আগামী ২ নভেম্বর শনিবার থেকে সারাদেশে একযোগে জেএসসি এবং জেডিসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এই পরীক্ষাগুলো শতভাগ স্বচ্ছ ও বিতর্কের ঊধর্ে্ব সম্পন্ন করার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১০টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ২৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২২দিন সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা জন্যে এ ব্যবস্থা। গত ১৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি বক্তব্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি জাতীয়ভাবে মিডিয়ার কাছে তুলে ধরেন। আর মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সভা করে শিক্ষামন্ত্রী এ ঘোষণা দেন ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার। এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর এ ঘোষণার দিনক্ষণ ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হলেও চাঁদপুরে এখনো এর কোনো বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দু একটি ব্যতীত সব কোচিং সেন্টার এখনো পর্যন্ত চালু আছে। অথচ চাঁদপুরের প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
চাঁদপুর শহরে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় শ’খানেক কোচিং সেন্টার রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই এসব কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থী। কোনো কোনো কোচিং সেন্টার যেনো ছোটখাটো স্কুল, এতো সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়ে এসব কোচিং সেন্টারে। স্কুল কলেজের ক্লাস ফাঁকি দেয়া চলে, কিন্তু কোচিংয়ের ক্লাস ফাঁকি নেই।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে এ সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মাথায়ই অনুষ্ঠিত হয় এসএসসি পরীক্ষা। তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসে প্রশ্নপত্র ফাঁসমুক্তভাবে পরীক্ষা নেয়া। এ চ্যালেঞ্জে তিনি সফল হতে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে থেকে সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। এতে তিনি সফলও হন। একই পন্থা নেন এইচএসসি পরীক্ষার সময়ও। এ পরীক্ষায়ও তিনি সফল হন। কোনো ধরনের প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়া স্বচ্ছভাবে পরীক্ষা শেষ হয়। কিন্তু দেখা গেছে যে, শিক্ষামন্ত্রীর এ নির্দেশনা তাঁর নিজ জেলা চাঁদপুরেই ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় নি। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব ছিল। এবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার সময়ও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। আর একদিন পরেই পরীক্ষা। অথচ চাঁদপুর শহরের সব কোচিং সেন্টার এখনো দিনরাত চলছে। প্রশাসন নিশ্চুপ।
এ বিষয়ে চঁদাপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ শওকত ওসমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কোচিং সেন্টার বন্ধ হওয়া সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা এখনো পাইনি। হয়ত পরীক্ষার আগ মুহূর্তে আসবে। তারপরও আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে কাজ শুরু করবো।
চাঁদপুর শহরে যেসব কোচিং সেন্টার রয়েছে, এর অধিকাংশেরই সাইনবোর্ড নেই। শিক্ষকরা রুম, বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং করে থাকেন। শহরের পাড়া মহল্লার ভেতরেই সবচেয়ে বেশি কোচিং সেন্টার। একেকটি কোচিং সেন্টারে একেক ব্যাচে অর্ধ শত’র মতো ছাত্র ছাত্রী পড়ে। শহরের পুরাণ আদালত পাড়ায় হক ভিলা (মরহুম অ্যাডঃ শামছুল হক সাহেবের বাসা) নামে একটি বাসার নিচতলায় আল-আমিন একাডেমীর একজন শিক্ষক সকালে কয়েকটি ব্যাচে কোচিং করান। শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে প্রতিদিন পড়ে। গতকালও এ কোচিংয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে দেখা গেছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে ২৫ অক্টোবর থেকে সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। একই অবস্থা আল-আমিন একাডেমীর সামনে তপাদার বাড়ি, একাডেমীর আশপাশ, হাজী মহসিন রোড, প্রফেসর পাড়া, নাজিরপাড়া, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক (মনু হাজীর বাসা এলাকা), রামকৃষ্ণ আশ্রম এলাকা, ট্রাক রোড, ছৈয়াল বাড়ি এলাকা, মিশন রোড এলাকাসহ শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লার কোচিং সেন্টার এখনো চালু রয়েছে। এ অবস্থা দেখে সচেতন জনগণ বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর নিজ এলাকায়ই তো তাঁর নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেই। এখানেই তো তাঁর নির্দেশনা উপেক্ষিত।