শীতে নাক, কান ও গলায় বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে। সাধারণ হাঁচি-সর্দি থেকে শুরু করে গলার স্বর বসে যাওয়া, সবই রয়েছে এই তালিকায়। শীতের সময়ে লক্ষ্যনীয় কয়েকটি রোগ সম্পর্কে অল্প বিস্তর জেনে নেব।
১. নাকের অ্যালার্জি:
এটি অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ। ধুলাবালি, ঠান্ডা-গরমসহ বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি উদ্রেককারী উপাদান এর কারণ। রোগটি স্থায়ীভাবে নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ওষুধের ব্যবহার ও ঠান্ডা-অ্যালার্জি উদ্রেককারী উপাদান এড়িয়ে চলার মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়।
২. নাক দিয়ে রক্ত পড়া:
অনেক কারণেই নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে পারে। ছোটদের ক্ষেত্রে সাধারণত নাক খোঁটার কারণে নাকে ক্ষত হয়ে রক্তপাত হয়। বড়দের ক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপের কারণে নাক দিয়ে রক্ত ঝরে। শীতে নাকের ভেতরটা শুকিয়ে চামড়া উঠে যায় এবং তখন নাকের ঝিল্লি ছিঁড়ে গিয়ে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
৩. নাকের পলিপ:
সাধারণত দীর্ঘদিন নাকে অ্যালার্জি থাকলে এমনটি হয়ে থাকে। নাকের মধ্যে মিউকাস ঝিল্লিগুলো ফুলে আঙুরের দানার মতো বিভিন্ন আয়তনের হয়ে থাকে। নাকের পলিপে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে সাইনাসের ইনফেকশন হয়ে মাথাব্যথা হতে পারে। এই সমস্যার জন্য অপারেশন করার দরকার পড়ে। সনাতন পদ্ধতির অপারেশনে আবার পলিপ দেখা দেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু আধুনিক এন্ডোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে রোগটি নিরাময়ে প্রভূত সাফল্য এসেছে। প্রাথমিক অবস্থায় স্টেরয়েড স্প্রে ব্যবহার করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। শীতে এ ধরনের সমস্যা একটু বেড়ে যায়।
৪. সাইনাসের ইনফেকশন:
সাধারণত নাকে অ্যালার্জি ও পলিপ, নাকের হাড় বাঁকা ইত্যাদি কারণে নাকের দুই পাশের ম্যাক্সিলারি সাইনাসে ইনফেকশন দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে মাথাব্যথাই মূল উপসর্গ। সাইনাসের একটি এক্সরে করলেই রোগ সম্পর্কে অনেক ধারণা পাওয়া যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ওষুধ ব্যবহার, পরবর্তী সময়ে সাইনাস ওয়াশ এবং শেষ পর্যায়ে এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি করে রোগটি সারানো যায়। শীতে বারবার নাকের মধ্যে প্রদাহ হয়, নাক বন্ধ থাকে বলে সাইনাসের ইনফেকশন সহজেই হতে পারে।
৫. মধ্যকর্ণে প্রদাহ:
এই সমস্যা শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত ঊর্ধ্ব শ্বাসনালির প্রদাহ, টনসিলের ইনফেকশন, এডিনয়েড নামক গুচ্ছ লসিকা গ্রন্থির বৃদ্ধি ইত্যাদি থেকে এই ইনফেকশন হয়ে থাকে। শীতে এ উপসর্গগুলো ব্যাপকভাবে দেখা দেওয়ার কারণে হঠাৎ করেই মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হতে পারে। এই রোগে কানে বেশ ব্যথা হয়, কান বন্ধ মনে হয়। সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা না করলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে রোগটি কানপাকা রোগে রূপ নিতে পারে।
৬. মধ্যকর্ণে পানির মতো তরল জমা:
এই রোগের কারণও উপসর্গ অনেকটা মধ্যকর্ণে প্রদাহের মতোই। তবে উপসর্গগুলোর তীব্রতা অনেক কম থাকে। শীতের সময় শিশুদের ঘনঘন সর্দি লাগে। বারবার সর্দি লাগার কারণে কিংবা এডিনয়েড সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে নাক দিয়ে শ্লেষা ঝরার পরিণতিতে এই রোগ হয়ে থাকে। শীতে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। নাকের পেছনের অংশের সঙ্গে কানের যোগাযোগ রক্ষাকারী নালিটির নাকের প্রান্তবর্তী মুখটি যদি ঠান্ডা-সর্দি কিংবা এডিনয়েডের বৃদ্ধির জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তখন মধ্যকর্ণে তরল পদার্থ জমে যায়। অনেক সময় নালির মুখটি বন্ধ হয়ে ভেতরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তাতে কান বন্ধ মনে হয়। কানের মধ্যে ফরফর শব্দ করে। সাধারণ ওষুধেই এ রোগ সারে। অনেক সময় ছোট্ট অপারেশন করে মধ্যকর্ণে জমে থাকা পানি বের করে দিতে হয়। এডিনয়েড বড় থাকলে শিশুদের ক্ষেত্রে তা অপারেশন করিয়ে নিতে হয়।
৭. এডিনয়েড ও টনসিলের ইনফেকশন:
শীতে গলাব্যথা হয় অনেকেরই। এই গলাব্যথার জন্য মূলত দায়ী হচ্ছে টনসিলের ইনফেকশন। এটি মূলত শিশুদের সমস্যা। বড়দেরও হয়। টনসিলের সমস্যায় গলাব্যথা, খেতে গেলে ব্যথা, সামান্য জ্বর ইত্যাদি থাকে। প্রথমত ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। বারবার হতে থাকলে সম্যক জটিলতা ও কষ্টের কথা বিবেচনা করে টনসিল অপারেশন করিয়ে নিতে হয়। সারা পৃথিবীতে শিশুদের যত অপারেশন হয়, তার মধ্যে টনসিল অপারেশনের অবস্থান সবার শীর্ষে।
নাকের ছিদ্রের পেছন দিকে যে অঞ্চলটি রয়েছে, সেখানে এই এডিনয়েড নামক লসিকা গ্রন্থির অবস্থান। এটি অনেক সময় বড় হয়ে নাক আংশিক বন্ধ করে দেয়, ফলে নাক দিয়ে অধিকাংশ সময়ই সর্দি ঝরে। কানের সঙ্গে নাকের পেছনের অংশের যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউবটির মুখও আংশিকভাবে বন্ধ থাকে। ফলে কানও বন্ধ থাকে। কানের মধ্যে পানির মতো তরল জমে কান ব্যথা করে। এডিনয়েড বড় হলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে জেগে ওঠে। রোগীর চেহারা ক্রমশ হাবাগোবা হয়ে পড়ে। অনেক অভিভাবকই এ সমস্যাটির ফলে সৃষ্ট ক্ষতি অনুধাবন করেন না। ফলে শিশুর অনেক ক্ষতি হয়।
নাক, কান ও গলার এই সাতটি অসুখের ঝামেলা এড়াতে শীত থেকে রক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে শীতবস্ত্র-গলাবন্ধনী, মাথা ঢেকে রাখা, হাত-পায়ে মোজা পরা, ঠান্ডা এড়িয়ে চলতে হবে। সেই সঙ্গে সকালে হাত-মুখ ধোয়ায় এবং গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। আর এত প্রস্তুতির পরও যদি অসুস্থতায় পেয়েই বসে, তখন পরামর্শ নিতে হবে আপনার চিকিৎসকের।
প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,কালীবাড়ী মোড়,চাঁদপুর
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
চাঁদপুর
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২০ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।