আধুনিক বিজ্ঞানের যূগে টেকনোলজি নির্ভর বিশ্বে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও গ্রাজুয়েট হেলথ টেকনোলজিস্টগন হতে পারে সরকারের রাজস্ব খাত ও রেমিটেন্সের অন্যতম উৎস। বেসরকারি হাসপাতালের আয়ের একটি অন্যতম প্রধান উৎস হলো ল্যাবরেটরি/প্যাথোলজি বিভাগ যা ২৪ ঘন্টা বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চালু থাকলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে মাত্র ৬ ঘন্টা চালু থাকে। যার ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিশাল একটি রাজস্ব আয়ের উৎস থেকে।পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতে ২৪ ঘন্টা রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা থাকলে অপেক্ষাকৃত কম টাকায় উত্তম সেবা পেত এবং দেশের সর্বস্তরের জনগন মুক্তি পেত দালাল চক্রের করাল গ্রাস থেকে। বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগ নির্ণয় করানোর জন্য সরকারি হাসপাতালে অবস্থান করে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।যারা সরকারি ডাক্তার,নার্স,ওয়ার্ডবয় ও ক্লিনারদের সাথে যোগসূত্র তৈরি করে।হাসপাতালে রোগী দেখার পর চিকিৎসকরা সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেন বিভিন্নধরনের প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি টেস্ট, যেগুলো করে থাকেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টগন কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেহেতু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সংকট রয়েছে আবার সঠিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতির সুযোগে একটি চক্র সেটিকে কাজে লাগিয়ে গরীব ও অসহায় লোকদেরকে এক প্রকার জিম্মি করে
দুই-তিন গুন মুনাফা হাতিয়ে নেয়।এই সকল দালাল চক্রের হাতে যে চিকিৎসা খাত বন্দি তা প্রায় সকলেই অবগত।অতিরিক্ত আয়ের আশায় কিছু অসাধু চিকিৎসকও এ সকল দালালদের সাথে কমিশন বানিজ্যে জড়িত থাকে। ফলশ্রুতিতে সরকার যেমন বঞ্চিত হয় রাজস্ব অর্জন থেকে তেমনিভাবে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয় গরীব ও অসহায় মানুষদেরকে।শুধু স্বল্প সময়ে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য এ জাতীয় চক্রের কাছে ভুক্তভোগীদের আত্নসমর্পণের ঘটনা ঘটছে।দেশের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার ও নার্সদের ২৪ ঘন্টা ডিউটির ব্যবস্থা থাকলেও ল্যাবরেটরি বিভাগ চালু থাকে কেবল সকাল ৮.৩০ টা থেকে ২.৩০ টা পর্যন্ত আবার কোন কোন যায়গায় দুপুর ২ টার পর আর পাওয়া যায় না সংশ্লিষ্ট কাউকে। ফলে অভিযোগ রয়েছে যে, টেস্ট স্যাম্পল দিতে গিয়ে সকাল বেলা থেকে বিশাল লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সারাদিন অপেক্ষা করে টেস্ট স্যাম্পল জমা দিলেও আবার পরেরদিন চলে যায় রেজাল্ট সংগ্রহের জন্য যেখানে ভুল রিপোর্টসহ নানা প্রকার অব্যবস্থাপনার অভিযোগ যেন নিত্যকার ঘটনা।যেখানে একটি সাধারণ টেস্ট রেজাল্ট পেতে সময় লাগে ২ দিন সেখানে দিনটি যদি হয় শুক্রবার তাহলে সেই টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৩ দিন। এই সুযোগটিকে কাজে লাগায় সুযোগ সন্ধানী দালাল চক্র।বিশ্বের অন্যান্য দেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সেদিক বিবেচনা করে যদি অনুকূল পরিবেশ দেয়া যেত তাহলে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা দেশের বাহিরে কর্মসংস্থান করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতো।কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ তাদের পেশাভিত্তিক কাউন্সিলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রেরণ করে রেমিটেন্স খাত সমৃদ্ধ করলেও কেবল একটি কাউন্সিলের অভাবে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা বাহিরে যেতে পারছে না।কেউ কেউ দেশের বাহিরে গেলেও রেজিস্ট্রেশনের অভাবে কাজের পারমিশন না পাওয়াসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে মেডিকেল টেকনোলজিতে পি এইচ ডি ডিগ্রি চালু সহ গবেষণা খাতকে সমৃদ্ধির মাধ্যমে যেভাবে বিভিন্ন বিশ্ব সংস্থার ফান্ডিং অর্জনসহ আবিষ্কারের নব নব দ্বার উন্মোচন করছে সেখানে একযূগেও গ্রাজুয়েট হেলথ টেকনোলজিস্টদের জন্য কোন সুযোগ তৈরি হয় নি।তাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি কোন পদ বেসরকারি খাতেও নেই নিজেদের মেধাকে প্রমাণ করার সুযোগ।যার ফলে দিন দিন বাড়ছে ভুল রিপোর্ট প্রদান সহ পরীক্ষা নিরীক্ষায় ব্যাপক ভোগান্তি।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি মেডিকেল টেকনোলজিতে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা মেডিকেল ল্যাবরেটরি সাইন্টিফিক অফিসার হিসেবে কাজ করলেও বাংলাদেশে এখনো উক্ত গ্রাজুয়েটদের জন্য কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।এক যূগ ধরে চালু থাকা হেলথ টেকনোলজি কোর্সটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বি এস সি ইন মেডিকেল টেকনোলজি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হয় বি এস সি ইন হেলথ টেকনোলজি হিসেবে।যার ফলে বহিঃর্বিশ্বে ও যেতে পারছে না এই সকল গ্রাজুয়েটগণ।ফলশ্রুতিতে সঠিক ক্যারিয়ার প্লান তৈরি না হওয়া ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সরকার যেমন বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আয় থেকে তেমনি দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে সঠিক রোগ নির্ণয় থেকে।সুচিকিৎসার পূর্বশর্ত যদি সঠিক রোগ নির্ণয় হয়ে থাকে তাহলে উক্ত সেক্টরটিকে অত্যাধুনিকভাবে জনগনের হাতের নাগালে নিয়ে আসতে হবে।যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে কেবল ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি শাখা থেকেই নিজস্ব আয়ে রাজস্ব খাত সমৃদ্ধশালী করা সম্ভব।একই সাথে প্রতি বছর হাজার হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল ল্যাবরেটরি সাইন্টিফিক অফিসারদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেয়া সম্ভব তাদের অর্জিত রাজস্বে।আর রেমিটেন্স খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে গ্রাজুয়েট হেলথ টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের বিদেশে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ করে সরকার সক্ষম হলে উক্ত টেকনোলজিস্টগনই হতে পারে সরকারের রেমিটেন্সের একটি অন্যতম মাধ্যম।পাশাপাশি কেবল সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য লন্ডন, সিঙ্গাপুরসহ বিদেশ যাওয়া থেকেও ফেরানো যাবে জনগনকে।ফলে দেশের টাকা দেশেই থাকবে এবং দেশও উন্নত হবে।