ওমর ফারুক
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে সারা দেশে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কয়েকজন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। মৌখিক নির্দেশনা পাওয়ার পর বিভিন্ন জেলায় গতকাল মঙ্গলবার জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গতকাল বিকেলে ১৫ দফা নির্দেশনাও জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিরুৎসাহ করা হয়েছে।
বিধি-নিষেধের বিষয়ে এ সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। তাতে কী ধরনের বিধি-নিষেধ আসতে পারে, সে বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল দুপুরে ধারণাও দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিপণিবিতান, দোকানপাট রাত ৮টায় বন্ধ করতে হবে। এখন খোলা থাকে রাত ১০টা পর্যন্ত। গণপরিবহনে যাত্রীসংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। মাস্ক না পরলে জরিমানা গুনতে হবে।
গত সোমবার করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায় চারজন। গতকাল মারা গেছে ছয়জন। সোমবার করোনা শানাক্ত হয় ৬৭৪ জনের। আর গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৭৫ জনের।
গত সোমবার বিকেলে করোনা নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্ত মন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, জেলা প্রশাসকরা ভার্চুয়ালি যোগ দেন। জেলা প্রশাসকরা তাঁদের এলাকার তথ্য জানান।
জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আগের মতো করোনা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। আজ (গতকাল) আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নাটোরে মাইকিং করছি।’
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘আমরা নিজের অফিস থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর কাজ শুরু করেছি। আগে যেভাবে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হতো এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল, তা শুরু করেছি। বুধবার থেকে শহরে মাইকিং করা হবে।’
তবে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ জানিয়েছেন, তাঁরা ক্যাবিনেটের লিখিত নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। তাঁর জেলায় খুব একটা আক্রান্তও নেই।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বেনাপোল বন্দরে করোনার স্ক্রিনিং ও টেস্ট চলমান আছে। মাস্ক পরার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। কোয়ারেন্টিনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরার জন্য জনগণকে সচেতন করার কাজ আবারও শুরু করেছেন তাঁরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী যা বললেন : গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, এটা আশঙ্কাজনক। তাই কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া যদি কেউ বাস, ট্রেন ও লঞ্চে চলাচল করে তাহলে জরিমানা করা হবে। বাস ও অন্যান্য যানবাহনে যাত্রীসংখ্যা অর্ধেক পরিবহনের প্রস্তাব করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে মাস্ক পরে যেতে হবে। মাস্ক ছাড়া গেলে দোকানদারের জরিমানা করা হবে। যে যাবে তারও জরিমানা করা হতে পারে। রাত ১০টার পরিবর্তে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যাবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে জিজ্ঞাসা করছে, লকডাউন দেওয়া হবে কি না। পাশের দেশে তো দিয়েছে। আমরা সেই চিন্তা এখনো করছি না। যদি অবস্থা আওতার বাইরে যায়, সংক্রমণ অনেক বৃদ্ধি পায়, তাহলে লকডাউনের চিন্তা মাথায় আছে। পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনের ক্ষেত্রে পুলিশ পাহারা বসানো হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি, আন্ত মন্ত্রণালয় সভার নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ১৫ দিন লম্বা সময়। এর মধ্যে করোনা অনেক ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই আমরা সাত দিনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা বলেছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৫ নির্দেশনা : গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো—সব বন্দরে বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করা, আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা। সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় জনসমাগম নিরুৎসাহ করা, বাড়ির বাইরে সব সময় মাস্ক পরা। জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/ থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বউভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) উপস্থিতি সীমিত করা। মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানা। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা। রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম লোক বসে খেতে পারবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। যারা কভিড টিকা নেয়নি, তাদের টিকা নিতে হবে। সন্দেহভাজন বা নিশ্চিত কভিড রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রাখা। অফিস-আদালতে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা। কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে মাইকিংসহ প্রচার চালানো।