শাহরাস্তির টামটা উত্তর ইউনিয়নের বলশীদ হাজি আকুব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে বহিরাগতরা দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় বহিরাগত ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দিনভর ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বহিরাগতদের হামলায় স্কুলের ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকদের পুনঃর্বহাল ও ৪ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের হুমকি দিয়েছে।
জানা যায়, বলশীদ হাজি আকুব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথের দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্কুল ও শিক্ষকদের পরিচালনায় চরম ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা। এ অনিয়মের প্রতিবাদের জেরকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. আবু কাইয়ুমকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে মোবাইল ফোনে (০১৮৩৮-৮১৩৬৪৪) বহিরাগতরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বিষয়টি তিনি বিদ্যালয়ের ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জম হোসাইন, সদস্য আবুল বাসার ও সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) জুলফিকার আলীকে অবহিত করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক আবু কাইয়ুম ও জুলফিকার আলী এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন।
বিকেলে পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল বাসার, আতিকুর রহমান ভূঁইয়া, অধ্যাপক সুজাত আলী, শিক্ষক টিআর বিল্লাল হোসেন ও প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথ উপস্থিতিতে বৈঠকে বহিরাগত বলশীদ গ্রামের মোস্তফা, তানভীর, কামরুলসহ অজ্ঞাত ৭/১০ জন যুবক দুই শিক্ষক আবু কাইয়ুম ও জুুলফিকার আলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারার জন্য তেড়ে আসে। পরে শারীরিকভাবে লঞ্ছিত করে। সহকারী শিক্ষক আবু কাইয়ুম রাগে ক্ষোভে ও প্রাণনাশের ভয়ে স্কুলে চাকরি করবেন না মর্মে অব্যাহতি পত্র দেন। বিষয়টি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা অবগত হয়ে রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। গতকাল সোমবার বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত সব ছাত্র-ছাত্রী একত্রিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষসহ বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় ও বিক্ষোভ মিছিল করে। ছাত্র-ছাত্রীরা বহিরাগতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও শিক্ষক আবু কাইয়ুমকে পুনঃর্বহাল করার জোর দাবি জানায়।
প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ, শিক্ষকদের ফিরিয়ে আনতে হবেসহ ৪ দফা দাবি স্কুলের দেয়ালে ও প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে লিফলেট লাগিয়ে দেয়। ক্লাসে তালা মারা, বিক্ষোভ ও দিনভর ক্লাস বর্জন করায় বহিরাগতরা দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র (রোল-১) শরীফুল ইসলামসহ ১০ ছাত্রকে বেদম মারধরসহ গুরুতর আহত করেছে। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা ৪ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে শাহরাস্তি মডেল থানার এসআই খোরশেদ আলম ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ বিষয়ে অব্যাহতি পত্র দেওয়া বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. আবু কাইয়ুম জানান, প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিনি বহিরাগতদের দিয়ে গত শনিবার রাতে আমাকে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ান। ফলশ্রুতিতে অব্যাহতিপত্র দিতে বাধ্য হয়েছি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথ জানান, স্কুলে তালা ও দিনভর সংঘর্ষের ফলে বিদ্যালয়ে ক্লাস হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ২১ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।