সামনে চরম আবহাওয়া এল-নিনো শুরু
শক্তিশালী হওয়ার ঝুঁকি ৫৬ শতাংশ খরা-বন্যা বাড়ার আশঙ্কা
পূর্বাভাস অনুযায়ী এল-নিনো জলবায়ু পরিস্থিতি শুরু হয়ে গেছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্র এবং বায়ুম-ল বিষয়ক প্রশাসনের (এনওএএ) বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে চরম আবহাওয়া এবং তাপমাত্রার রেকর্ড বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে। খবর এএফপির।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রার চেয়ে মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় প্যাসিফিক মহাসাগরের তাপমাত্রা বেশি হয়ে আছে। এর আগে ২০১৮-১৯ সালে এই পরিস্থিতি দেখা যায়। গড়ে প্রতি দুই থেকে সাত বছরের মধ্যে এ ধরনের এল-নিনো পরিস্থিতি ঘটে থাকে।
এনওএএ-এর জলবায়ু বিজ্ঞানী মিশেল লরিয়েক্স বলেন, শক্তির ওপর নির্ভর করে এল-নিনো নানা প্রভাবের সৃষ্টি করতে পারে। যেমন ভারি বৃষ্টিপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়, সারা বিশে^র নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় খরা বেড়ে যায়।
‘এল-নিনোসংক্রান্ত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে কিংবা প্রশমিতও হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা
যায়, এল-নিনোর ফলে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে সেসব এলাকায় যেখানে আগে থেকেই এল-নিনোর সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থেকেছে’, বলেন লরিয়েক্স।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সতর্ক করে বলেছে, এল-নিনোর কারণে আরও গরম ও খরার দিন বাড়তে পারে। তা থেকে বাড়তে পারে দাবানলও। এদিকে জাপান বলেছে, এল-নিনো তৈরি হওয়ার জন্য আংশিকভাবে দায়ী তাদের এযাবতকালের সবচেয়ে উষ্ণ বসন্ত।
সবচেয়ে বেশি গরম বছরগুলোর রেকর্ড এল-নিনোর সময়ে। আর বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এ বছর কিংবা আগামী বছরের গ্রীষ্ম স্থলভাগ এবং সমুদ্র বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড গড়তে পারে।
দাতব্য প্রতিষ্ঠান ক্রিশ্চিয়ান এইড মারিয়ানা পাওলি বলেন, জীবাশ্ম জ¦ালানি পোড়ার কারণে খরা, বন্যা এবং ঝড় বেড়ে ইতোমধ্যে দরিদ্র মানুষ কিনারে পৌঁছেছে আর এখন এল-নিনোর প্রভাবে তাদের তীব্র তাপমাত্রার মুখোমুখি হতে হবে। এসব মানুষই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বাজে শিকার কিন্তু তাদের বাঁচাতে সামান্যই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এনওএএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর এল-নিনোর প্রভাব দুর্বল হলেও শরতের শুরু থেকে বসন্তের মধ্যে আরও তীব্র প্রভাব দেখা যাবে। আগামী শীত নাগাদ এল-নিনো সহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা ৮৪ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি এল-নিনো শক্তিশালীতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি আছে ৫৬ শতাংশ। এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আর্দ্রতা থাকতে পারে। আবার অন্য কিছু এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শুষ্ক হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে বেশি হতে পারে।
এল-নিনোর কারণে গত মাসে এনওএএ-কে তাদের হারিকেন পূর্বাভাস পরিবর্তন করতে হয়েছে। এল-নিনো আটলান্টিকের ঘূর্ণিঝড় দমন করে রাখলেও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে এটি ঘূর্ণিঝড় জোরালো করে তোলে।
উল্লেখ্য, স্প্যানিশ শব্দ ‘এল-নিনো’র অর্থ ‘লিটল বয়’ বা ‘ছোট ছেলে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ হয়ে উঠলে তাকে এল-নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’, যার অর্থ ‘লিটল গার্ল’ বা ‘ছোট মেয়ে’। একই এলাকা স্বাভাবিকের চেয়ে ঠা-া হয়ে উঠলে তখন সেই পরিস্থিতিকে লা-নিনা বলা হয়।