সংসারের যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো রয়েছে তার প্রায় সবগুলোর দামই বেড়েছে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে। চাল, ডাল, তেল, আটা থেকে শুরু করে ডিম সবকিছুই রয়েছে মূল্য বৃদ্ধির তালিকায়। শুধু ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। এছাড়া প্রতি বছর শীতকালীন সবজির দাম যতটা কমে এবার তা হয়নি। সব মিলিয়ে হতাশ স্বল্প আয়ের মানুষ। সীমিত আয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
শুক্রবার রাজধানীর শান্তিতনগর বাজার, মহাখালী ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সরু চাল নাজিরশাইল, মিনিকেট, মাঝারি মানের চাল পাইজাম, লতা, খোলা সয়াবিন তেল, প্যাকেট আটা, মসুর ডাল, মুগ ডাল, ডিম ও আদার দাম বাড়তি।
চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীরা মিলারদের দায়ী করলেও মিলাররা বলেছেন, তারা দাম বাড়াচ্ছে না। তাহলে চালের দাম বাড়াচ্ছে কারা? বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬২ থেকে ৭৫ টাকা ও মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫২ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে তা যথাক্রমে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা ও ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে মোটা চালের দাম বাড়েনি। গতকাল বাজারে মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। তাহলে এখন কেন চালের দাম বাড়ছে, এ প্রশ্ন ভোক্তাদের? পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মিল পর্যায়ের চালের দাম বেড়েছে। তবে চালের দাম বাড়ার সঙ্গে মিল মালিকরা আদৌ দায়ী নন বলে দাবি করে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ।
গত এক সপ্তাহে চালের পাশাপাশি প্যাকেট আটার দাম কেজিতে বেড়েছে তিন টাকা। সপ্তাহের শুরুতে প্রতি কেজি প্যাকেট আটা ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও সপ্তাহ শেষে তা ৪২ থেকে ৪৮ টাকায় উঠেছে। মসুর ডালের কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে পাঁচ টাকা। গতকাল বাজারে বড়দানা মসুর ডাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, মাঝারিদানা মসুর ডাল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ও ছোটদানা মসুর ডাল ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে তা যথাক্রমে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা, ৯৭ থেকে ১০০ টাকা ও ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্হা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)র হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে বড়দানা মসুর ডাল ৩৭ দমমিক ০৪ শতাংশ, মাঝারিদানা মসুর ডাল ২০ দমমিক ৫৯ শতাংশ ও ছোটদানা মসুর ডাল ৯ দমমিক ৫২ শতাংশ দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে মুগ ডালেরও। প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। টিসিবির হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে মুগ ডালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়।
এছাড়া প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। মাঝে ডিমের দাম কমলেও হঠাত্ করেই পণ্যটির দাম আবার বাড়তি। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ফার্মের লাল ডিমে তিন থেকে চার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায়। আর এক বছরের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। ডিমের দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে ১০ টাকা কমে গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। তবে এই দাম গত এক বছরের ব্যবধানে ৩৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি বলে টিসিবি তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে। এদিকে প্রতি বছর শীত মৌসুমে সবজির দাম বেশ কম থাকলেও এবার সেভাবে কমেনি।
গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে শালগম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বরবটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বীচিসহ শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বীচি ছাড়া শিম ৪০ টাকা, নতুন আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, টম্যাটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, করল্লা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে প্রতিটি ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ইত্তেফাক