বিমল চৌধুরী
সুদিনের সঞ্চয় দুর্দিনের সহায় এ কথাটির প্রতি লক্ষ রেখে ধনী-দরিদ্র সকল মানুষই কিছু না কিছু সঞ্চয় করতে উদ্যোগী হয়। আর এ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রও একেক মানুষের একের রকম। কেউ জায়গা জমির মাধ্যমে, আবার কেউ ব্যাংক বা অন্য কোনো উপায়ে সঞ্চয় করে থাকেন। তবে যে উপায়েই সঞ্চয় করে থাকেন না কেন, সকলেই তাদের সঞ্চয়ের নিরাপত্তা খুঁজে পেতে চেষ্টা করেন। আমাদের দেশে অধিক আর্থিক নিরাপত্তা সম্পন্ন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর থাকা সত্ত্বেও অধিক লাভের আশায় অনেকেই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বিভিন্ন এনজিওসহ আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় চটকদার বিজ্ঞাপন ও প্রচার প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়ে এ সকল প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রাখার জন্যে উৎসাহী হয়ে উঠেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিভিন্নভাবে প্রতারিত হয়ে তাদের মাঝে সম্বিৎ ফিরে আসে। এই সম্বিৎ ফিরে আসা ব্যক্তি ও সঞ্চয়কারীগণ বর্তমান সময়ে অধিকভাবে জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা জমা রাখার জন্যে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। এর প্রেক্ষিতে বর্তমানে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরে আমানতকারীর সংখ্যা। কিন্তু এই আমানতকারীদের আর্থিক লেনদেন করতে হয় ঝুঁকির মধ্য দিয়ে। এমনই একটি চিত্র ফুটে উঠেছে চাঁদপুর জেলা জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের অফিসে।
চাঁদপুর শহরের চাঁদপুর সরকারি কলেজ গেটের উত্তর পাশে একটি ভবনে জেলা সঞ্চয় পরিদপ্তরের অফিস অবস্থিত। প্রায় ৪০ বছর ধরে এ স্থানে থাকা অফিসটি সকলের কাছে ভীষণ পরিচিত। বর্তমান সময় ভগ্ন অবস্থায় থাকায় ২টি কক্ষের ১টি কক্ষে চলে আসছে এর কার্যক্রম। গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫ হাজারের মত। সহকারী পরিচালকের ১টি পদ থাকলেও প্রায় ১০ মাস যাবৎ তা রয়েছে শূন্য। বর্তমানে সেভিংস অফিসার নজির আহমেদ, স্টাফ মফিজুর রহমান ও এমএলএসএস আক্তার হোসেন এই বিশাল গ্রাহকের মাঝে সেবা দিয়ে আসছেন। প্রতিদিনই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থাকে গ্রাহকের প্রচণ্ড ভিড়। আর এ ভিড় যতই থাকুক না কেন, তা হয়তো গ্রাহকগণ নিজেদের প্রয়োজনে মানিয়ে নিতে পারলেও গ্রাহকদের টাকা লেনদেন বিরাট সমস্যা ও ঝুঁকির মধ্যে করতে হচ্ছে। কোনো গ্রাহক যদি টাকা জমা রাখার জন্যে জেলা সঞ্চয় পরিদপ্তরে আসেন তাহলে তাকে এখান থেকে জমা সস্নিপ কেটে সোনালী ব্যাংকের চাঁদপুর ট্রেজারী শাখায় যেতে হয়। ঐখানে টাকা জমা দিয়ে পুনরায় এ অফিসে এসে বাকি কাজ সারতে হয়। আবার গ্রাহকদের টাকা তুলবার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মানতে হয়। এই তোলা ও জমার জন্য আমানতকারীকে প্রতি বার ব্যাংক ও জেলা সঞ্চয় অফিসে বাধ্যতামূলকভাবে যাতায়াত করতে হয়। টাকা নিয়ে এই আসা-যাওয়ার মাঝে থাকে গ্রাহকদের জীবনের ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা। শহরের সোনালী ব্যাংকের ট্রেজ্রারী শাখা হতে জেলা সঞ্চয় পরিদপ্তরের অফিসের দূরত্ব পায়ে হাঁটা পথে ১০ মিনিট। এই ১০ মিনিটের রাস্তায় ঘটে যেতে পারে যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। যে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরে আসা সেই নিরাপত্তা যদি অর্থ রাখার আগেই আমানতকারীদের ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে আমানতকারীগণ নিরুৎসাহিত হবে এবং বাধাগ্রস্ত হবে সরকারের সঞ্চয় কার্যক্রম। সঞ্চয় যত বাড়বে দেশের সমৃদ্ধিও ততো বৃদ্ধি পাবে। তাই দেশের সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে জেলা সঞ্চয় পরিদপ্তরের সঞ্চয় প্রকল্প সমূহের গ্রাহকদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষে জেলা অফিসটি ট্রেজারী ব্যাংকের শাখায় স্থানান্তরিত করা আবশ্যক হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই চাঁদপুর সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারী শাখা ভূতপূর্ব চিত্রলেখা সিনেমা হলের স্থানে নব নির্মিত মোজাম্মেল প্লাজায় বিশাল পরিসরে স্থানান্তরিত হবে। যদি এই ভবনে জেলা সঞ্চয় পরিদপ্তরের অফিস স্থানান্তরিত করা হয় তাহলে আমানতকারীদের আর্থিক লেনদেনের ঝুঁকি যেমন কমবে তেমনিভাবে বাড়বে আমানতকারীদের সংখ্যা। ভবিষ্যৎ সুখ-নিরাপত্তার আশায় এখন অনেক আমানতকারীই মাসিক বা ত্রৈমাসিক বিভিন্ন প্রকল্প সমূহে সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাই এ সকল আমানতকারীর যদি একই ছাদের নিচে আনা যায় তাহলে সময় যেমন বাঁচবে তেমনি তাদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কাও দূর হবে। ঢাকা সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, ঢাকা সদর ঘাটের বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়, চট্টগ্রাম বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়, সিলেট বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়, কুমিল্লা সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়ে জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর কাজ করে আসছে। ফলে জাতীয় সঞ্চয় কার্যক্রম অধিকভাবে বিসত্দার লাভ করতে সৰম হচ্ছে। চাঁদপুর জেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে জাতীয় সঞ্চয় কার্যক্রম জোরালোভাবে গড়ে তোলার লক্ষে জেলা সঞ্চয় পরিদপ্তরের অফিসকে অতি সত্বর চাঁদপুর সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারী শাখায় স্থানান্তর জরুরি বলে আমানতকারীগণ মনে করেন। যদি তা করা হয় তাহলে সঞ্চয় পরিদপ্তরে আমানতকারীদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। পূর্বে উপজেলা ভিত্তিক জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থাকলেও বর্তমান সময়ে তা না থাকায় গ্রাম-গঞ্জ, উপজেলা পর্যায়ের সকল শ্রেণী পেশার মানুষই নিরাপদ সঞ্চয়ের আশায় এখন চাঁদপুর জেলা জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরমুখী হওয়ায় আমানতকারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারী শাখায় উক্ত অফিসটি স্থানানত্দর করা আবশ্যক।
এ ব্যাপারে আলাপ হয় চাঁদপুর জেলা সঞ্চয় বু্যরোর সেভিংস অফিসার নজির আহমেদের সাথে। তিনি জানান, গ্রামীণ সঞ্চয় সমৃদ্ধ করতে হলে, সঞ্চয় বু্যরোকে গ্রামীণ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। গ্রামীণ মানুষের মাঝে সঞ্চয় পত্রের উপকারিতা তুলে ধরতে হবে। তিনি আমানতকারীদের সুবিধার্থে চাঁদপুরের অফিসটি সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারী শাখায় স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন। তিনি সঞ্চয় বু্যরোকে সঞ্চয় ব্যাংকে রূপান্তর করার গুরুত্বও তুলে ধরেন।