মিজানুর রহমান রানা ॥ এম এ আকিব ॥
চলতি বছরের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান (৫ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত) চাঁদপুরের জেলা মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক লোক দেখানো একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে। এ প্রতিবেদনে বিগত ১০ দিনের মূল হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। অবশ্য আজ শেষ দিন। এ দিনের হিসাবটি হয়তো আজ মধ্যরাত ১২টার পরেই মোট ১১ দিনের হিসাব তুলে ধরা হবে। প্রতিবেদনে ৭টি সংস্থা মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে কাজ করেছেন এমনটি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এতো অভিযান সত্ত্বেও চাঁদপুরে মা ইলিশ সংরক্ষণের নামে নিধনের মহাউৎসব ছিলো দেখার মতো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো কোনো বাহিনী মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে জোর তৎপরতা চালিয়েছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ যখন জেলেদের কাছ থেকে মাছ ক্রয় করে বাড়ি ফিরে তাদের কাছ থেকে ব্যাগ টেনে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওই সকল সংস্থার সম্মুখে জেলেরা মাছ বিক্রি করলেও তারা যেন তাৎক্ষণিক ওই এলাকাটিতে উপস্থিত হয়ে ওই দৃশ্যটি অজ্ঞাত কারণে দেখেও না দেখার ভাণ করে চলে আসে। আবার কোনো কোনো সংস্থা নদীতে অভিযান চালিয়ে শত শত জেলেদের মধ্যে থেকে ৫/৭জনকে আটক করে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে হাজির করিয়ে বাহাবা নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জেলে আটক হলেও ওই সকল অভিযানে ইলিশের দৃশ্য ৫/১০ কেজি বেশি নয়। কিন্তু যখনই প্রশ্ন করা হয়, ওইসকল বাহিনী বা সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে তখনই উত্তর আসে মাছ ছিলো না ট্রলারটিতে। কিন্তু একটু জ্ঞান খাটিয়ে জেলেদের সাথে চুপি চুপি কথা বললে শোনা যায় ওইসকল সংস্থার লোকজন কয়েক মণ ইলিশ আটক করেছে। আটককৃত ইলিশমাছগুলো নদী থেকেই হাওয়া হয়ে যায়।
এদিকে ১১ দিনব্যাপী এই অভিযানের গতকাল মঙ্গলবার ছিলো ১০ম দিন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ৫ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এই জেলায় মোট ৫৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এ সকল মোবাইল কোর্টে জেলা টাস্কফোর্স, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা চাঁদপুর সদর দল, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড হাইমচর উপজেলা, মতলব উত্তর উপজেলা, মতলব দক্ষিণ উপজেলা ও বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীসহ মোট ৭টি দল অংশ নেয়। অভিযান হয় ৯৯টি। ১০২টি ঘাটে এরা অবতরণ করে। ২৭৪টি মাছ ঘাট, ৬৯৮টি মাছের আড়ত, ৬৯৮টি বাজার তারা পরিদর্শন করে। উল্লেখিত সংস্থাগুলো বিগত ১০ দিনে ৩.৯৭৭ মে. টন ইলিশ আটক করে। যা প্রায় ৪ মে. টনের মতো। এতে ৩৬.৪৮০ দৈর্ঘ্য কারেন্ট জাল আটক হয়। যার মূল্য ৭ শ’ ২৯ টাকা ৬০ পয়সা। এসকল অভিযানে মোট ১৩৪জন জেলেকে আটক করা হয়। এতে ২ বছর করে ১১জন জেলেকে সাজা দেওয়া হয়। আর ১ বছর করে ৮৮জন জেলেকে সাজা দেওয়া হয়। ৩৫জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে একই দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৩৪জন জেলের মধ্য থেকে ১১৬জন জেলের কাছ থেকে ৩ লাখ ২২ হাজার ৯শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। আর মামলা সংখ্যা দেওয়া হয়েছে ২১৫টি।
এ সকল প্রতিবেদন বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান জানান, এবারের মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম প্রত্যাশিতভাবেই শেষ হয়েছে। যদিও আমরা আরো বেশি প্রত্যাশা করেছি। আমাদের প্রত্যাশা ১শ’ভাগ পূরণ হয়নি জনগণের মধ্যে অসচেতনতার জন্যে। কারণ আমরা যেভাবে চেষ্টা করেছি মা ইলিশ রক্ষা করতে সেভাবে জনগণ ও জেলেরা তাতে অংশগ্রহণ বা আমাদের সহযোগিতা করেনি। অনেক জেলে জানেই না যে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলছে। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধিদের যথেষ্ট আন্তরিকতামূলক কার্যক্রম পেয়েছি। যা আমাদের মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমকে প্রাণবন্ত করেছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আটককৃত জালগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আর ৩৬৩০ কেজি মাছ এতিমখানা ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আর মাত্র ৩৪৭ কেজি কোল্ড স্টোরে রক্ষিত রয়েছে।
সর্বোপরি আজ ১৫ অক্টোবর শেষ হচ্ছে এবারের মৌসুমের প্রধান প্রজনন মৌসুম মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উল্লেখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ জেলাবাসীর বিশ্বাস আগামীতে এ অভিযানটি আরো সফল ও সতর্কভাবে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সফল করবেন।