মিজানুর রহমান রানা ॥
শিক্ষক ও আবাসন সঙ্কটই নয় চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে প্রতিনিয়তই সমস্যার জালে বন্দী হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার সর্বোচ্চ নারী শিক্ষা বিদ্যাপীঠ এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু অবকাঠামোগত সমস্যার মধ্য দিয়েই দিন পার করছে না, শিক্ষক সঙ্কট তাদের মূল সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, নারী শিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি কোনো কোনো বিভাগের শিক্ষকই নেই, অতিথি শিক্ষক দিয়ে চলছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার ধর্ণা দিয়েও কোনো ফয়সালা করতে পারছেন না। তবে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে নীরবে নিভৃত্বে ধ্বংস হওয়ার পথে চলে গিয়েছিল তা থেকে বিগত মহাজোট সরকার এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এ নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অন্ধকার থেকে আলোর পথে অনেকটাই নিয়ে এসেছেন। আর এর জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এ আসনের সাংসদ এবং যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাঁদপুরের কৃতী সন্তান ডা. দীপু মনি এমপি। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই এ প্রতিষ্ঠানটির এখন আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে।
জানা যায়, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে চারটি বিষয় অনার্স কোর্স রয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে : ইংরেজি, ইতিহাস, বাংলা ও সমাজকর্ম। এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্যে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগ, মানবিক বিভাগ ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা। তাছাড়া ডিগ্রির বিএ ও বিএসএস দুটি বিভাগ চালু রয়েছে। এ সকল বিভাগগুলো চালাতে গিয়ে সরকারের নিয়মানুযায়ী এবং সরকারি পরিপত্রে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে : যে সকল বিষয়ে অনার্স কোর্স রয়েছে সে বিষয়গুলোতে কমপক্ষে সাতজন প্রভাষক প্রয়োজন। এছাড়াও সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক পদে দু’জন করে এবং প্রতি বিষয়ে একজন অধ্যাপক থাকার নিয়ম থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানে তা বিপরীত। অর্থাৎ শিক্ষক সঙ্কট নিয়েই চলচে প্রতিষ্ঠানটি। সবচে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে : এ প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি শিক্ষার্থীদের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষক নেই বললেই চলে। এ বিভাগটি শুধুমাত্র অতিথি শিক্ষকদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলছে। তারপরও যৎসামান্য শিক্ষক থাকার মধ্য দিয়েও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি বিভাগের ফলাফলে সন্তোষজনক ফলাফল করে এ অঞ্চলে বেশ সুনাম কুড়িয়ে চলছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে সঙ্কটের জন্যে যারা আন্দোলন সংগ্রাম করবে সেই সংগঠন ছাত্রী সংসদ নেই দীর্ঘ দু’যুগেরও বেশি সময় ধরে। যার ফলে শিক্ষকদের চিঠি চালাচালির মধ্য দিয়েই চলছে সমাধান করার চেষ্টা। আবার যে সকল বিষয়গুলো অতিথি শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে, সেখানেও ওই অতিথি শিক্ষকের বিল-ভাউচার নিয়েও রয়েছে অনিয়ম দুর্নীতির কানাঘুষা। তারপরও থেমে নেই পাঠদান। ভর্তি বন্ধ নেই ছাত্রীদের। ক্লাশ চলছে নিয়মিত।
এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৮জন প্রভাষকের পদ রয়েছে। কিন্তু সেখানে ৮জন প্রভাষক কর্মরত রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী ৩০জন প্রভাষক থাকার কথা। সেক্ষেত্রে ২২জনের পদেই শূন্য। সহযোগী অধ্যাপক থাকার কথা কমপক্ষে ১৫জন। রয়েছেন কর্মরত ১জন। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ১৭জন থাকার কথা থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ১১জন। ৬জনের পদ শূন্য। তাছাড়া যেহেতু ৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স রয়েছে, সেখানে কমপক্ষে ৪জন অধ্যাপক থাকার নিয়ম রয়েছে, সেখানে ১জনও নেই। অর্থাৎ শিক্ষক সঙ্কট চরম আকারের মধ্য দিয়ে জেলার একমাত্র নারী শিক্ষা উচ্চ প্রতিষ্ঠানটি চলছে। আর সবচে’ দুঃখজনক হলেও সত্য, এ র্শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এইচএসসি বিভাগের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষক নেই বললেই চলে। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা এ প্রতিষ্ঠানের এ শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছেন। শুধুমাত্র অতিথি শিক্ষক দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। তারপরও এ বিভাগের ফলাফল সন্তোষজনক হচ্ছে।
এককথায় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক সঙ্কট চরম আকারে ধারণ করলেও ফলাফলের দিক দিয়ে সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার কর্ণধার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই জেলার সর্বোচ্চ নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির দিকে নজর কেন যেনো সরাসরি দিচ্ছেন না। তাই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সহ জেলাবাসীর দাবি, এ আসনের সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি একজন নারী হিসেবে নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়ে দ্রুততার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মাসুদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা রাখি খুব সহসাই এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৫ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।