স্টাফ রিপোর্টার:
শাহরাস্তিতে চাচী ও চাচীর পরকীয়া প্রেমিক কর্তৃক এক নারীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় পরকীয়া প্রেমিক ও চাচীকে বিবাদী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় পুলিশ ঘাতক চাচীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহতের পরিবার কর্তৃক থানায় দেয়া অভিযোগ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শাহরাস্তি পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডস্থ পূর্ব উপলতা গ্রামের বেপারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পূর্ব উপলতা বেপারী বাড়ির রিক্সা মেকানিক আনা মিয়ার কন্যা রুমা আক্তার (২২) দু বছর যাবৎ তার চাচা হুমায়ন কবিরের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস মায়ার (৩৩) ঘরে বসবাস করে আসছিল। ২ বছর পূর্বে চাচী জান্নাতুল ফেরদাউস মায়ার স্বামী পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন কবির মারা যাওয়ার পর থেকে পশ্চিম উপলতা বেপারী বাড়ির তাজুল ইসলামের পুত্র মোঃ জহির (৩০)-এর সাথে জান্নাতুল ফেরদাউস মায়ার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে শারীরিক সম্পর্ক চলে আসছিল। রুমা আক্তার চাচী ও জহিরের দৈহিক সম্পর্কের ঘটনা প্রত্যহ দেখতে পায়। রুমা তার চাচীকে এ বিষয়ে বেশ ক’ বার বারণ করে এবং বাধা প্রদান করে। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টায় পরকীয়া প্রেমিক জহির ও জান্নাতুল ফেরদাউস মায়া রাতের কোনো এক সময়ে রুমা আক্তারকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের একটি কক্ষে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। এক পর্যায়ে জান্নাতুল ফেরদাউস ও জহির মিলে ফ্যান থেকে তার লাশ সরিয়ে এনে খাটের মধ্যে শোয়ায়ে রাখে। পরে জান্নাতুল ফেরদাউস মায়া রুমাদের ঘরে গিয়ে তার বাবা আনা মিয়া ও মা রেনু বেগমকে রুমা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানায় এবং তার ঘরে আসতে বলে। আনা মিয়া ও রেনু বেগম মেয়ে রুমা আক্তারের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এ সময় চাচী মায়া বেগম ও পরকীয়া প্রেমিক জহির মিলে তড়িঘড়ি করে রুমার লাশ দাফনের প্রস্তুতি শুরু করে। ৩০ মিনিটের মধ্যে কবর খোঁড়া, দাফনের কাপড় সংগ্রহ করে। রুমার লাশ গোসল করানোর দায়িত্ব প্রাপ্ত নারী রুমার গলায় হাতের চাপ ও ফাঁস লাগানোর চিহ্ন দেখতে পেয়ে উপস্থিত নারীদেরকে অবহিত করলে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে সকলে ধারণা করেন। এরপর শাহরাস্তি মডেল থানা পুলিশকে খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে চাঁদপুরে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করে ও ঘাতক চাচী জান্নাতুল ফেরদাউস মায়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। জান্নাতুল ফেরদাউস মায়া ২ সন্তানের জননী। মায়া নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার কলেজ রোড চেয়ারম্যান বাড়ির আব্দুর রবের কন্যা।
এ ঘটনায় নিহত রুমা আক্তারের পিতা আনা মিয়া বাদী হয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় চাচী জান্নাতুল ফেরদাউস ও পরকীয়া প্রেমিক জহিরকে বিবাদী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৫, তাং-২৪/০৩/২০১৬ খ্রিঃ।
এ বিষয়ে শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোঃ দিলদার আজাদ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পরকীয়া প্রেমিক জহির ও জান্নাতুল ফেরদাউস মায়া রুমা আক্তারকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তার চাচী জান্নাতুল ফেরদাউসকে আটক করা হয়েছে ও লাশ ময়না তদন্তের জন্যে চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও জহিরকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
ঘাতক চাচী জান্নাতুল ফেরদাউস জানান, জহির ইলেক্ট্রিক কাজের সুবাদে দীর্ঘ এক বছর যাবৎ আমার বাসায় আসা যাওয়া করতো। সে সুবাদে তার সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি রুমার নজরে পড়লে রুমা আমাকে ও জহিরকে বিয়ে করে ফেলার পরামর্শ দেয়। আমি তার পরামর্শটি মাথায় নেইনি। বাল্যকাল থেকেই রুমা আমার বাসায় বসবাস করতো এবং আমাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতো। রুমা হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ঘটনার পর থেকে চাচীর পরকীয়া প্রেমিক ঘাতক জহির পলাতক রয়েছে। এছাড়াও তার মুঠোফোন ০১৭৪১৭৮৭৩৪১ বন্ধ পাওয়া যায়।