ক্লাস ছুটির পর গত বৃহস্পতিবার সবাই বাড়ি গেলেও বিদ্যালয়ের টয়লেটে আটকে থাকায় বাড়ি ফিরতে পারেনি বাকপ্রতিবন্ধী ছাত্রী শারমিন আক্তার। পরে রাস্তায় ঘুরতে আসা এক তরুণের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে রাত ১০টার পর টয়লেটের তালা ভেঙে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, কচুয়ার আশ্রাফপুর দক্ষিণপাড়া হাজি বাড়ির আনোয়ার হোসেনের মেয়ে শারমিন আক্তার এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। শারমিন বাকপ্রতিবন্ধী হলেও পড়াশোনায় তার অনেক আগ্রহ। এজন্য দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলা হওয়ায় এখন প্রতিদিন ক্লাসে হাজির হয় সে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিদ্যালয় ছুটি হয়। তখন টয়লেটে প্রবেশ করে শারমিন। কিন্তু টয়লেট থেকে সে বের হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ের আয়া শাহানারা আক্তার শানু বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দেন। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় কাউকে ডাকতে না পেরে টয়লেটে আটকা পড়ে শারমিন।
ছুটির পর বাড়ি না ফেরায় শারমিনের বাবা তার সহপাঠী ও আত্মীয়ের বাড়িতে তাকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পাননি। পরে রাত ৯টার দিকে স্থানীয় এক তরুণ বিদ্যালয়ের পাশে ঘুরতে আসলে টয়লেট থেকে এক ধরনের আওয়াজ শুনতে পান। তিনি কিছুক্ষণ চেষ্টা করে বাথরুমে ওই ছাত্রীর উপস্থিতি শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে স্কুল ও টয়লেটের তালা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে আল আমিন নামের ওই তরুণ বলেন, রাতে ব্রিজের ওপর ঘুরতে গিয়ে বিদ্যালয়ের বাথরুমে কারও শব্দ শুনতে পাই। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে ভেন্টিলেটরের ফাঁকে মানুষের হাত দেখে প্রথমে ভূত ভেবে ভয় পাই। পরে এলাকার লোকজনকে ডেকে এনে তালা ভেঙে মেয়েটিকে উদ্ধার করি। উদ্ধারের সময় তার মুখের মাস্ক রক্তে ভেজা দেখতে পাই। আটকে পড়ার পর বারবার কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়ে তার গলা থেকে রক্ত বের হয়ে থাকতে পারে।
বিদ্যালয়ের আয়া শাহানারা আক্তার শানু জানান, দুপুর সাড়ে ১২টায় নয়, তিনি বিকেল ৪টার দিকে বাথরুমের তালা বন্ধ করেছেন। তবে তিনি ভেতরে কেউ আছে কি না, তা না-দেখেই দরজা বন্ধ করেন বলে স্বীকার করেন।
প্রধান শিক্ষক মো. আমীর হোসেন জানান, বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজে বিদ্যালয়ে ছিলেন। বের হওয়ার আগে পর্যন্ত এমন কিছু তার নজরে পড়েনি। রাতে মুঠোফোনে ঘটনা জানতে পেরে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ওই ছাত্রীর বাড়ি পাঠান।
ছাত্রীর বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অজানা আশঙ্কা নিয়ে মেয়েকে খুঁজেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, তিনি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আহসান উল্যাহ চৌধুরী বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, আমি ঘটনা অবগত হয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহসান উল্যাহ চৌধুরীকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের কারও গাফিলতি পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।