শাহরাস্তি প্রতিনিধি ॥ চাঁদপুরের শাহরস্তিতে প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে গ্রামীণ কো-অপারেটিভ এম.এস লিঃ নামে এক সংস্থার বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহক ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে দৈনিক আদায়ের ভিত্তিতে ১০ বৎসর পূর্বে গ্রামীণ কো-অপারেটিভ শাহরাস্তি উপজেলা সদরের উত্তর পার্শ্বে ফারুক মিয়াজীর বিল্ডিংয়ে ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। ঝুলানো সাইবোর্ডে লেখা রয়েছে, বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সমবায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান – যার রেজিঃ নং-৫৯৩। পরবর্তীতে সঞ্চয় জমা ও এফডিআর নেওয়া শুরু করে। সঞ্চয় জমা হিসেবে প্রতিদিন ২ শত টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রাহক প্রতি আদায় করতেন। গ্রাহকদের কাছ গ্রাহক প্রতি থেকে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এফডিআর হিসেবে সংগ্রহ করে। প্রতি লক্ষ টাকায় এফডিআরের লভ্যাংশ হিসেবে ১৮ শত টাকা হারে প্রদান করে গ্রাহকদের প্রলোভন দেখিয়েছিল সংস্থাটি। এছাড়া সঞ্চয় জমা বাবদ অধিক লভ্যাংশ ও দ্রুত ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শত শত গ্রাহককে আকৃষ্ট করে গ্রাহকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
গত ২৫ অক্টোবর দুর্গা পূজার বন্ধের নাম করে সংস্থাটির কালীবাড়ী শাখা অফিসটির লোকজন উধাও হয়ে যায়। এ ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক হযরত আলী মোল্লা অক্টোবর মাসে ২ দিন সীমিত সময়ে অফিস করেছেন। এছাড়া শাখাটির হিসাব রক্ষক ফারুক হোসেন, ফিল্ড অফিসার বজলুর রহমান সহ অপরাপর ৭ জন কর্মচারী অফিসে তালা ঝুলিয়ে উধাও হয়ে যায়। পরদিন থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত গ্রাহক অফিসে তালা ঝুলানো দেখে আহাজারী করতে দেখা গেছে। লক্ষ লক্ষ টাকা এফডিআর ও সঞ্চয় হিসাবে রাখা গ্রাহকরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং কয়েকজনকে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
শাখা ভবনের মালিক মোঃ ফারুক হোসেন মিয়াজী জানান, মাসিক ৩ হাজার টাকায় ঘরটি ভাড়া নেয়। দুর্গা পূজার বন্ধের পর থেকে তারা অফিসটি আর খোলেনি। প্রতিদিন লোকজন এসে এ কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছে।
ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাকদের মধ্যে শাহরাস্তি পৌরসভার মেহের কালীবাড়ী বাজারের মাতা-পিতা কোকারিজের মালিক মিজানুর রহমানের দেড় লক্ষ টাকা, কবিরুল ইসলামের ২ লক্ষ টাকা, শাহরাস্তি কোকারিজ মালিকের ২ লক্ষ টাকা, লক্ষী রানীর ২ লক্ষ টাকা, শাহাদাত স্টোরের মালিক ইউনুস মিয়ার ৬০ হাজার টাকা, মিলনী রানীর ৪০ হাজার টাকা, আমিন স্টোরের মালিক কামরুল হাসানের ২৬ হাজার টাকা, কামরুজ্জামানের ১৭ হাজার টাকা, ইউসুফ মিয়ার ৭ হাজার টাকা, সূচীপাড়া বাজারের জসিম উদ্দিনের ১ লক্ষ টাকা, শহীদুল ইসলামের ৬০ হাজার টাকা, সূচীপাড়ার নোয়াপাড়া সর্দার বাড়ীর নূরজাহান বেগমের ৩ লক্ষ টাকা, রোকেয়া বেগমের ১ লক্ষ টাকা এফডিআর/সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখেন।
এছাড়াও ওই শাখা অফিসটির সামনে এসে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী, সাধারণ গ্রাহক তাদের জমাকৃত লক্ষ লক্ষ টাকার এফডিআর ও সঞ্চয় হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য যে, অত্র শাহরাস্তি উপজেলার শাখা ব্যবস্থাপক হযরত আলী মোলার বাড়ী কচুয়া উপজেলার বিতারা (বিতারা বাজার) অভয়পাড়া মোল্লা বাড়ী। এ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় কচুয়া উপজেলার বিতারা বাজারে অবস্থিত ছিল। খবর নিয়ে জানা যায়, সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় সহ বিভিন্ন উপজেলার শাখা কার্যালয়গুলো ইতিমধ্যে কার্যক্রম বন্ধ করে উধাও হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে এলাকার সচেতন মহলের লোকজন জানান, উপজেলার সমবায় কার্যালয় থেকে নতুন নতুন নামে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে একশ্রেণির অসাধু সংঘবদ্ধ চক্র সমবায়ের নাম করে সমিতি চালু করে। এ উপজেলা থেকে এ পর্যন্ত ১০ টি মাল্টিপারপাস সংস্থা গ্রাহকদের এফডিআর ও সঞ্চয়ের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।
জানা যায়, এ সংস্থাগুলোকে সমবায় অধিদপ্তর হতে অধিক মুনাফার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সমবায় কর্তৃপক্ষ অডিটের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা উৎকোচ আদায় করে সমিতিগুলোকে বৈধ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাদের কার্যক্রম বহাল রাখে। এভাবে কয়েক মাস বা কয়েক বছর পার হলে কোটি কোটি টাকা সঞ্চয় ও এফডিআার নিয়ে সংস্থা গুলো কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বা উধাও হতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, জমি-জমা বিক্রি করে ও বিভিন্ন জন থেকে ধার নিয়ে সংস্থাটিতে টাকা জমা রেখেছি। অধিক মুনাফার প্রলোভনে মাসিক হারে কিছু টাকা পাওয়ার আশায়, আজ আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে, আমরা শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে আজ পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
এ বিষয়ে শাখা ব্যবস্থাপক হযরত আলী মোল্লার মুঠোফোন (০১৭১৫-৫০৩৪০৯) নাম্বারে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সামিউল মাসুদের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের সঠিক ঠিকানা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শাহরাস্তি মডেল থানা সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।