প্রতিনিধি
বিধবার সম্ভ্রমহানীর অভিযোগে এক ইউপি সদস্যকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল ২০ এপ্রিল রোববার সকালে ওই ইউপি সদস্যকে থানা পুলিশ কোর্ট হাজতে প্রেরণ করে। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের হাটপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার নং-১১, তাং-১৯/০৪/২০১৪ইং।
বিধবার অভিযোগ, থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রামের মসজিদ বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হোসেনের বিধবা স্ত্রী মঞ্জুমা বেগমের (৩৮) সাথে ওই ইউনিয়নের ৩ বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য একই গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির মৃত আঃ রহমানের পুত্র মোঃ মোবারক হোসেনের (৪৫) দীর্ঘদিন সম্পর্ক চলে আসছিলো। বিধবা মঞ্জুমার পরিবারে স্বামীর অবর্তমানে কোন অভিভাবক না থাকায় সে তার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মোবারক হোসেনের দ্বারস্থ হয়। বিধবার একাকিত্বের সুযোগে মোবারক তার সাথে গোপন সখ্যতা গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে তাদের গোপন সখ্যতার বিষয়টি স্থানীয় এলাকাবাসীর নজরে আসলে এ নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তাদের ঘনিষ্ঠতার বিষয় সম্পর্কে মঞ্জুমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বের হয়ে আসে ইউপি সদস্যের গোপন অভিসারের চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিধবার তথ্যানুযায়ি স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ওই ঘটনায় মঞ্জুমা বেগম বাদি হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে শাহরাস্তি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেলায়েত হোসেন মিঠু গত ৯ এপ্রিল বুধবার সকালে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আটকের পর বাদি-বিবাদি উভয় পক্ষের মানিত লোকদের সমন্বয়ে ওই দিন বিকেলে থানায় সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সালিশ বৈঠকে বাদির মৌখিক ও লিখিত অভিযোগের আলোকে মোবারক হোসেনকে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সকল অপরাধ স্বেচ্ছায় স্বীকার করে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের সালিশদারগণ বিধবার সম্ভ্রমহানীর কথা ইউপি সদস্য মোবারক হোসেন স্বীকার করায় তাদের বিবাহের প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে মোবারক হোসেন অস্বীকৃতি জানালে পরবর্তীতে থানা পুলিশ বিষয়টি আরো অধিকতরভাবে পর্যালোচনা করে নিষ্পত্তির লক্ষে রায়শ্রী উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম পাটওয়ারী লিটনের উপর ন্যস্ত করেন। ইউপি চেয়ারম্যান বিবাদমান সমস্যাটি সমাধানের লক্ষে আটককৃত মোবারক হোসেনকে ৭ দিনের সময়ে ছাড়িয়ে নেন।
ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১৬ এপ্রিল বুধবার বিকেলে ইউনিয়ন পরিষদের পরিবর্তে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মুখে তার ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উভয় পক্ষের মানিত সালিশদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে উভয় পক্ষের ৩ জন করে মানিত সালিশদার দেয়ার কথা থাকলেও বিবাদী মোবারক হোসেন তার মানিত সালিশদার দিতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে ওই বৈঠকে সাময়িক আলোচনার পর ৩ দিনের সময়সীমা দিয়ে বৈঠক সমাপ্ত করা হয়। ৩ দিন পর গত ১৯ এপ্রিল শনিবার বিকেলে একই স্থানে সালিশ বৈঠকে বিবাদী মোবারক হোসেন তার স্বপক্ষে সালিশদার হাজির করতে না পারায় দায়িত্ব নেয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম পাটওয়ারী লিটন পুনরায় তাকে থানা পুলিশে সোপর্দ করেন। থানা পুলিশ তাকে গতকাল রোববার সকালে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করেন।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিধবা মঞ্জুমা বেগম জানান, আমার স্বামী মৃত মোহাম্মদ হোসেন প্রবাসে থাকাবস্থায় গত ১৯ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। ওই সময় স্বামীর লাশ দেশে আনতে সকল কাজকর্মে আমি ইউপি সদস্য মোবারক হোসেনের সহযোগিতা নেই। ওই সময় একাধিকবার তার কাছে আসা-যাওয়ার এক পর্যায়ে তিনি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন এবং আমাকে বিয়ে করার আশ্বাস প্রদান করেন। স্বামীর লাশ দেশে আসার সময় দাফনের যে অর্থ প্রবাস থেকে পাঠানো হয়েছে পুরো অর্থই আমি ওই ইউপি সদস্য মোবারক হোসেনের নিকট রেখে দেই। পরবর্তীতে তিনি আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভনে গোপন অভিসারে মিলিত হন। ওই সম্পর্কের জেরে ইতোপূর্বে আমি ২ বার অবৈধ গর্ভপাত ঘটাই। দীর্ঘদিন তার সাথে আমার সম্পর্কের কারণে এলাকায় নানা গুঞ্জণ চলতে থাকলে আমাকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তাকে অনুরোধ জানাই। তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়ার পরই তার প্রকৃত মুখোশ উন্মোচিত হয়। মোবারক আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। আমি কোন উপায়ান্তুর না পেয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্বরনাপন্ন হই। মোবারক বর্তমান ইউপি সদস্য হওয়ায় কেউই তাকে জোরপূর্বক কিছু বলতে পারে না। আমি স্থানীয়ভাবে কোন সুরাহা না পেয়ে থানা পুলিশের সাহায্য নেই। থানায় অভিযোগের পর পুলিশ তাকে আটক করে এবং আটকের পর তাকে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম পাটওয়ারী লিটন বিবাধমান সমস্যা সমাধানের জন্য থানা হতে ছাড়িয়ে নেন। বিষয়টি নিষ্পত্তির নামে সালিশ বৈঠকে আমার ইজ্জত নিলামে তোলা হয়েছে। কারণ আমার সাথে প্রতারণা এমনকি আমার সম্ভ্রমহানীর কোন সুষ্ঠু সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। বিচারের নামে তিনি বিধবার সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। তাছাড়া আমি অসহায় আর ওই ইউপি সদস্য ক্ষমতাসীন হওয়ায় কোথাও সঠিক বিচার পাচ্ছি না। আমি অসহায় হয়ে আজকে সমাজের দ্বারে দ্বারে সম্ভ্রমহানীর বিচার প্রার্থী। বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষে ও আমার সামাজিক মান-মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে আইন প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোঃ মোবারক হোসেন জানান, বিধবা মঞ্জুমার স্বামীর মৃত্যুর পর তার সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠে এটি সঠিক। এক পর্যায়ে তার ইচ্ছায় আমাদের গোপন অভিসার হয় কিন্তু আমি তাকে বিয়ের প্রলোভনে সম্পর্কে জড়িত হইনি। এছাড়া ওই বিধবা থানায় লিখিত অভিযোগে নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসেটসহ আরো নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপন করেছে। টাকা নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয় তবে অন্য বিষয়টিগুলো আংশিক সঠিক। যেহেতু তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ওই সুবাদে লেনদেন থাকা স্বাভাবিক। সর্বোপরি আমি তাকে বিয়ে করতে সম্মত নই। আমি তার সাথে গোপন অভিসারের সম্পর্ক করায় বিয়ে ছাড়া আইন ও সমাজের বিচারে আমার যা শাস্তি হবে তা মাথা পেতে নিবো।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেলায়েত হোসেন মিঠু জানান, বিধবার অভিযোগ আমলে নিয়ে থানায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়। গতকাল রোববার মামলার আসামী ইউপি সদস্য মোবারক হোসেনকে কোর্ট হাজতে ও বাদিকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য চাঁদপুরে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের মানুষের দাবি, জনগণ তাদের ওয়ার্ডের অভিভাবক হিসেবে মোবারক হোসেনকে নির্বাচিত করেছেন। তিনি একজন অভিভাবক হয়ে সমাজের সকল ভালো কাজে সম্পৃক্ত থাকার স্থলে একের পর এক এলাকার অসহায়, অবলা নারীদের নিয়ে গোপন অভিসারে সম্পর্ক চালিয়ে আসছেন। তার এহেন অনৈতিক কর্মকান্ডে শান্তিপ্রিয় সমাজের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিগত দিনে একই ধরণের অসংখ্য ঘটনা ক্ষমতা ও টাকার গরমে ধামাচাপা দিলেও পাপ যেমন বাপকে ছাড়ে না তেমনি মোবারকের অগণিত পাপের কারণে বিধবা মঞ্জুমাও তাকে ছাড়েনি। ইউপি সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সে যে অসামাজিক কাজ করেছে তার এমন শাস্তি হওয়া উচিত যা সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য, বিধবা মঞ্জুমা ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জননী।
শিরোনাম:
রবিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।