
কামরুল হাসান হীরা
বর্তমান সমাজে সৎ, সাহসী, যোগ্য, আদর্শবান, নীতিবান মানুষের উপস্থিতি এখনও রয়েছে I তবে সংখ্যানুপাতিক হারে এসকল মানুষের উপস্থিতি সমাজে খুবই কম I তাছাড়া, দিন দিন ভালো মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে I যার ফলে নানা প্রকার অসংগতি সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় I আমরা কি কখনো আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখেছি? আমরা কি আসলেই সমাজে স্বাভাবিক এবং সচেতন ভাবে জীবন যাপন করছি? আমরা কি আসলেই শিশুদের পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীও এবং নৈতিক শিক্ষা দিতে চেষ্টা করেছি? আমরা কি আসলেই শিশুদের সত্যিকারের সৎ, মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে পেরেছি? আমরা কি আসলেই শিশুদের সত্যিকারের ইতিহাস জানতে কিংবা বুঝতে সহায়তা করেছি? আমরা কি আসলেই শিশুদের সাথে সমাজে ঘটে যাওয়া নানান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি? আমরা কি আসলেই শিশুদের মানসিক বিকাশে সঠিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছি? আমরা কতটুকু করতে সক্ষম হয়েছি বা আমাদের কি কি করা উচিত ছিল তার সঠিক হিসাব হয়তো আমাদের কাছে নেই I কিন্তু, এ বিষয়ে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে I
আজকের শিশুরাই সমাজ এবং দেশের সম্ভাবনাময় সম্পদ I যারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ গড়ার স্থপতি I যাদের উপর আগামীর ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল I যারা আগামী দিনের পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে I এরাই একদিন দেশের সবাইকে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে সাহস যোগাবে । তাই সমাজকে সুন্দরভাবে সাজাতে হলে শিশুদের শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশের উপর অধিকতর দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন I স্বাভাবিক জীবন যাপনে শিশুরা মানসিকভাবে কতটুকু খুশি বা অখুশি; সুস্থ বা অসুস্থ; আনন্দিত বা আতঙ্কিত; ভীতসন্ত্রস্ত বা ভীতিকর প্রবণতা শিশুদের মাঝে আছে কি না, তা খুঁজে বের করা অনেক জরুরী I উপরোক্ত কারণগুলো শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় I গবেষক বা পুষ্টিবিদরা মনে করেন পুষ্টিকর খাবার বা পর্যাপ্ত খেলাধুলা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য যথেষ্ট নয় I এই ক্ষেত্রে, শিশুর শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক বিকাশের জন্য সময় উপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন I মন এবং শরীর দুটোই মানবদেহেরঅপরিহার্য অংশ I মানুষের শরীর অসুস্থ থাকলে মন এমনিতেই অসুস্থ হয়ে যায় I তাই বলা যায় মানুষের মনের সাথে শরীরের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য I শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতাই হল স্বাভাবিক বিকাশের মূলতত্ত্ব I
শিশুর মানসিক বিকাশে পারিবারিক সম্পর্কের প্রভাব কতটুকু তা বিবেচনার বিষয় I পারিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়,একটি শিশুর জন্মের পর সে আস্তে আস্তে চিনতে শিখে নিজেকে I পরবর্তীতে, চিনতে শিখে নিজের মা, বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের I তাই, পরিবার শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুদায়িত্ব বহন করে I এক কথায় বলা যায়, পরিবারই হল শিশুর একমাত্র নিরাপদ স্থান I পরিবারের অতি যত্ন, নিবিড় পরিচর্যা, আদর এবং ভালোবাসায় শিশুরা শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থতার সহিত বেড়ে উঠে I এই প্রেক্ষিতে বলা যায়, শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তাদের মানসিক ভাবনাগুলো ধীরে ধীরে বিকশিত হয় I প্রকৃতপক্ষে, শিশুদের মানসিক বিকাশ নির্ভর করে তার বাবা-মায়ের ইচ্ছা শক্তির উপর I শিশুদের মানবিক গুণাবলীর সাথে বিশেষ করে বাবা-মায়ের পারস্পরিক সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত I শিশুরা যখন অন্যান্য সহপাঠীর সাথে মিশে তখন তার মানসিক চিন্তা ভাবনাগুলো অন্যকে আকৃষ্ট করে I এমনকি, পরিবার কেন্দ্রিক মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনা সামাজিক সম্পর্কে সরাসরি প্রভাব ফেলে I শিশুরা অনুকরণ করতে ভালোবাসে I বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা তাদের পিতা-মাতাকে অনুকরণ করে I শিশুরা যা দেখে বা শুনে তাই তারা নিজে নিজে চর্চা করতে পছন্দ করে I
পারিবারিকভাবে, বাবা মায়ের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ও শারীরিক নির্যাতন, তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি বিষয়গুলো শিশুদের মনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে I পরবর্তীতে, এসকল শিশুরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে একাকীত্ব বোধ, বিষন্নতা কিংবা হতাশায় ভোগে I যার ফলশ্রুতিতে, যেকোনো কাজে, কথায়, খাবার-দাবার বা পড়ালেখা ইত্যাদিতে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে I ক্রমান্বয়ে, শিশুদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করে I এ সকল সমস্যা শিশুর মানসিক বিকাশে নানারূপ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। কোন কোন ক্ষেত্রে উক্ত কারণে শিশুদের মনে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায় I পারিবারিক অযত্ন ও অবহেলার দরুন সামরিক অস্বাভাবিকতা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক রোগে পরিণত হয় I আবার ক্ষেত্রবিশেষে কোন কোন শিশু তাদের কৈশোর বয়সে এসে নেশা বা নেশা জাতীয় দ্রব্য বা যেকোনো অপকর্মের সাথে লিপ্ত হয়ে যায় I যা শিশুটির স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠায় নেতিবাচক প্রভাব পরে I তাই বাবা-মাকে লক্ষ্য রাখতে হবে পারিবারিক সমস্যা বা দাম্পত্য কলহের বিষয়গুলো থেকে অবশ্যই শিশুদেরকে দূরে রাখা উচিত I
অনেক ক্ষেত্রে, পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির করত বাবা-মায়েরা আদালতের শরণাপন্ন হন I পারিবারিক মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশু- সন্তানদের নানা প্রকার বৈষম্যের শিকার হতে হয় I উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সন্তানের হেফাজত, তত্ত্বাবধান এবং অভিভাবকত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালত নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হয় I অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানের হেফাজত বা তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কে নিবে তা নিয়ে বাবা-মায়ের মধ্যে নানা রকমের জটিলতা তৈরি হয় I কোন কোন সময়, পারিবারিক নিগ্রহ, লাঞ্ছনা, তিরস্কার এবং অবহেলার কারণে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ভরণপোষণ, লেখাপড়া, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়গুলো হুমকির মুখে পড়ে I যার ফলশ্রুতিতে, শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার বিষয়গুলো জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে I যা কিনা শিশুদের মানসিক বিকাশের প্রধান অন্তরায় I
পারিবারিক সম্পর্কের সাথে সামাজিক সম্পর্কের অনেক সামঞ্জস্যতা রয়েছে I শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য পারিবারিক ও সামাজিকতায় সুসম্পর্ক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বিনোদনের বিষয়গুলো অত্যন্ত অবশ্যক I ধর্মীয় শিক্ষার সাথে নীতি ও আদর্শের অন্তর্নিহিত সম্পর্ক রয়েছে I কেননা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং রীতিনীতির আদলে শৃংখলাবদ্ধ জীবন গড়া সম্ভব I ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা শিশুর মানসিক বিকাশকে নানান ভাবে প্রভাবিত করে I ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ছাড়া শিশুদের মনে সামাজিক মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতার বিশেষ বার্তা পৌঁছে দেওয়া অসম্ভব I উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি শিশু যখন ধর্মীয় শিক্ষায় সুশৃংখলভাবে বেড়ে ওঠে, ঠিক তখন তার নৈতিক শিক্ষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে সহযোগিতা করে I ধর্মীয় শিক্ষা, সততা, নিষ্ঠা, নৈতিকতা ও আদর্শের জায়গা থেকে শিশুদের সৎ, সাহসী, মেধাবী, সুশিক্ষিত, যোগ্য, নিষ্ঠাবান, আদর্শবান দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব I পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ দ্বারা কখনোই সমাজের ক্ষতি হয় না বরং তারা সমাজের মঙ্গলার্থে দায়বদ্ধ থাকে I তাই, ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা শিশুদের মানসিক বিকাশে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ বা সমাজে এর কোন প্রভাব রয়েছে কিনা তা নিয়ে বেশি বেশি গবেষণা করা প্রয়োজনI
শিশুদের শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের মানসিক পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা অবশ্যই লক্ষ্য করা জরুরি I কেননা শারীরিক বিকাশের সাথে মানসিক বিকাশের ভারসাম্য থাকলেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিকশিত হয় I শারীরিক চিকিৎসার মতো মানসিক চিকিৎসা শিশুদের জন্য অপরিহার্য I মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায় শিশুরা সৃজনশীল এবং কোমল মনের অধিকারী হয়ে থাকে I বিশেষজ্ঞ ডাক্তারা মনে করেন, শিশুদের মনে ভয় বা ভীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয় পরিবার থেকে I সন্তানদের বেশি বেশি খাবার খাওয়ানো অথবা যেকোনো কাজে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য ভয় দেখানোটা বাবা মায়ের রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে I এই অভ্যাস শিশুদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন, মানসিক বিকাশ এমনকি আত্মবিশ্বাস তৈরিতে বিঘ্ন ঘটায় I তাই বলা যায় শিশুদের মনে অতিমাত্রায় মানসিক চাপ দেওয়া ভবিষ্যতে পরিবারের কান্নার কারণ হতে পারে I
সামাজিক পরিবেশ, সুসম্পর্ক বজায় রাখা, পারস্পরিক যোগাযোগ ও মেলবন্ধন, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও নৈতিকতা, প্রাথমিক শিক্ষা,পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও বিনোদনের মধ্যে কোন একটির অভাব হলে সামাজিক জীবনে ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করা যায় I তাই শিশু-সন্তানদের দেখভাল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় করা দরকার । তাছাড়া, উঠতি বয়সের শিশুরা সামাজিক যোগাযোগে কতটুকু ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে পারে বা চলার মনমানসিকতা রাখে তার উপর অধিক নজর রাখা প্রয়োজন I শিশুদের স্বাভাবিক চলাফেরা, কথাবার্তা, আচার-আচরণ, চিন্তাভাবনা এবং সুশৃংখল জীবন ব্যবস্থাকে বিকশিত করাই হবে আমাদের মূল উপজীব্য। I তাই সন্তানদের দেখভাল করার সময় বাবা-মাকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে I
আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, প্রতিটি শিশুর অধিকার, স্বাভাবিক বিকাশ, সর্বাত্মক মঙ্গল এবং শিশুদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব I আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা শিশু অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে I যদিও সন্তানের অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশন অন দি রাইটস অফ দি চাইল্ড, ১৯৮৯ অনুচ্ছেদ ২ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে “কোন প্রকার বৈষম্য ছাড়া শিশুর অধিকার গুলোকে যথাযথ সম্মান করা এবং অধিকার আদায় নিশ্চিত করা প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব”I এছাড়াও, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে শিশু বিষয়ক অধিকার আদায় ও এর টেকসই উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নুতন দপ্তর বা অধিদপ্তর গঠনের জন্য “রুট টু রাইটস: চিলড্রেন আর স্পিকিং আপ” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় উল্লেখ্য যে: (১) সামগ্ৰীকভাবে শিশুদের জন্য শিশু-বরাদ্ধ বৃদ্ধি করা। (২) শিশু বৈষম্য রোধে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়া; (৩) শিশুদের মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত এবং বাস্তবায়ন করা; (৪) শিশু অধিকার বিষয়ক সকল সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করা; (৫) সূম্পর্ণ আলাদাভাবে শিশু বিষয়ক দপ্তর বা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা; (৬) শিশু শিক্ষার টেকসই উন্নয়নের জন্য শিশু বরাদ্ধ বৃদ্ধি করা; (৭) শিশুর প্রতি সহিংসতা এড়ানোর জন্য কঠোর আইনী ব্যবস্থা চালু করা; (৮) এছাড়া, প্রান্তিক জনগুষ্ঠীর ক্ষেত্রে শিশুদের অধিকার আদায় ও বাস্তবায়নে সমন্বয় করা। পাশাপাশি, অন্নান্য সুযোগ-সুবিধার বেবস্থা করা। প্রচলিত আইন অনুযায়ী শিশু অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আদালত শিশুদের সর্বাত্মক মঙ্গলের জন্য যে কোন আদেশ দিতে পারেন I উপরন্তু, সরকারিভাবে যেকোনো আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় । এ সকল প্রতিবন্ধকতা থেকে দ্রুত মুক্তিলাভ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক I
কিছু পরামর্শ:
· পিতামাতার আদর, যত্ন, ভালোবাসা প্রতিটি শিশুর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত I পারিবারিক অযত্ন, অবহেলা এবং সঠিক পরিচর্যার অভাবে শিশুরা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না I যা তাদের মানসিক বিকাশে বাধা তৈরি করে I তাই এই বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন I অন্যদিকে, যে শিশুরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে বেড়ে উঠছে তাদের ক্ষেত্রে দায়িত্ববান ব্যক্তিদের আরও বেশি যত্নবান হওয়া উচিত I
· দায়িত্ব ও সতর্কতার সহিত শিশুদের ভালো-মন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া এবং শিশুদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা উচিত I
· পরিবার, স্কুলশিক্ষক, ধর্মীয় শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আরও সচেতন হতে হবে I শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশি বেশি শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক ও মনোজ্ঞ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সময়ের দাবী। যার ফলে শিশুরা সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণে অভ্যস্ত হবে I তাছাড়া, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিক আচার-আচরণ ও ধর্মীয় রীতিনীতি, প্রাথমিক ও নৈতিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একসাথে কাজ করতে হবেI
· শিশুদেরকে নিজেদের কাজ নিজে নিজে করার জন্য উৎসাহ দিতে হবে I পাশাপাশি, শিশুদেরকে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখাতে হবে I শিশুদের চিন্তাশক্তি বিকশিত হলে নিজেরাই নিজেদের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম হবে I ফলস্বরূপ, নিজেরাই একদিন সমাজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে I
· শিশুদেরকে পরিপূর্ণ নারী-পুরুষদ হিসেবে মূল্যায়ন করা উচিত I শিশুদেরকে সৎ, আদর্শবান এবং নীতিবান নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সুশৃংখল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করতে হবে I শিশুদেরকে মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আদর্শবান ব্যক্তিদের আত্মজীবনী বা গল্প জানার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব I
· সাময়িকভাবে শিশুদের মনে যে কোন পরিবর্তন আসতে পারে I কেননা, বড়দের মতো শিশুদেরও মানসিক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে I যা বুঝতে অনেক সময় লেগে যায় I এই ক্ষেত্রে, চিকিৎসকের পরামর্শ করা অবশ্যক I
· শিশুদেরকে নতুন নতুন গল্প বলা, চকলেট উপহার, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া বা খেলাধুলা বা শিক্ষনীয় বিষয় জানতে উদ্বুদ্ধ করলে শিশুরা মানসিকভাবে আনন্দ পায় I শিশুদেরকে কখনোই টাকা, মোবাইল বা ভিডিও গেমসের লোভ দেখানো ঠিক না I এতে শিশুদের ভালোর চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে I মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ, গ্যাজেট ইত্যাদি ব্যবহারে শিশুদের চোখের ক্ষতি হয় । এ সকল যন্ত্রাংশ থেকে বিচ্ছুরিত আলোর বিকিরণের ফলে শিশুদের চোখে নানা প্রকার সংক্রমণ বা গুরুতর মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে I তাই, প্রতিটি বাবা-মাকে এই বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন I
পরিশেষে বলা যায়, শিশুদের মেধা, মনন ও মানবিক প্রবৃদ্ধি বিকাশের জন্য পারিবারিক ও সামাজিক সুসম্পর্কই একমাত্র বিকল্প বেবস্থা I শিশুর মানসিক বিকাশে পারস্পরিক সুসম্পর্ক অধিকতর গুরুত্ব বহন করে I স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে শিশুদের মানসিক বিকাশ অত্যান্ত জরুরী I তাই, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় বলতে হয়, “এই বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার” I এই অঙ্গীকার শুধু কবিদের জন্য নয়, এই অঙ্গীকার হোউক আমাদের সকলের I
লেখক: পি.এইচ.ডি. গবেষক ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী I