মতলব:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে মতলব দক্ষিণ উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেদারছে চলছে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শিক্ষকদের প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য চলছেই। ভোর থেকে প্রাইভেট পড়ানোর কারণে ছেলে-মেয়েদের প্রায়ই যৌন হয়রানীর ঘটনা ঘটছে। এছাড়া মতলবের দু’একটি নীরব ও নির্জন স্থানে প্রাইভেট কোচিংয়ের নাম করে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে মতলব নিউ হোস্টেল মাঠ সংলগ্ন পশ্চিম পাশের পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে। অভিভাবকরা নিশ্চিত যে, তাদের সন্তান পড়ালেখার জন্যেই প্রাইভেট পড়তে বাসা-বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আর যে সময়ে ছেলে মেয়েরা বাসা-বাড়ি থেকে প্রাইভেট ও কোচিংয়ের নাম করে বেড়িয়ে আসে ঐ সময়ে রাস্তা-ঘাটেও মানুষজন কম থাকে।
এদিকে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধা রাখলেও মতলব দক্ষিণ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আদৌ বন্ধ হয়নি। বরং কৌশল অবলম্বন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্যের ব্যবসা করছে।
স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় (স্মারক নং-শিম/শা:-১১/৩-৯/২০১১/৪০১, তাং ২০/০৬/২০১২ইং) অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ২০১২। এ নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারা দেশের মতো মতলব দক্ষিণ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসেও এ সংক্রান্ত পত্র পাঠানা হয়। তারই প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে গত ২৫ জুলাই উপজেলার স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক নীতিমালা অনুচ্ছেদ তিন অনুসারে নিজ প্রতিষ্ঠানের কোন ছাত্র-ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবে না। কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম চলাকালীন কোচিং করাতে পারবে না। প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিংয়ের জন্য কোন ছাত্র-ছাত্রীকে উদ্বুদ্ধ করা যাবে না এবং কোন বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা যাবে না। কোন শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর জন্য কোন বাসা ভাড়া নিতে পারবে না। কিন্তু সরকারের এই নীতিমালা কাগজে কলমেই, বাস্তবে তার উল্টো।
সরেজমিনে মতলব দক্ষিণ উপজেলার বেশ ক’টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় দেখা যায়, প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যের জন্য শিক্ষকরা ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকদের সাথে আঁতাত করে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম যথারীতি না করে তড়িঘরি করে স্কুল ছুটি দিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর কাজে মেতে উঠে। কলেজগুলোতেও অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করে প্রাইভেট পড়াতে দেখা গেছে। এছাড়া নিয়ম নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বাসা-বাড়ি ও শিক্ষক সমিতির ঘর ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন শিক্ষকরা।
রয়মনেন নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক, মতলব ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ, মুন্সিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মালেকসহ বেশ ক’টি স্কুল ও মাদ্রাসার প্রধানদের সাথে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তারা দাবি করেন, প্রাইভেট ও কোচিং করানো হচ্ছে নীতিমালা অনুযায়ী। তবে কেউ কেউ একে অপরকে দায়ী করে বলেন, ঐ কলেজেও প্রাইভেট পড়ানো হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দেয়া দায় সারা বক্তব্যের উল্টো দেখা গেছে সরেজমিনে ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নাজিম উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যের বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে একাধিকবার সভা করেছেন। বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মাহমুদসহ বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামও একটি সভা করেছেন বলে জানান। ঐ সভায় স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ শিক্ষকদের ২০১২ সালের নীতিমালা অনুযায়ী কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশ দেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরো জানান, যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রাইভেট ও কোচিং পড়াবে ঐসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিরোনাম:
রবিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।