প্রতিনিধি
সমবায় সমিতি আইন (সংশোধিত)-২০১৩ প্রণীত হওয়ার পর সমবায় সমিতির কার্যক্রম একটা কাঠামোর মধ্যে চলে এসেছে। এ আইন করার পর এখন আর কোনো সমিতি ব্যাংকিং কার্যক্রম করতে পারে না। আগে আইনি কোনো বিধি নিষেধ না থাকায় কোনো কোনো সমিতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতো। কিন্তু সরকার ২০১৩ সালে আইন করে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। এখন যা আছে তা শুধুমাত্র সমিতির সদস্যদের মধ্যে ঋণ কার্যক্রম। তাছাড়া সরকার এখন মাল্টিপারপাস তথা বহুমুখী সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার এখন উৎপাদনমুখী সমবায় সমিতির দিকে জোর দিচ্ছে। এর জন্যে যদি কেউ আবেদন করে তাহলে সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন সাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। এ ছাড়া এখন সব ধরনের সমিতির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এটি এ বছরের আগস্ট থেকে বন্ধ। আবার চালু হলে যারা সমিতির জন্যে আবেদন করবেন তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর রেজিস্ট্রেশন দেয়া হবে। কারণ, প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেকে সমিতির কার্যক্রম উল্টাপাল্টা চালাতে গিয়ে তা অকার্যকর অবস্থায় নিয়ে যায়। এ কারণেই অতীতে অনেক মাল্টিপারপাস বন্ধ হয়ে গেছে আবার অনেক উধাও হয়ে গেছে। তবে এ বদনাম ঋণদান সংক্রান্ত সমিতির ক্ষেত্রে। উৎপাদনমুখী কোনো সমবায় সমিতির বেলায় এ ধরনের বদনাম নেই। এ জন্য সরকার উৎপাদনমুখী সমবায় সমিতির জন্যে উৎসাহিত করছে আর ঋণদান সংক্রান্ত সমিতির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে। সমবায় সমিতিগুলো সরকারের নীতিমালা এবং আইন মেনে চললে অবশ্যই সফলতার মুখ দেখবে।
সমবায় সমিতির ব্যাপারে সরকারের প্রণীত নানা পদক্ষেপ, সমিতিগুলোর বর্তমান অবস্থা এবং নানা আশাব্যাঞ্জক সফলতাসহ উপরোক্ত তথ্যাদি জানালেন চাঁদপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা শেখ কামাল হোসেন। এ কর্মকর্তা চাঁদপুরে যোগদান করেন গত এপ্রিল মাসে। চাঁদপুরে তাঁর কার্যকাল মাত্র ছয় মাস চলছে। এর আগে তিনি নোয়াখালী জেলায় একই দায়িত্বে ছিলেন।
চাঁদপুরে গত বছরের দিকে বেশ কিছু মাল্টিপারপাস উধাও হয়ে যায় আবার কিছু মুখ থুবড়ে পড়ে। এ বছরের শুরুর দিকেও কয়েকটি মাল্টিপারপাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জে বেশ কয়েকটি মাল্টিপারপাস গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকার মূলধন নিয়ে রাতের আঁধারে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে প্রশাসনের ত্বরিৎ হস্তক্ষেপে উধাও হয়ে যাওয়া কয়েকটি সমিতির কর্তা ব্যক্তিকে খবর দিয়ে এনে বাধ্য করা হয় গ্রাহকদের মূলধন ফেরৎ দিতে। ওই কয়েকটি ঘটনার পর জেলার অন্য সমিতিগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হয় এবং বেকায়দায় পড়ে যায়।
চাঁদপুরে সমবায় সমিতির কার্যক্রম কেমন চলছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা জানান, এ জেলায় প্রায় তিন হাজারের মতো সমবায় সমিতি রয়েছে। তবে ২০১১ সালের মে থেকে মাল্টিপারপাস তথা বহুমুখী সমবায় সমিতির নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আর এ বছরের আগস্ট থেকে সব ধরনের সমিতির নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আবার নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হলে যারা আবেদন করবেন তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিবন্ধন দেয়া হবে। তিনি আরো জানান, সমিতির মধ্যে যেসব সমিতি ঋণ কার্যক্রম চালায় তাদের মধ্যে যারা নিয়ম না মেনে কার্যক্রম চালায় তারাই সমস্যার মধ্যে পড়ে। সেগুলোই একটা সময় অকার্যকর হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আমি এ জেলায় যোগদান করার পর প্রায় একশ’টি অকার্যকর সমিতি বাতিল করে দিয়েছি। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। উৎপাদনমুখী সমবায় সমিতি যেমন মৎস্য চাষ, দুগ্ধ উৎপাদন, কৃষি, কুটির শিল্প, হস্তশিল্প ইত্যাদির ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই। এগুলো ভালোভাবেই চলছে। আসলে কথা হচ্ছে আইন না মানা, স্বেচ্ছাচারিতা, উচ্চাভিলাষী চিন্তা, অবাস্তব প্রকল্প গ্রহণ করা, মাত্রাতিরিক্ত সুদ দেয়া এসব কারণে সমিতিগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং কোনো কোনোটি উধাও হয়ে যায়। তবে তিনি এও বলেন, অনেক সমিতির টাকা তো ফিল্ডে আটকা আছে, গ্রাহকরা দিচ্ছে না। এ ব্যাপারেও আমাদের সহযোগিতা করা দরকার। এ কর্মকর্তা আরো জানান, জেলা সমবায় অফিসের ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ ইউনিট রয়েছে। জেলা কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রত্যেক উপজেলায় সমবায়ীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যাতে সকলে সমবায়ের আইন সম্পর্কে জানে এবং আইন মেনে চলে। তিনি জানান, এখন আর কোনো সমিতির শাখা অফিস নেই। যাতে সঠিকভাবে তদারকি করা যায় সে জন্য অধিদপ্তর শাখা অফিস কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি আগামী ১ নভেম্বর ৪৩তম জাতীয় সমবায় দিবস ভালোভাবে উদযাপনবে চাঁদপুরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন।