আগামী সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতেই নতুন প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে : চাঁদপুর সদর-হাইমচর, মতলব উত্তর-দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি ও ফরিদগঞ্জের আসন। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রার্থী নির্ধারণে দলীয়ভাবে এক জরিপ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ জরিপ বাস্তবায়ন হলে চাঁদপুর সদর হাইমচরের আসনে (চাঁদপুর-৩) জিএম ফজলুল হকের পরিবর্তে মনোনয়ন পাবেন চাঁদপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, মতলব উত্তর-দক্ষিণ (চাঁদপুর-২) আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নূরুল হুদার পরিবর্তে ড. জালাল উদ্দিন, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি (চাঁদপুর-৫) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়র মমিনুল হকের পরিবর্তে সাবেক এমপি এম এ মতিন এবং ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর-৪) আসনে বর্তমান এমপি লায়ন হারুনুর রশিদের পরিবর্তে শিল্পপতি এমএ হান্নান।
জানা গেছে, নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি আগামী দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ৩শ’ সংসদীয় আসনে দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ওপর একাধিক জরিপ চালাচ্ছে দলটি। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে শতাধিক আসনে বিগত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি জনপ্রিয় ও যোগ্য নতুন মুখকে সম্ভাব্য বিকল্প প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করছে দলটি। এসব আসনে আরও জরিপসহ অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে কমপে ৪০টি আসনে তুলনামূলক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য নতুন মুখকে মনোনয়ন দেয়া হবে।
জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকায় ‘৪০ আসনে আসছে নতুন মুখ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত খবরে চাঁদপুরে বিএনপির রাজনীতিকে চরমভাবে নাড়া দিয়েছে। চাঁদপুরের ৪টি আসনে নতুন প্রার্থী যারা হচ্ছেন তাদের পরে নেতাদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আনন্দ-উচ্ছ্বাস। বিপরীতে আগামী সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের যে ৪জন প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ার আভাস দেয়া হয়েছে তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে চরম হতাশা।
তবে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে ৪টি আসনে নয়, নতুন মুখ আসতে পারে চাঁদপুরের ৩টি আসনে। তাদের মতে, চাঁদপুর সদর-হাইমচর আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনে ইঞ্জিনিয়র মমিনুল হকের পরিবর্তে সাবেক এমপি এম এ মতিন এবং মতলব উত্তর-দণি আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন ড. জালাল উদ্দিন।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্যে আন্দোল-সংগ্রাম করছে। আপাতত নির্বাচনের চিন্তা আমাদের মাথায় নেই।
চাঁদপুরের ৪টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন এ বিষয়টি নিয়ে ভাবছি না। প্রার্থী নির্ধারণে কোন সংস্থা কী ধরনের জরিপ করছে এ বিষয়টিও আমার জানা নেই। তিনি ওই জরিপকে ‘বোকাজ’ বলেও উল্লেখ করেন।
নামপ্রকাশে অনেচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির অত্যন্ত দুঃসময়ের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন লায়ন হারুনুর রশিদ। তাকে তো দল অবশ্যই মূল্যায়ন করবে। আগামী নির্বাচনে ফরিদগঞ্জ থেকে তিনিতো মনোনয়ন পাবেন এবং তিনি নির্বাচিতও হবেন। আর নির্বাচিত হলে দল তাকে আরো কিছু উপহার দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এদিকে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকা বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, জাতীয় বিএনপি বর্তমানে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে আছে। তারপরও কমবেশি নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকা উচিত। সে প্রস্তুতিটুকু নিতেই মাঠ পর্যায়ে কিছুটা খোঁজখবর নিতে হয়। এটি প্রতিটি নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলই নিয়ে থাকে।
মতাসীন আওয়ামী লীগের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে ভেতরে ভেতরে জরিপসহ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপিও। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে ‘জনপ্রিয়তা’ ও ‘গ্রহণযোগ্যতা’র বিবেচনায় এগিয়ে থাকাদের নাম জরিপ রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রার্থীদের সম্পর্কেও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জরিপ কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি। দেশি ও বিদেশি দুটি বেসরকারি সংস্থাকে একান্ত গোপনে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সূত্র জানায়, আসনভিত্তিক জরিপে নবম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের এলাকায় বর্তমান অবস্থা কেমনথ তা তুলে ধরা হচ্ছে। এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের কাছে ওই নেতার গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে রিপোর্টে তুলে আনা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দলের নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের দলের বর্তমান পদ-পদবির পাশাপাশি বিগত দিনের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডও জরিপ রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থী কে, এ পর্যন্ত ক’বার দলবদল করেছেন, সে বিষয়টিও জরিপে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। জরিপের ভিত্তিতেই জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিবেচনায় শীর্ষে থাকা তিন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম রিপোর্টের ওপরের দিকে থাকবে। তবে অন্য যেসব নেতা মনোনয়ন পেতে আগ্রহী বা আলোচনায় আছেনÑ এমন নেতাদের নামও রিপোর্টে সন্নিবেশিত হবে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগসহ প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতাদের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে জরিপে।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। দলের হাইকমান্ড যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেবে।
তবে বিএনপির অন্য এক নীতিনির্ধারক নেতা বলেন, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আপাতত জরিপ কার্যক্রম অত্যন্ত সঙ্গোপনে চলছে। নির্বাচনের আগে আরও একাধিক জরিপ চালানো হবে। শেষ জরিপ প্রতিবেদনের পর বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই করে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিনটি আসনে নির্বাচনে লড়বেন। এ েেত্র বগুড়া-৬, ফেনী-১ এবং আরেকটি আসন দলীয় প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক হবে। এ ছাড়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তিনটি আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বগুড়া-৭, ঢাকায় একটি এবং সিলেটে একটি আসনে নির্বাচন করতে পারেন তিনি।
বিএনপির জরিপে ৩০০ নির্বাচনী আসনের মধ্যে শতাধিক আসনে বিগত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি সম্ভাব্য বিকল্প প্রার্থী হিসেবে নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে কমপে ৪০ আসনে নতুন মুখ আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাবেন।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১২ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।