– ইভটিজারের করালো গ্রাস- কেড়ে নিলো স্কুল ছাত্রী শারমিন আক্তার মিনুর জীবন। সকল আশা ভরসা ভেস্তে গেলো বাবা-মা ও ভাইদের একমাত্র কন্যা ও বোনকে হারিয়ে তার এখন হতবিহ্বল। এমন ঘটনায় গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় শষাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের আয়না তলীতে এলাকাবাসির উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা অভিযুক্ত ইভটিজারের ফাঁসির দাবী জানান।
জানা যায়, গত ২০আগষ্ট বেলা আড়াই টায় আয়নাতলী ফরিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শারমিন আক্তার মিনু ওই বিদ্যালয়ের একই শ্রেণির ছাত্র তারেক হোসেন কর্তৃক ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। এ সময় সে রাগে ক্ষোভে নিজ বাড়ির শয়ন কক্ষের ঝুলন্ত ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আতœহত্যা করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই ্এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ব্যাপারে নিহত মিনুর সহপাঠীরা জানায়, ঘটনার দিন সকালে তারেকের মা রুপবান বেগম ও তার বোন কণিকা স্কুলে প্রবেশ করে মিনুকে অপমান অপদস্ত করে। এক পর্যায়ে তারেক তার মা বোনের সামনে মিনুর গায়ে হাত দেয় এবং তাকে চড় মারে। এছাড়াও তারা আরো জানায়, তারেক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বহু ছাত্রীর ওড়না টানসহ গায়ে হাত দিয়েছে। এসব ঘটনা শিক্ষকদের অবহিত করলে ওনারা কখনই কর্ণনাত করেন নি। বরং ছাত্রীদের শাসিয়ে কথা বলতেন। মিনুর এমন করুণ মৃত্যুর জন্য
শিক্ষক- শিক্ষিকা ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির লোকজনও কম দায়ী নয় বলে তরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। এঘটনা সম্পর্কে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান জানান, মিনুর মৃত্যু সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। আর সে তার নিজ বাড়িতে আতœহত্যা করেছে। এ জন্য আমরা শিক্ষকদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে যদি কিছু জানেন- তাহলে সহকারি শিক্ষক আনোয়ার সাহেব বলতে পারবেন। হয়ত তাদের দুই পরিবারের অন্তঃকোন্দলের খেসারত দিয়েছে মিনু। প্রধান শিক্ষকের এমন বক্তব্য নিজেদের দায়মুক্ত এবং অভিযুক্ত তারেককে দোষমুক্ত করতে বিভিন্ন মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এলাকাবাসি বলেন, শিক্ষকদের অবহেলা আর ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বহীনতাই মিনুর এমন মৃত্যুর মূল উৎস। বিদ্যালয়ে স্থানীয় শিক্ষকদের প্রভাব বিস্তার এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের দাম্ভিকতা বিদ্যালয়ে পাঠের সুন্দর পরিবেশ নষ্টসহ অসামাজিক, আপত্তিকর, অশোভন, স্বেচ্ছাচারিতা, পেশীদ্বন্দ্ব, হানাহানি-মারামারি এবং ইভটিজিংয়ের মত ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। তারা আরো বলেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রতন এ ঘটনাটি তুচ্ছ মনে করে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে নিষ্পত্তি করার পায়তারা করছেন। এছাড়াও স্কুল ভাংচুরের ঘটনায় প্রতিবাদী সভার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে হয়রানির শিকার করবেন। তার এমন দাম্ভিকতায় ওই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত তারেক পরিবারের বক্তব্য নিতে গিয়ে সংবাদ কর্মীরা কাউকে পায়নি। তারেকের খালা কোহিনুর বেগম জানায়, ঘটনার পর থেকে তারেকের মা ও বোন পলাতক রয়েছে।
নিহত মিনুর বাড়িতে গেলে তার ভাই শাহাবুদ্দিন নয়ন- মিনুর হাতের লেখা একটি চিরকুট সংবাদ কর্মীদের হাতে তুলে দেয়। যাতে লেখা ছিল, “মা, ভাইয়া, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষেরা আমাকে বাঁচতে দিল না। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী তারেক, তারেকের মা ও তার বোন কণিকা। আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ তোমরা নিও।” এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশ কিংবা শোকে অংশ নেননি ওই স্কুলের কোন শিক্ষক অথবা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। তারা স্কুল নয়- তারেককে বাঁচাতেই নানা পথ বেঁচে নিচ্ছেন। এমন অভিযোগ নিয়ত মিনুর ভাইদের। তারা মিনু হত্যার সুষ্ঠ বিচারের দাবী প্রার্থনা করেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে ওই স্কুলের আগত ছাত্রীদের বাধা প্রয়োগ করেন এক মহিলা শিক্ষিকা। যা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটে।
গতকাল সন্ধ্যায় ময়না তদন্ত শেষে মিনুর লাশ তার নিজ এলাকায় পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। নিহতের মা-৫ ভাই ও আতœীয় স্বজনসহ সতীর্থরা এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এলাকার আবাল বৃদ্ধ বনিতা সেখানে ভিড় জমায়। তাদের হৃদয় স্পর্শী কান্নার আবেশে এলাকার চারপাশ ভারী হয়ে ওঠে। রাত ৯টায় জানাজা শেষে মরহুমাকে তার পারিবারিক করবস্থানে দাফন করা হয়।
শিরোনাম:
সোমবার , ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।