শিগগিরই কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনার কাজ চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
এমন তথ্য জানিয়েছেন ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার ঈদগাহ মাঠের ইমাম ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর কওমি মাদরাসা শিক্ষার সরকারি স্বীকৃতির জন্য ‘বাংলাদেশ কওমি শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৩’ এর খসড়া মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন জন্য উঠলেও প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও দেশের বিভিন্ন মাদরাসার বোর্ড ও সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল কওমি মাদারাসা স্বীকৃতি। আবার কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেন। কারণ হিসেবে বলেন, এই আইন হলে মাদরাসার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হবে। সেই সময়ে ‘কওমি মাদ্রাসা আইন পাস হলে দেশে গৃহযুদ্ধ হবে’ বলে সরকারকে হুঁশিয়ার দিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খানের বাসায় একান্তে বৈঠক করেছেন ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। বৈঠকের কথা স্বীকার করে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘সচিবের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে সনদের স্বীকৃতি নিয়ে। এসময় সচিব আমাকে আশ্বস্ত করেন, বলেন শিগগিরই স্বীকৃতি আসছে। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্রুত কথা বলবেন।’
ফরীদ উদ্দীন আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা কওমি সনদের স্বীকৃতি আদাইয়ের লক্ষ্যে এক লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর আদায়ের ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে। শিগগিরই কওমি সনদের স্বীকৃতি দেয়া হবে বলেই আমরা আশাবাদী।’
কর্মসূচি প্রসঙ্গে মাসঊদ বলেন, ‘আমাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম আবার শুরু হতে যাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন-কর্মসূচি স্বীকৃতি আদায়ের জন্যই। কোনো আন্দোলন ছাড়াও যদি স্বীকৃতি দেয়া হয় তাতে তো দোষের কিছু নেই।’
তবে এখানে বড় সমস্যা হচ্ছে, সরকারের হাতে দেশের কওমি মাদরাসার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। এসব মাদরাসার সংখ্যা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সিলেবাস এসব বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট ধারণা নেই।
২০১৩ সালে নবম সংসদে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, দেশে কওমি মাদরাসার সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩১টি। আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ। এসব মাদরাসাগুলোতে সরকারি স্বীকৃতি ও নিয়ন্ত্রণ নেই। এমনকি পাঠ্যসূচিও সরকার অনুমোদিত নয়।
শুক্রবার শিক্ষসচিবকে তার নিজ বাড়িতে কওমি সিলেবাস দেখাচ্ছেন ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ শিগগিরই মিলছে কওমি সনদের স্বীকৃতি!
মূলত দেশের কওমি মাদরাসাগুলো ১৭টি জাতীয় ও আঞ্চলিক বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে। কওমি মাদরাসার একটি বড় অংশ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ও হেফাজতের সমর্থক। বিএনপিকেন্দ্রিক নেতারা এই স্বীকৃতির বিরোধিতা করছেন। ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ আইন পাস হলে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা স্বকীয়তা এবং বর্তমান আলেমরা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারাবেন বলেও প্রচার করছেন তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি নিতে অনীহা ও বিক্ষোভের সুর ওলামাদের। তবে আওয়ামী লীগ ঘরানার ও সাধারণ আলেমরা এ স্বীকৃতির পক্ষে। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক থেকে ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ বিলটি ফেরত যাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি সম্প্রতি শিক্ষা সচিব হিসেবে দায়িত্বে এসেছি। মাদরাসা নিয়ে আমি জানার চেষ্টা করছি। দেশে কতোগুলো কওমি মাদরাসা আছে, কতজন শিক্ষার্থী, শিক্ষক আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। একেকজন একেক রকম কথা বলেন। এসব বিষয়ে জানতে বিভিন্ন সময়ে মাদরাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কথা বলছি। এজন্য আজকে (শুক্রবার) ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের সঙ্গে আলাপ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের সিলেবাস সম্পর্কে কথা বলেছি। পর্যায়ক্রমে মাদরাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে সঠিক তথ্য জানা যাবে আশা করছি।’
সনদের স্বীকৃতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তার (ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ) সঙ্গে কথা বলেছি মাদরাসা সম্পর্কে জানতে। এই মুহূর্তে আমি সেই অবস্থানে নেই যে স্বীকৃতির বিষয়ে কথা বলব।’
মাদরাসা শিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মাদরাসার ছেলেরা আরবি ভাষায় পড়তে পারে। কিন্তু অবাক বিষয় হচ্ছে তারা আরবিতে কথা বলতে পারে না। কিন্তু ইংরেজি মাধ্যমের ছেলে-মেয়েরা যেমন ইংরেজি ভাষায় পড়তে, লিখতে, বলতে পারে, তেমনি মাদরাসার ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রেও আরবি ভাষায় দক্ষতা থাকা উচিৎ।’
বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মাওলানা মাসউদুল কাদির বলেন, ‘আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের সাক্ষাতের মূল উদ্দেশ্যই ছিল সনদের স্বীকৃতি। তাই তিনি ৫-৬ জন ওলামাকে সঙ্গে নিয়ে সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। শিক্ষা সচিব স্বীকৃতি বিষয়ে হুজুরের (ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ) কথা শুনেছেন। এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।’
স্বীকৃতি প্রসঙ্গে গওহরডাঙ্গা কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মুফতি মো. তাসনীম বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল কওমি সনদের স্বীকৃতি। আমাদের বোর্ডের চেয়ারম্যান মুফতি রুহুল আমীন এই দাবি আদায়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। আমারা দেশের বিভিন্ন মাদরাসার সঙ্গে আলাপ করে স্বীকৃতি আদায়ের জনমতের জন্য কাজ করছি।’