সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সিলেট নগরের নদী তীরবর্তী এলাকায়ও পানি ঢুকে পড়েছে। ভাসছে নগরীর সুরমা তীরবর্তী অঞ্চল। এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যায় অসহায় হয়ে পড়েছেন মানুষ। খাবার, বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাহাকার। পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে সিলেট নগরীতে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ শুরু করে। সুরমার সাথে সংযুক্ত ছড়া ও খাল দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ শুরু হয়। কয়েকটি স্থানে নদীর তীর উপচে পানি ঢোকে নগরীতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নগরীর উপশহর, তেরতন, সাদারপাড়া, কুশিঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, তালতলা, জামতলা, ঘাসিটুলাসহ সুরমা তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। আগামী ১৯ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। অফিসগামী ব্যক্তিরা সকালে মারাত্মক বিপাকে পড়ছেন। ১০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিয়ে অনেকে রিকশায় করে কোনোরকম পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তা পার হচ্ছেন। অনেকে আবার ভিজে অফিসে গিয়ে কাপড় পরিবর্তন করছেন।
বন্যা কবলিত এলাকার বাসা-বাড়ির পানির রিজার্ভ ট্যাংক তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিতদের জন্য নগরীতে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে সিটি করপোরেশন। সিলেট নগরীর পাশাপাশি সদর উপজেলার জালালাবাদ, কান্দিগাঁও, টুকেরবাজার ও খাদিমনগর ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে এসব এলাকার মাছের খামার।
এদিকে, সিলেট নগর ছাড়াও জেলার বন্যা আক্রান্ত পাঁচ উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে নদীর পানি কিছুটা কমলেও বিকেল ৩টার পর থেকে ফের বাড়া শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে যথাক্রমে বিপৎসীমার ৯৫ ও ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া আমলসীদ, শেওলা ও শেরপুর পয়েন্টেও পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া লোভা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে।
সারি ও পিয়াইন নদীর পানি বেড়ে জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ৯০ ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। দ্বিতীয় দফা বন্যায় দিনমজুর ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে চলছে হাহাকার। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার সবকিছু তলিয়ে গেছে পানিতে। উপজেলার সকল সড়ক ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে।
কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। ধলাই নদীর পানি ঢুকে পুরো উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। আগেরবার বন্যায় সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে পানি না উঠলেও এবার তলিয়ে গেছে। মহাসড়কের উপরে কোথাও এক ফুট, আবার কোথাও তার চেয়ে বেশি পানি উঠেছে। বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে শত শত পাথর ভাঙ্গার মেশিন। বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।
জৈন্তাপুর উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সিলেট-তামাবিল সড়ক ছাড়া বাকি সকল সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। সারি ও পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ৬০ শতাংশের বেশি এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। সুরমা ও লোভা নদীর পানি বাড়ায় কানাইঘাট উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।