
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ মার্চ থেকে বাড়িয়ে আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত করার কথা ভাবছে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা ঈদের পরে নেওয়া হবে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা ডাকা হয়েছে। তাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন সভাপতিত্ব করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পাঠের মধ্যে রাখতে সংসদ টিভির মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদান করা হবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতি এ মুহূর্তে উন্নতি হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ মার্চ থেকে বাড়িয়ে কতদিন করা যায়, তা নিয়ে আজ (মঙ্গলবার) আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেব। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ছে এটা বলা যায়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরকার গতকাল ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ ছুটি আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে রমজান শুরু হবে। রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকতে পারে এমন শঙ্কায় বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করার পদ্ধতি খোঁজা শুরু করেছে শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। বন্ধের এ সময়কালের সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটি সমন্বয় করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় এই সময় পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছুটি থাকবে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) শিক্ষা সচিবের সঙ্গে বসে সিদ্বান্ত নেব আরও কতদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশে
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে
দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত রবিবার স্থগিত করা হয়েছে এইচএসসি ও
সমমানের পরীক্ষা। পরিস্থিতি উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কবে নাগাদ
খোলা হবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়েছে প্রাক-প্রাথমিক
থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা
কার্যক্রম। এ অবস্থায় বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনলাইন
ও টেলিভিশনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে
বিশ্বের অনেক দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম
পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও
ইংরেজিমাধ্যম স্কুল ইতোমধ্যে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। ষষ্ঠ থেকে
দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে
রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক
পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে রাখা যায়, তার উপায় খুঁজছে
মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষার্থীদের একটা স্টান্ডার্ড আছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের অধীন বর্ণমালা পড়–য়া শিক্ষার্থীও আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে কীভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠের মধ্যে রাখা যায়, এ নিয়ে আজকে এটুআইর কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করেছি। তিনি আরও বলেন, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে পাঠ আলোচনা ভিডিও-অডিও করে টিভি, কমিউনিটি রেডিও, অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম পাঠদানের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে অনেক অভিভাবকের বাড়িতে টিভি নাই। তাদের ক্ষেত্রে কী করা যায়, তা ভাবতে এটুআই কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে যে পদ্দতিতেই পাঠদান করা হোক, গুণগতমান নিশ্চিত করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর গোলাম ফারুক বলেন, করোনা কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তাই আপাতত বাচ্চাদের একাডেমিক টাচে রাখতে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছি।
মাউশির কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম চলবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষকদের ক্লাসগুলো রেকর্ডিং করে সংসদ টিভির মাধ্যমে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যবর্তী সময়ে এই ক্লাসগুলো প্রচার করা হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একেকটি বিষয়ের জন্য মোট ৩৫টি ক্লাস থাকবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো ছাড়া এ মুহূর্তে আর কোনো বিকল্প দেখছি না। তবে সেটি কতদিন হবে, তা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হবে। তিনি আরও বলেন, বন্ধের সময় শিক্ষার্থীদের একাডেমিক টাচে রাখতে এটুআইর প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে বাছাই করা শিক্ষকদের রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচার করার কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়াও করোনা নিয়ে সর্তকতা মূলক বার্তা এক কোটি ৪০ লাখ বাচ্চাদের মায়েদের কাছে এসএমএসের মাধ্যমে পৌঁছানো হবে।
এদিকে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এরই মধ্যে চালু অনলাইনে ক্লাস নেওয়া চালু করেছে। ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত রেইনবো কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে গত বুধবার অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস দিয়ে শিক্ষার্থীর একাডেমিক বই, লেকচার শিট, খাতাগুলো স্কুল থেকে সংগ্রহ। একই সঙ্গে স্কুলের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করার জন্য বলা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনের ক্লাসের শিট ও লেসনগুলো দেওয়া হচ্ছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে ক্লাস শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। একই পদ্ধতিতে প্রায় সব ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলো শিক্ষার্র্থীদের অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে।
গত রবিববার থেকে দেশের প্রথম সারির ১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউটিউব লাইভ, ফেসবুক লাইভ, গুগল ক্লাসরুম, মাইক্রোসফট টিম, জুম এবং কোর্সেরা এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে ক্লাসের লেকচার শিট আপলোড করা হয়। শিক্ষার্থীদের বাসার কাজ দেওয়া হয়। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনমুখী হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা ধরে আগেই অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। গত বুধবার থেকে অল্প পরিসরে অনলাইনে ক্লাস শুরু করলেও এ সপ্তাহ পুরোদমে পুরোদমে ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গুগল, স্কাইপ, গ্রুপ ভিডিও কলসহ আরও কয়েকটি পদ্ধতিতে ক্লাস নেওয়া হয়। এটা মূলত শিক্ষার্থীদের পছন্দ এবং কোন বিষয়ের ক্লাস তা দেখেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
আজকালের খবর/