-শাহরাস্তিতে ঘটেছে দূর্ধর্ষ চুরির ঘটনা। বাড়ছে সিঁদেল চুরি। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ গুলো। গত কয়েক দিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি বাড়িতে এ ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সুচিপাড়া দক্ষিন ইউনিয়নের দশনাপাড়া গ্রামের ফরাজি বাড়িতে ঘটে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা। উক্ত ঘটনায় চোরের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ওই বাড়ির ২ ব্যাক্তি আহত হয়েছে। এছাড়া পৌরসভার সাহাপুর কাজি বাড়ি, মেহের উত্তর ইউনিয়নের কাকৈরতলা ও তারাপুর গ্রাম এবং রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের আনন্দপুর হায়দার আলি মুন্সী বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, দশনাপাড়া গ্রামের ফরাজি বাড়ির মৃত জিতু মিয়ার পুত্র ইউনুস ও ইসমাইলের দু’টি বসত ঘরে চোরের দল প্রথমে সিঁদ কেটে প্রবেশ করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং জরুরী কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। এ সময় বাড়ির লোকজন তাদের বাধা দিতে গেলে চোরদের হামলায় ইসমাইল ও সুমন গুরুতর আহত হয়।
এ ব্যাপারে গৃহকর্তা আহত ইসমাইল বলেন, তারা প্রথমে আমাদের বাড়ির পশ্চিম ঘরের পূর্ব দরজার পাশে সিঁদ কেটে ভিতরে প্রবেশ করে আমার মা শহিদা বেগম, স্ত্রী আয়েশা বেগম, ছোট ভাই সুমন ও আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে প্রত্যেকের গলায় ধারালো দা-ছুরি ধরে রাখে। বাকিরা ঘরে থাকা প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ৩ টি মোবাইল সেট নিয়ে নেয়। পরে ২ ব্যক্তি আমার মা’কে গলায় ও পিঠে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে বড় ভাই ইউনুসের ঘরের সামনে নিয়ে যায়। যাওয়ার পূর্বে তারা মা’কে শিখিয়ে দেয়- “তুই তোর ছেলেকে ডেকে তুলবি, কোন ডাক-চিৎকার করবি না- বাকি কাজ আমাদের”। মা-ভাইকে ডাকলে সে দরজা খুলতেই তারা ভাইকে বেঁধে গলায় ছুরি ধরে ভিতরে প্রবেশ করে। অপর ব্যাক্তি ভাবিকে বটি দা দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখিয়ে আলমিরার চাবি নিয়ে তাতে রক্ষিত ১ লক্ষ টাকা বের করে নেয়। এ সময় তাদের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে চোরদের সাথে থাকা দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আমি ও আমার ভাই সুমন আহত হই। সে আরও জানায়, ঘটনার সময় ঘরের ভেতর ৬ জন উপস্থিত থাকলেও বাইরে কতজন ছিল তা আমার জানা নেই। তবে প্রত্যেকে খালি গা ও আন্ডারওয়্যার পরিহিত অবস্থায় তাদের হাতে দা, বটি, ধামা, ছুরিসহ লোহার রড ছিল। তাদের অস্ত্রের মুখে আমরা বড়ই অসহায় ছিলাম। এর ১০/১৫ মিনিট পর টহল পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ লিখে নেয় বলে তিনি জানান।
এছাড়া গত ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পৌরসভার সাহাপুর কাজি বাড়ির আইয়ুব আলীর পুত্র সেলিমের ঘরে সিঁদেল চুরির ঘটনা ঘটে। এতে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ১৭ হাজার টাকাসহ ৩ টি মোবাইল সেট চুরি হয়।
অন্যদিকে একই দিন গভীর রাতে মেহের উত্তর ইউনিয়নের কাকৈরতলা ও তারাপুর গ্রামের ৩ বাড়ি’র ৪টি ঘরে সিঁদেল চুরির ঘটনা ঘটে। এতে কাকৈরতলা গ্রামের মজুমদার বাড়ির মৃত আলতাফ আলীর পুত্র মুকবুল মাষ্টারের ও একই বাড়ির ইসহাক মুন্সির ঘরে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই গ্রামের হাজী বাড়ির অহিদুর রহমানের স্ত্রী সুরাইয়া বেগমের ঘরের দরজা কৌশলে খুলে চুরি সংঘটিত হয়। তারাপুর মিয়াজি বাড়ির ইউসুফ মিয়ার পুত্র ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিলের ঘরে সিঁদ কাটার ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের আনন্দপুর হায়দার আলি মুন্সী বাড়ির মৃত আবদুর রহমান মাষ্টারের পুত্র আনিসুর রহমানের ঘরে সিঁদ কেটে আড়াই ভরি স্বর্ণ ও নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে মেহের উত্তর ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ইদানিং গ্রামাঞ্চলে সিঁদেল ও ছেঁচড়া চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার বখাটে, মাদকাসক্ত ব্যাক্তিরাই এ ধরনের চুরির সাথে জড়িত রয়েছে বলে তিনি ধারণা করেন।
মেহের উত্তর ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা জিয়াউল কবির দুলাল বলেন, বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক মন্দাভাব না থাকলেও এই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারনে প্রায় রাতেই কোনো না কোনো বাড়িতে ঘটছে সিঁদেল চুরির ঘটনা। মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের প্রতিরোধ করে এ ধরনের ঘটনা রোধ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমানের বক্তব্য জানতে বেশ ক’বার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন তোলেন নি।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।