বলা হচ্ছে, চার বছরের শিশু বায়েজিদ বার্ধ্যকে নুয়ে পড়েছে। কিন্তু চার বছরের শিশুর যা আছে, তার সব কিছুই রয়েছে মাগুরার শিশু বায়েজিদ শিকদারের মধ্যে।
বায়েজিদকে মাগুরায় দেখেছিলেন সদর হাসপাতালের মেডিসিন কনসালটেন্ট দেবাশীষ বিশ্বাস। তিনি বলেন, প্রোজেরিয়া হলে বয়সের তুলনায় আটগুণ বেশি বয়সী দেখায়।
‘যে শিশুর বয়স চার, তাকে বত্রিশ বছর বয়সী দেখাবে। আর এই রোগের লক্ষণ সাধারণত জন্মের এক মাস পর থেকে শুরু হয়।’ এ সম্পর্কে দেবাশীষ বলেন, ‘ধারণা করছি প্রোজেরিয়া রোগেরই অন্য কোনো জেনেটিক ফর্মের কারণে বায়েজিদের এ অবস্থা। তার জন্য জেনেটিক পরীক্ষা প্রয়োজন, এজন্যই তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
চিকিৎসার জন্য মাগুরার এই শিশু গত শনিবার থেকে ঢাকা মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সঙ্গে আছে তার বাবা লাভলু শিকদার, মা তৃপ্তি খাতুন ও নানা মুসিয়ার মেম্বার।
ঢাকা মেডিকেলের যে কক্ষে বায়েজিদকে রাখা হয়েছে, সেখানে শিশুদের খেলার বলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম রয়েছে। নাম জানতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে নাম বলছে, সঙ্গে বাবা-মার ও গ্রামের নাম, এমনকি থানা ও জেলার নামও বলতে পারে সে।
বায়েজিদের কণ্ঠস্বরেও তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। কয় ভাই-বোন জানতে চাইলে বায়েজিদ উত্তর দেয়- ‘আমি এক। বাড়ি খালিয়া, থানা মোহাম্মদপুর।’
শিশুটির বাবা-মাও বলছেন, সবকিছুই স্বাভাবিক তার। কোনো জড়তা নেই, চঞ্চলতার কমতি নাই। ক্রিকেট ও ফুটবল বায়েজিদের পছন্দ। সন্ধ্যা হলেই ঘুমিয়ে যায়, ঘুম থেকে উঠে সকাল ৭টায়।
বায়েজিদের বাবা রং মিস্ত্রী লাভলু শিকদার বলেন, তার ছেলের জন্ম থেকেই শরীরের চামড়া ঢিলা দেখা যায়।
একটি শিশুর যতটুকু খাবার খায়, বায়েজিদও তাই খায় বলে জানান মা তৃপ্তি খাতুন। ‘বাচ্চাদের যেসব অসুখ হয়- আমার ছেলেরও তাই। গ্রামের দোকান থেকে ওষুধ খাওয়ালেই ভালো হয়ে যায়।’
বাবা লাভলু বলেন, ‘সেতো আমার সন্তান, আমাকে বাবা বলে ডাকে, তাতেই আমি তৃপ্ত। ভাল হোক আর না হোক, আমাদের ভালোবাসার কমতি নাই।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা করে ভালো হলে ভালো লাগবে। কারণ সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।’
বায়েজিদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে ইউনিটের সমম্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান।
তিনি বলেন, ‘কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না, পরীক্ষার ফলাফল এলে পরবর্তীতে তার সম্পর্কে বলা যাবে।’
বিশ্বে ১৪০ জনের মতো প্রোজেরিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু রয়েছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হলে শিশুটি ১০ থেকে ১২ বছর বাঁচে, আর প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে আক্রান্ত হলে ত্রিশ পয়ঁত্রিশ বছর বাঁচে।’