জিয়াউর রহমান বেলাল
চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবক রোটারিয়ান মরহুম ডাঃ নুরুর রহমানের নাতি স্কুল ছাত্র শাহেদ চৌধুরী (১৫) হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামী বোন হীরা ও প্রেমিক মুনকে পুলিশ পৃথক পৃথকভাবে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। গতকাল রোববার চাঁদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অসীম কুমার দে�র আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানার এসআই মোঃ আনোয়ার হোসেন চাঞ্চল্যকর এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে তাদেরকে কোর্টে উঠানো হয়। মুন আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো থাকলেও হীরা কাঠগড়ার পাশেই নিচে দাঁড়ানো ছিলো। তারা উভয়ে চাঞ্চল্যকর শাহেদ চৌধুরী হত্যা মামলায় এজাহার বহির্ভূত আসামী।
গতকাল নির্ধারিত পুলিশ রিমান্ড শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অসীম কুমার দে জনাকীর্ণ আদালতে আদেশনামায় সুস্পষ্টভাবে আরও উল্লেখ করেন, রিমান্ডে নেয়া সন্দেহভাজন আসামীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন বা টর্চার করা যাবে না। সেই সাথে তিনি ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ডশেষে সন্দেহভাজন উভয় আসামী (হীরা ও মুন)কে সুস্থ শরীরে আদালতে হাজির করার জন্য আদেশ প্রদান করেন। একাধিক আইনজীবী এবং সরকারী কৌঁসুলি তথা চাঁদপুর সদর জিআরওদের ব্যাপক যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত সার্বিক বিবেচনায় উভয়কে ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠান। এ সময় বহুল আলোচিত সন্দেহভাজন আসামী আটক মিস্ মনোয়ারা চৌধুরী ওরফে হীরার পক্ষে অ্যাডঃ কাজী আব্দুল হান্নান ও অপর সন্দেহভাজন আসামী আটক কামরুল হাসান সিকদার ওরফে মুনের পক্ষে অ্যাডঃ দীপক মজুমদার এবং সাহেদের চাচা সাবেক চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে অ্যাডঃ সেলিম আকবর স্ব-স্ব অবস্থান থেকে ব্যাপক যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন।
গত ১১ এপ্রিল শাহেদ চৌধুরী রহস্যজনক কারণে খুন হলে তার আত্মীয়স্বজনরা থানা-পুলিশকে না জানিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে দাফন করে। এ ব্যাপারে গত ৩০ এপ্রিল চাঁদপুরের অধিকাংশ দৈনিক পত্রিকায় সবিস্তারে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে সর্বত্র ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে এক পর্যায়ে পুলিশের ব্যাপক চাপে ঢাকায় রহস্যজনকভাবে আত্মগোপন করে থাকা শাহেদের মা মিতা চৌধুরী ও শাহেদের বোন হীরা গত ৭ মে রাতে চাঁদপুর মডেল থানায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাত আসামী উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা (নং ১৩/১৮৯) দায়ের করেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে হতভাগ্য শাহেদের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে কুমিল্লায় উচ্চতর ময়না তদন্ত তথা ফরেনসিক পরীক্ষাশেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে পুনরায় কবরস্থ করা হয়। উক্ত মামলার সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে হীরা ও মুনকে আটক দেখিয়ে কোর্টে পাঠানো হলে বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয় এবং সে সাথে গতকাল রোববার ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য রাখা হয়। বিজ্ঞ আদালত সার্বিক বিবেচনায় তাদের বিরুদ্ধে ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আদেশ প্রদান করে।
উল্লেখ্য, কামরুল হাসান সিকদার ওরফে মুনের পিতার নাম মোঃ আশরাফ আলী সিকদার। তাদের বাসা শহরের আদালত পাড়ায়। সে ঢাকায় অপটিনেট নামক একটি কম্পিউটার সফ্টওয়্যার কোম্পানিতে চাকুরি করে। হতভাগ্য শাহেদ চৌধুরীর ছোট বোন মনোয়ারা চৌধুরী ওরফে হীরা চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত ১১ এপ্রিল চাঁদপুর শহরের আলীম পাড়াস্থ বাসায় রহস্যজনকভাবে শাহেদ গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকে এবং পরবর্তীতে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে পাঠালে পথিমধ্যে তার মৃত্যু ঘটে।