মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসা। অসুস্থ হলে মানুষ যে কোনো উপায়ে যথাযথ চিকিৎসা প্রত্যাশা করে। চাঁদপুরবাসীর সেই মৌলিক অধিকার এবং মনের চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণ হতে আর অল্প কদিন বাকি। চলতি জুলাই মাসেই তা পূরণ হতে যাচ্ছে। চাঁদপুরের চিকিৎসা সেক্টরে বড় ধরনের দুটি সাফল্য বাস্তবায়ন হতে চলেছে। আর এই সাফল্য এবং জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণ করার কৃতিত্বের শতভাগ দাবিদার হচ্ছেন চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর বড় ভাই ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাসহ চার কর্ণধার বুধবার রাতে একটি লাইভ অনুষ্ঠানে এসে এভাবেই ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর ভাই ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপুকে নিয়ে তাঁদের মূল্যায়ন এবং অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন।
কোভিড-১৯ হেল্পলাইন ইউএইচএফপিও চাঁদপুর সদর ফেসবুক পেইজে ওই লাইভ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির বড়ভাই ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান, হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ও জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম এবং হাসপাতালের আরএমও ও করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেল। লাইভ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন কোভিড-১৯ ফেসবুক পেইজের উদ্ভাবক এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন।
এ লাইভ অনুষ্ঠানে অতিথি পাঁচজন চিকিৎসক এবং সঞ্চালকও চিকিৎসক। তাই পুরো লাইভ অনুষ্ঠানটিই ছিলো চাঁদপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে। বিশেষত বর্তমান করোনাকালে চাঁদপুর জেলার মানুষ কেমন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে কীভাবে আরো উন্নত সেবা, কী কী ধরনের সেবা পাবে সে বিষয়গুলো পুরো লাইভ অনুষ্ঠানে প্রাধান্য পায়। সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ চাঁদপুরের স্বাস্থ্য সেবার চিত্রসহ বর্তমান করোনা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন। ডাঃ মাহবুবুর রহমান, ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম এবং ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে বর্তমান করোনাকালে চিকিৎসা সেবার মান, আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা কার্যক্রম, করোনার মাঝেও হাসপাতালে অন্যান্য চিকিৎসা সেবার কাজ যে বন্ধ হয়নি সে সব তথ্য তুলে ধরেন লাইভ অনুষ্ঠানে। একই সাথে আইসোলেশন ওয়ার্ডে কিছুদিন আগে যে পর পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল তার কারণ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
এদিকে পুরো লাইভ অনুষ্ঠানটির সিংহভাগ আলোচনাই ছিলো অতিথি আলোচক ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপুর আলোচনাকে ঘিরে।
ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু তাঁর আলোচনায় বর্তমান করোনাকালে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ডাক্তাররা যে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, আগে হাসপাতালের বিষয়ে নানা অভিযোগ শুনলেও এই সাড়ে তিন মাসে কোনো অভিযোগ তারা পাননি। এটি অবশ্যই ইতিবাচক দিক। নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি আমরা লক্ষ্য করিনি। ডাঃ টিপু বলেন, বর্তমান করোনার সময়ে আমরা চাঁদপুরে আসছি না ঠিক। তবে ডাঃ দীপু মনি এবং আমি সার্বক্ষণিক চাঁদপুর ও হাইমচরের খোঁজখবর রাখছি। এখানকার প্রশাসনের লোকজন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অঙ্েিজন প্লান্ট সংযোজন হবে। এটি আমার বাবা ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সম্পূর্ণ সহযোগিতায় করা হচ্ছে। জুলাইর প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই এটি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এই কাজটি হয়ে গেলে এখানে এসে কোনো রোগীকে আর অঙ্েিজনের অভাবে মরতে হবে না। করোনা চলে গেলেও এই সেন্ট্রাল অঙ্েিজন প্লান্ট হাসপাতালের জন্যে স্থায়ীভাবে কাজে লাগবে। আর এটি যেহেতু হাসপাতালের দ্বিতীয় ফ্লোরে হচ্ছে, সে জন্য ভবিষ্যতে আইসিইউর জন্যও এটি কাজে লাগবে।
পিসিআর ল্যাব সম্পর্কে ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু বলেন, চাঁদপুর থেকে স্যাম্পল ঢাকা পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় রিপোর্ট আসতে খুব বেশি দেরি হয়ে যায়। এই দেরির কারণে রিপোর্টের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ বিষয়গুলো আমরা জানতে পেরে আমি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সাথে কথা বলি। তখন আমরা দুজন পরামর্শ করে ঠিক করি চাঁদপুরে আমার বাবা ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে একটি পিসিআর ল্যাব করার। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটি। তারা আমাদেরকে ল্যাবের মেশিনপত্র বিদেশ থেকে এনে দেয়া এবং ল্যাবটি চাঁদপুরে চালু হওয়া পর্যন্ত লোকবল দিয়ে সাপোর্ট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এগিয়ে আসেন। তখন আমাদের মনোবল খুব দৃঢ় হয় যে চাঁদপুরে তাহলে পিসিআর ল্যাব করা যাবে। আর ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের নামে যে ফ্ল্যাট বরাদ্দ আছে সেখানেই ল্যাব স্থাপন হবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নেই। এর সাথে আমরা চাঁদপুর মেডিকেল কলেজকে যুক্ত করি। আমরা এই ল্যাব খুব দ্রুততার সাথে চালু করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করি। তাঁরাও খুব দ্রুততার সাথে এগিয়ে আসেন এবং আমাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেন। এখন ল্যাব স্থাপনের কাজটিও খুব দ্রুতগতিতে চলছে। আশাকরি সব ঠিকঠাক থাকলে ২০ জুলাইর মধ্যে আমরা ল্যাব উদ্বোধনসহ কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ তাঁর আলোচনায় বলেন, আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর বড়ভাই ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু ভাই চাঁদপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন এটা আমাদের জন্যে অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। তাঁরা যে মনিটরিং করছেন এটা আমাদের জন্যে অনুপ্রেরণা। তাঁদের দুজনের প্রচেষ্টায় চাঁদপুরে স্বাস্থ্য খাতে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে তা ইতিহাস হয়ে থাকার মতো। এ জন্যে আমরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং টিপু ভাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সঞ্চালক ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন বর্তমান করোনাকালে তার এই কোভিড-১৯ হেল্পলাইন পেইজের মাধ্যমে জনগণকে যে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তার বিবরণ তুলে ধরেন লাইভ অনুষ্ঠানে। একই সাথে তিনি চাঁদপুরে যে পিসিআর ল্যাব হচ্ছে এবং আড়াই শ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে যে সেন্ট্রাল অঙ্েিজন প্লান্ট হচ্ছে তার জন্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং তাঁর বড়ভাই ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।