চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। গত ১৫ নভেম্বর শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিএনজি স্কুটার ও বোগদাদ ট্রান্সপোর্টের যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনাস্থলেই এক কিশোরী মারা যায়। আহত হয় আরো ৫ জন।
জানা যায়, হাজিগঞ্জ থেকে মাহা পরিবহনের (চাঁদপুর-থ-১১-১৬৯৬) সিএনজি স্কুটারটি ৫ জন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে আসলে বেপরোয়া গতির সিএনজি স্কুটারটি অপর দু’টি সিএনজি স্কুটারকে ওভারটেক করে নিজের সাইড পরিবর্তন করে যাওয়ার সময় চাঁদপুর থেকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বোগদাদ ট্রান্সপোর্টের যাত্রীবাহী বাসের (কুমিল্লা-ব-১১-০১৩৫) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি স্কুটারটি দুমড়ে-মুচড়ে একাকার হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই জান্নাতুল ফেরদৌস সানজিদা (১৪) নামের এক কিশোরীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সাথে সাথেই স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে রাস্তার উপর বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে। বোগদাদ ট্রান্সপোর্টের বাসটি দুর্ঘটনার পর দ্রুত চালিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজিত জনতা তা ভাংচুর করে। পরবর্তিতে মহামায়া বাজারে বাসটিকে আটক করে। এতে
চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট ==
আহত হয় মৃত সানজিদার মা শাহিদা বেগম (৩০), ছোট বোন ফাতেমা আক্তার ঝুমুর (৬)। এদের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার কামতা ইউনিয়নের বড়গাঁও হাজ্বী বাড়ি(মিয়া বাড়ি)।
অপর আরো দু’জন আহত হলেন, হাজিগঞ্জ উপজেলা বলাখাল-রামপুরের লিমন কৃষ্ণ দাস (৩৫), রামগঞ্জ কাঞ্চনপুরের মোঃ লিটন (৩৫)। গুরুতর আহত শাহিদা বেগমের জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি জানান, তার গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জের কামতা বড়গাঁও। তারা কামতা থেকে বলাখাল এসে সিএনজি স্কুটারে উঠে চাঁদপুরে এসে ডাক্তার দেখানোর জন্য। গত সপ্তাহে ডাঃ শাহাদাত হেসাইনের কাছে এসে চিকিৎসা নিয়েছিল। ঘটনার দিন পুনরায় ডাক্তারকে দেখানোর জন্যই চাঁদপুরে আসছিল। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় তাদের এই অবস্থা হয়েছে। দুপুর ১টায় গুরুতর আহত শাহিদা বেগম ও তার শিশু কন্যা ঝুমুরকে মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, নিহত জান্নাতুল ফেরদৌস সানজিদা গতবছর জে.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে এপ্লাস পেয়েছে। তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন একটি দুর্ঘটনাই চিরতরে ম্লান করে দিল। এদিকে আহত লিমন কৃষ্ণ দাস জানান, তাদের বহনকৃত সিএনজি স্কুটারটি বেপরোয়া গতিতে চলছিলো। চালককে বারংবার সাবধান করা হয়েছিল যেন ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে। কিন্তু চালক কোন কথা না শুনেই তার খামখেয়ালী মত গাড়ি চালিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এদিকে উত্তেজিত জনতা দুর্ঘটনার পরপর রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করে রাখলে রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক আহমেদ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। দীর্ঘ সময় চেষ্টা করে অবরোধকারীদের শান্ত করে সকাল সাড়ে ১১টায় অবরোধ তুলে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নিহত সানজিদার পিতা মোঃ সফিকুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ফাতেমা আক্তার ঝুমুরের মাথায় প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং মাথার পেছনের একটি সুক্ষ হাড় ভেঙ্গে গেছে। শনিবার সকালে তাঁর মাথায় অস্ত্রপচার করা হয়েছে। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। ঝুমুরের মা সাহিদা বেগমের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তার চোখের আঘাতজনিত স্থান দিয়ে এখনো রক্তঝড়ছে। মা ও মেয়ে দু’জনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
0 0 0 0