খুলনা অফিস জানায়, খুলনা অঞ্চলে বিদু্যতের লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। হঠাৎ করে গত তিন দিন ধরে লোডশেডিংয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে খুলনাবাসী। দিনের পাশাপাশি গভীর রাতেও বিদু্যতের লুকোচুরি খেলা চলছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) এক দিনে ১৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, হঠাৎ করে গ্যাস ও ডিজেলের সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
খুলনা সরকারি বিএল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির সাফিন বলেন, দিনে-রাতে কয়েক দফা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিশেষ করে রাতে পড়ার সময়ে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এতে লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে। এতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। আর ভ্যাঁপসা গরমে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পল্লী বিদু্যতের গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ। গ্যাস ঘাটতির কারণে উত্পাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। খুলনা জেলায় পল্লী বিদু্যতের জন্য প্রতিদিন ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে ঘাটতি রয়েছে ১৫ মেগাওয়াট। মাঝেমধ্যে ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে।
ওজোপাডিকোর ব্যবস্হাপনা পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, বিদু্যতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমেছে। গত তিন দিন এমন চলছে। এটা শুধু খুলনাতেই নয়, সারা দেশেই হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্যাস এবং ডিজেলের সংকটের কারণে বিদ্যুতের সরবরাহ কমেছে। তবে দ্রুত এই অবস্হার অবসান ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, লোডশেডিংয়ে জেলার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কলকারখানায় উত্পাদন হ্রাস পাচ্ছে। নেসকো সিরাজগঞ্জ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রউফ জানান, গ্যাসসংকট সৃষ্টির কারণে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উত্পাদন কমে যাওয়ায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সংকটে বিদু্যত্ উত্পাদন কমে যাওয়ায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ের কবলে সর্বত্র স্হবিরতা নেমে এসেছে। নোয়াখালীর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (আরইবি) কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পল্লী বিদু্যতের গ্রাহকের সংখ্যা ৫৭ হাজার। এর চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন পিক আওয়ারে ১৬ মেগাওয়াট বিদু্যতের প্রয়োজন। সেখানে আমরা পাচ্ছি মাত্র ৮-৯ মেগাওয়াট বিদু্যত্। বসুরহাট বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের (পিডিবি) আবাসিক প্রকৌশলী (আরই) সোলাইমান জানান, পিডিবির গ্রাহক সংখ্যা ২৩ হাজার। চাহিদা অনুপাতে সাত মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্হলে আমরা পাচ্ছি এর অর্ধেক সাড়ে তিন মেগাওয়াট।
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলাবাসী ভয়াবহ বিদু্যত্বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গত দুই সপ্তাহ যাবত্ ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে প্রচণ্ড দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দিনে ১০-১৫ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছে এসএসসি, দাখিল ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীগণ। বিদু্যতের আসা-যাওয়া এবং লোডশেডিংয়ের কারণে বাড়িঘরের ইলেকট্রনিক পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। নাঙ্গলকোট জোনাল অফিস ডিজিএম নীল মাধব বণিক বলেন, চাহিদার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেক কম হওয়ার কারণে ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বার বার পরামর্শ চেয়ে সঠিক কোনো সমাধান পাচ্ছি না।
চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চন্দনাইশে পল্লী বিদু্যতের প্রায় ৬৮ হাজার গ্রাহক বেকায়দায় পড়েছেন। গত কয়েক দিন ধরে পল্লী বিদু্যতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ অস্হির হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে চন্দনাইশ পল্লী বিদু্যতের জোনাল অফিসের এজিএম হূদয় হোসেন বলেন, চন্দনাইশে পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র সাত/আট মেগাওয়াট। দোহাজারী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী আরাফাত হোসাইন বলেন, দোহাজারী পিডিবি আওতাধীন এলাকায় চাহিদা অনুসারে পাঁচ মেগাওয়াটের স্হলে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে দুই মেগাওয়াট। ফলে এলাকায় সম্প্রতি লোডশেডিং চলছে।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রাহকরা বিদু্যত্ পাচ্ছেন ১০-১২ ঘণ্টা। ফলে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা। উপজেলা নাজিম খান ইউনিয়নের মনিডাকুয়া গ্রামের ছাত্রী আশেকা খতুন নুরী বলেন, সোমবার থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা বিদুত্ থাকছে না। প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তিতে পড়ছে শহর থেকে গ্রামের লোকজন। ডাংরার হাটের তরুণ ব্যবসায়ী মশিউর রহমান জানান, গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ধরনের মালমাল নষ্ট হয়েছে। কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদু্যত্ সমিতির এজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকট থাকায় বিদু্যতের লোডশেডিং হচ্ছে।