চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান খান ভুট্টো হত্যা মামলার গ্রেফতার হওয়া ৩ আসামীর ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ভার্চুয়াল আদালত। আসামীরা হলেন- মো. মুনসুর খান (৩৫), মোস্তফা খান কালু (৪৯) ও মো. সুমন খান (৩৫)।
মঙ্গলবার (২ জুন) সকালে চাঁদপুর সিনিয়র চীফ জুডিসিয়্যাল মেজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. কামাল হোসেন ৩ দিনের এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদ জানান, তিনি ভুট্টো হত্যা মামলার এজহার নামীয় গ্রেফতার হওয়া ৩ আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জন্য ৭দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। ভার্চুয়াল আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
জানাগেছে, গত ১৮ মে রাতে কুমারডুগি নিজ বাড়ীতে যাওয়ার পথে আজিজুর রহমান ভুট্টোকে পথিমধ্যে দূর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় পরদিন ১৯ মে ভুট্টোর স্ত্রী চাঁদপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
এদিকে এই মামলায় এজহার নামীয় আসামীদের মধ্যে মো. মুনসুর খান মোস্তফা খান কালু ও মো. সুমন খানকে গত ২০ মে ভোরে চাঁদপুর মডেল থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে। পরে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। মামলা নং-১৬/২০ এবং ভার্চুয়াল মামলা নং-২৬৮/২০।
বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর ও অ্যাডভোকেট ইয়াছিন আরাফাত ইকরাম। আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আবদুল আজিজ।
জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আলোচিত কুমারডুগী নিবাসী আজিজুর রহমান খান ভুট্টো হত্যা ঘটনাটি এখনো কোন কূলকিনারা হচ্ছে না !ঘটনা ধামাচাপা দিতে আসামী পক্ষ তৎপর হয়ে উঠেছে । এমন অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী ।
ঘটনার ১৩দিন অতিবাহিত হলেও এখনো হত্যার রহস্য উৎঘাটন করা সম্ভব হয়নি । এখনও মামলার প্রধান আসামী কিলার সোহাগ খানকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হননি পুলিশ । ফলে এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ।
হত্যার ঘটনাটি কি জমি সংক্রান্ত বিরোধ নাকি অন্য কিছু । এখনো রহস্যময় রয়েছে হত্যার ঘটনাটি ।আলোচিত এই হত্যাকান্ডে অত্র ইউনিয়নের অনেকেই জড়িত থাকতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে । বিশেষ করে এজহারের বাইরেও এই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারে এমন আশংকা করছে এলাকাবাসী । এ নিয়ে ইউনিয়নে নানাজন জড়িত রয়েছে বলেও বলাবলি হচ্ছে । যদিও কোনটিই তথ্য নিভর নয় ।
এদিকে জানা গেছে, কুমারডুগীর আজিজুর রহমান খান ভুট্টো হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী সহসাই সাংবাদিক সম্মেলন ও মানবন্ধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে । সহসাই এলাকাবাসী হয় এলাকায় ,নচেৎ চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন করবে বলে জানা গেছে । ভুট্টো হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে এলাকাবাসী একত্রিত হচ্ছে এবং ব্যাপক জনমত তৈরী হয়েছে ।
অপরদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তদন্তকারী কমকতা এস আই রাশেদুজ্জামান জানান এ মামলায় এজহারভুক্ত আসামীরা ছাড়াও আরো ৮/১০ এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারে । তাদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে ।তাদের গ্রেফতারেও চেষ্টা চলছে । যদিও এ মামলার প্রধান আসামী সোহাগ খানকে পুলিশ এখনোও গ্রেফতার করতে করতে পারিনি । তবে তাকে গ্রেফতার করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ । তবে জমি সংক্রান্ত বিরোধেই এই হত্যাকান্ড এমন তথ্যের ভিত্তি নিয়েই তদন্ত করছে পুলিশ ।
জানা গেছে, গত ২০ মে আজিজুর রহমান খান ভুট্টো হত্যা মামলায় এজহার নামীয় ওই ৩জন আসামীকে কুমারডুগী এলাকা থেকে আটক করেছে মডেল থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ । আটককৃত আসামীরা হলেন মনসুর খান (৩৮) পিতামৃত আ:লতিফ খান,মোস্তফা খান কালু (৪৮) পিতামৃত : শামছুল হক খান , সুমন খান (৩৪) পিতা হান্নান খান সব সাং কুমারডুগী ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন চাঁদপুর সদর । ওইদিন ভোরে মামলার তদন্তকারী কমকতা এসআই রাশেদের নেতৃত্বে মডেল থানার একদল পুলিশ ও ডিবির একদল পুলিশ যৌভাবে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করতে সক্ষম হয় ।
মামলায় প্রধান আসামী সোহাগ খান পিতা: সিরাজ খানসহ ৫জনকে এজহারভুক্ত করা হয়েছে ।অজ্বাত আরো আসামী রয়েছে । মামলার বাদী হলেন নিহত আজিজুর রহমান খান ভুট্টোর স্ত্রী নিলীমা আক্তার রীনা । মামলা নং ১৬ তাং ১৯.৫.২০২০ ধারা ৩০২.৩৪ দ:বি: ।
জানা গেছে,পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান এর নিদেশে মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে পুলিশ । সেই সাথে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি নাসিম উদ্দিন মামলাটি মনিটরিং করছেন সাবক্ষনিকভাবে ।
জানা গেছে,গত সোমবার (১৮ মে ) রাত পৌনে ১১টায় বাড়ীতে যাওয়ার পথে ১০-১২ জনের একদল দুর্বৃত্ত ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান খান ভুট্টোর উপর হামলা চালিয়ে গলায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে।
পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভুট্টোকে মৃত ঘোষনা করেন। মঙ্গলবার (১৯ মে) পৌনে ৪টায় ভুট্টোর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে ভুট্টোর প্রথম ও দ্বিতীয় জানাযা সম্পন্ন করে মরহুমের নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে কারা তার উপর হামলা করলো এবং কি কারণে করলো তা উৎঘাটনে চাঁদপুর জেলা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা সংস্থা কাজ শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, আজিজুর রহমান খান ভুট্টো রাত পৌনে ১১টার সময় বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির কাছেই ওঁত পেতে থাকা কয়েকজন যুবক ভুট্টোর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তার ডাক চিৎকারে স্থানীয় আজমির, অপি, ঝিকু ও মাইনুদ্দিন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখেন ভুট্টোর চাচা সিরাজ খানের পুত্র সোহাগ খান ভুট্টোর গলায় ছুরি চালাচ্ছে। তাদের দেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন সোহাগসহ ওই সংঘবদ্ধ দলের সদস্যরা। কিন্তু খুনিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও তাদের রেখে যাওয়া ৪টি মোবাইল ফোন, রড, ছুরি ও ৫ জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়।
সামছুজ্জামান পাটওয়ারী আরো জানান, ভুট্টো পারিবারিকভাবে ৩ সন্তানের জনক। তার বড় ছেলে চাঁদপুর হাসান আলী হাই স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে, দ্বিতীয় ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র এবং মেয়েটির বয়স মাত্র ৩ বছর। তিনি আরো জানান, সম্পত্তিগতভাবে সোহাগসহ অন্যন্যদের সাথে ৪টি মামলা ছিলো। ৩টি মামলা ভুট্টোর পক্ষে রায় হয়ে আরেকটি মামলা চলমান আছে। ধারনা করা হচ্ছে সম্পত্তিগত বিরোধের জেড় ধরেই এ ঘটনা ঘটাতে পারে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান খান ভুট্টো কুমারডুগীস্থ এলাকায় সারের ব্যবসা করতো। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন।