মনিরুল ইসলাম মনির:পরশু সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে দেশের প্রচলিত নিয়মের একদিন আগেই চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে কাল উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ইতিমধ্যে কোরবানীর পশু কেনার কাজ শেষ করেছেন গ্রামবাসী। রাত পোহালেই নতুন জামা-কাপড় পড়ে ঈদের নামাজ আদায় করবে তারা। কোরবানীর পশু জবাইসহ ঈদের সকল আনন্দই বইবে তাদের মনে।
দেশের প্রচলিত নিয়মের একদিন আগে ঈদ উদযাপন করায় গ্রামবাসীর মধ্যে ক্রমেই দ্বন্দ্ব বাড়ছে। বিশেষ করে নবপ্রজন্ম আগাম ঈদ পালনে নারাজ। নবপ্রজন্মের অনেকেই সরকারি নিয়মে ঈদ উদযাপন করে থাকে। ফলে একই পরিবারের সদস্যদের একাধিক দিনে ঈদ উদযাপন করতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে সমাধানের চেষ্টা চললেও এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোন সমাধানে আসতে পারেননি গ্রামবাসী।
১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা পীর সাহেবের অনুসারীরা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করে আসছেন। তাদের ধারণা, পৃথিবীর যে অঞ্চলেই চাঁদ দেখা যাক না কেন রোজা ও ঈদ এক সাথে উদযাপন করা যাবে। সেই অনুসারে গত ৮৪ বছর যাবত সরকারি নিয়ম না মেনে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে দেশের এক দিন আগে ঈদ ও রোজা উদযাপন করে আসছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। ২০ গ্রামের মধ্যে রয়েছে ঃ সাচনমেঘ, বিঘা, উভারামপুর, বাজপাড়া, খিলা, ওটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসার একাংশ, গোয়লভাওর, নোয়াহাট, বাশারা, তেলিসাইর, পৌনসাইর, কামতা, সুরঙ্গচাইল, পাইকপাড়ার একাংশ, মূলপাড়া, মুন্সিরহাঁট ও কইতাড়া গ্রাম। সাদ্রা ছাড়াও জেলার অপর ২০টি গ্রামের একাংশে ওই পীরের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদ্যাপন করেন। গ্রামগুলো হচ্ছে ঃ হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বরকুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এছাড়াও চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুর জেলার কয়েকটি স্থানে মাওঃ ইছহাক খানের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদ্যাপন করেন।
গ্রামগুলোর প্রবীণ ব্যাক্তিরা বিষয়টিকে ইসলামিক বিধান বলে পালন করে আসলেও নবপ্রজন্মের তরুণরা সরকারিভাবেই ঈদ উদযাপন করতে উৎসাহী। গ্রামগুলোতে প্রতি বছর দেশের নিয়মের একদিন আগে রোজা ও রমযানের ঈদ উদ্যাপনে সমস্যা না হলেও কোরবানীর ঈদ উদযাপন করতে সমস্যায় পড়তে হয় মুসলমানদের। অনেক পরিবার সৌদি নিয়মে ঈদ উদ্যাপন করলেও তাদের সন্তানরা পরদিন সরকারি নিয়মে ঈদ উদযাপন করেন। অনেক পরিবার গ্রামবাসীর সাথে বিদ্রোহ করে সরকারি নিয়মে ঈদ উদযাপন করেন। তবে কোরবানীতে পশু জবাইয়ের জন্য হুজুর খুঁজে পান না। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের একদিন আগে ঈদ উদযাপন করতে হয়।
এদিকে দেশের নিয়মের একদিন আগে ঈদ উদ্যাপন করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের। প্রায়ই তারা কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়িতে ঈদের দিন এসে পৌঁছায়। ফলে ঈদের আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়। কেউ কেউ কর্মস্থলে সহকর্মীদের কাছে হাসি-ঠাট্টার খোরাকও হন। অনেকেই ঈদ করতে বাড়িতে আসলেও রোজা ভাঙ্গেন না। বাবা মায়ের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে চলে যান শ্বশুরবাড়িতে। সেখানেই দেশের নিয়মে সবার সাথে ঈদ করেন। তবে পূর্ব পুরুষদের পালন করা রীতিনীতিরও বিরোধিতা করেন না।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ সুবিদপুর (পশ্চিম) ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামে সাদ্রা দরবার শরীফের নিয়ম অনুসারে দেশের নিয়মের একদিন আগে ঈদ উদ্যাপন করা হয়। তবে আমিসহ ইউপি সদস্যরা সরকারি নিয়মে ঈদ উদ্যাপন করে থাকি।
বিষয়টি সমাধানের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছেন অনেকেই। আবার গ্রামের অনেকেই চাচ্ছেন এ বিষয়ে দেশের প্রখ্যাত কয়েকজন আলেম-ওলামাদের সাথে কোরআন-হাদিসের আলোকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু সমাধান।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ