম উদ্দিন মামলাটি মনিটরিং করছেন সার্বক্ষণিকভাবে।
এদিকে আঃ আজিজ খান ভুট্টোর বন্ধু শামছুজ্জামান পাটওয়ারী জানিয়েছেন, গত সোমবার (১৮ মে) রাত পৌনে ১১টায় বাকিলা বাজার থেকে সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছিলেন ভুট্টো। বাড়ির কাছাকাছি আসার পর একই বাড়ির কিছু লোক ভুট্টোর উপর হামলা করে। তাকে মারধর করে এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করলে তার ডাক চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হত্যাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে মামলার প্রধান আসামী এসময় একই বাড়ির সিরাজ খানের পুত্র
খানকে ছুরি চালাতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন। খুনিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও ৪টি মোবাইল ফোন, রড, ছুরি ও ৫ জোড়া জুতা ভুলে রেখে যান। তবে গুরুতর আহত ভুট্টোকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। স্থানীয়রা বলেন, ‘জায়গা-জমি নিয়ে প্রতিবেশিদের সঙ্গে ভুট্টো খানের বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জের ধরেই তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।’