হাসানুজ্জামান,শাহরাস্তি থেকেঃ-
একটি মাত্র পুত্র সন্তানের জন্য ৪ টি কন্যা সন্তানের পিতা হয়েছেন মোঃ মোস্তফা মিয়া (৭০)। কন্যা দায়গ্রস্থতা নিয়ে কাটছে নিদারুন এক অসহায় জীবন। ফসলের মাঠে শ্রমিকের কাজ করে কন্যাদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। এদের মধ্যে একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী। পুত্রহীন এই পরিবারের সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করেছে একটি পক্ষ। এতে বাধা দিলে দলবল নিয়ে ওই পরিবারের কন্যাদের উপর চালায় নির্মম নির্যাতন। এতে ৫ জন গুরুতর আহত হয়। এরা হলেন, মৃত-আঃ ছামাদ মোল্লার পুত্র মোঃ মোস্তফা মিয়া(৭০), তার স্ত্রী খায়রুন নেছা (৬০), প্রতিবন্ধী কন্যা জান্নাতুল মাওয়া (২৫), ঝর্ণা আক্তার (২২), হনুফা আক্তার (১৮)। ঘটনাটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারী সোমবার সকালে চাঁদপুরের শাহ্রাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের পাঁচরুখি মোল্লা বাড়িতে ঘটে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায় , ওই দিন শাহ্রাস্তি পৌরসভা নির্বাচন চলছিলো । সম্পত্তিগত বিরোধ থাকায় এবং সবাই যখন নির্বাচন কাজে ব্যস্থ তখনই প্রতিপক্ষ একই বাড়ির মৃত-মৌলভী মোঃ ইয়াছিনের পুত্র মাওলানা আ হ ম শামছুল হুদা (৪৫) মোঃ মোস্তফা মিয়ার ঘরের সামনের জায়গা জবর দখল করে দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে মোস্তফা পরিবার বাধা দিলে ঘটে এই আহত হওয়ার ঘটনা।
এ ব্যাপারে মোঃ মোস্তফা মিয়া বলেন, আমার পুত্র সন্তান না থাকায় এবং ৪ টি কন্যা সন্তান নিয়ে এই বৃদ্ধ বয়সে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। নিজ জায়গার সাথে ওয়ারিশ থেকে সাব-কবলা মূলে চৌহদ্দীসহ খরিদা জায়গায় বাড়ি তৈরী করে সন্তানদের থাকা- খাওয়াসহ লেখা-পড়ার কোন রকম ব্যবস্থা করেছি। কিছুদিন পূর্বে হঠাৎ মাওলানা শামছুল হুদা ওই জায়গা তার খরিদা সম্পত্তি বলে আপত্তি তোলে। সে সুবাদে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কাগজপত্রের আলোকে উক্ত সম্পত্তি আমার বলে সিদ্ধান্ত দেন উপস্থিত গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। কিন্তুু শামছুল হুদা আমার প্রতিপক্ষ হয়ে ঘটনার দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা চালিয়ে আমাকেসহ আমার স্ত্রী, বিবাহযোগ্য কণ্যাদের বেদম প্রহার ও শারিরীক নির্যাতন করে। এমনকি আমার শারিরীক প্রতিবন্ধী কণ্যাটিও রেহাই পায়নি তাদের নির্যাতনের হাত থেকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, শামছুল হুদা আগ থেকেই সব প্রস্তুত করে রেখেছিলেন ওই জায়গা দখল নেয়ার জন্য। যে কারণে পৌর নির্বাচনের দিনটিকে বেছে নেন তিনি। ওই দিন ৪০/৫০ জনের একটি দল এসে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমরা আহত হয়ে হাসপাতালে গেলে ওই সুযোগে আমার ঘরের সামনে দেয়াল নির্মাণ করেন। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করলে ওসি সাহেব ওই মামলা কোর্টে প্রেরণ করেন। তাদের দেশীয় অস্ত্রের এলোপাতাড়ি আঘাতে আমরা রক্তাক্ত হয়েছি। আমার কণ্যাদের গায়ের জামা কাপড় ছিঁড়েছে-খুলেছে-নির্যাতন করেছে তারা। কোথায় পাবো এর বিচার, কার কাছে পাবো এই বিচার ? আমি হলফ করে বলছি আমার এই সম্পত্তি কাগজে কলমে যদি না পাই তাহলে আমার কোনো দুঃখ থাকবে না, এমনকি কোথাও বিচার চাইবো না। কিন্তু যে কারণে-যার কারণে আমার বিবাহযোগ্য কণ্যারা এ ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে-কে করবে তার বিচার-এমন কথা বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এ ব্যাপারে আহত জান্নাতুল মাওয়া বলেন, আমি শারিরীক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্বেও ডিগ্রি পাশ করে এখনো নিজের শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাচ্ছি। সাধারণ ১০ জনের মতোই জীবন-যাপন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের নিজ বাড়ির আপনজন দ্বারাই আমরা নির্যাতিত হচ্ছি। দেশ ও দশের কাছে যদি এর বিচার না পাই তাহলে এদেশে জন্ম আর এ সমাজে বসবাস এ দু’টোই অপ্রযোজ্য। এ দেশের নাগরিক হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের কোথাও আমাদের আশ্রয় নেই, নেই কোনো সুষ্ঠ বিচার। তাহলে আমরা কোথায় যাবো ? কার কাছে যাব? কে করবে এমন বর্বরোচিত হামলার বিচার। আমরা শান্তি চাই, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাই, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে সহযোগিতা চাই। আমাদের অপরাধ হলে আমাদেরও বিচার হউক-তবুও বিদ্বেষ না করে শান্তি ফিরে আসুক। মাওঃ আ হ ম শামছুল হুদা বলেন, দীর্ঘদিন তাদের সাথে আমাদের সম্পত্তিগত বিরোধ চলছে। এ ব্যাপারে যত বার স্থানীয় শালিস হয়েছে-শালিসদারদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেছে তারা। যে কারণে এখনও ওই বিরোধ বিদ্যমান রয়েছে। সর্বশেষ ঘটনায় আমি ছিলাম না। আমার লোকজন তাদের গায়ে হাত দেয়নি।
শাহ্রাস্তি মডেল থানায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো ১৮ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার সকালে সার্ভেয়ার দ্বারা জায়গা মাপ-ঝোপের মাধ্যমে উভয়কে বুঝিয়ে দেয়া হবে। অথচ ১৫ ফেব্রুয়ারী সোমবার শাহ্রাস্তি পৌর নির্বাচনে যখন সকল প্রশাসন , রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিক মহল ব্যস্থ তখনই কেন আপনি জায়গা দখল করতে গেলেন, এমন প্রশ্নের আলোকে নীরবতা পালন করেন এবং এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এটিই আমার ভুল হয়েছিলো। বর্তমানে এ ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে দু’টি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানা যায়, ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বড় কন্যা রহিমা আক্তার গত ১৮ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার শাহ্রাস্তি মডেল থানায় একটি অভিযোগ করলে অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে তা পেনাল কোর্টে রুজু করেন। যার শাহ্রাস্তি মডেল থানা মামলা নং -১১, ধারা-১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩৫৪/৩৭৯/৩৮০/৪২৭ ও ৫০৬।
অন্যদিকে আ হ ম শামছুল হুদার ভাতিজা আদালতে একটি পাল্টা মামলা দায়ের করেন একই বাড়ির আবু তৈয়বের পুত্র মাসুদ।
এলাকাবাসী বলেন,যেহেতু উভয় পক্ষের বিবাদমান ঘটনাটি থানা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় নিষ্পত্তির জন্য একটি দিন তারিখ ধায্য করা হয়েছিল। ওই দিন তারিখের অপেক্ষা না করে মাওলানা সাহেব কন্টকযুক্ত জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে যে ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন-তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও বর্বরচিত। তিনি তার নিজ জায়গা দখলের জন্য এতো ঘনঘটার প্রয়োজন ছিলনা এবং নির্বাচনের দিন যখন সবাই ব্যস্থ তখনই তিনি তার লোকবল দিয়ে এমন ঘটনাটি ঘটান। যা নিতান্তই দুঃখজনক বলে তারা মনে করেন।