২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪: রাউজানের নোয়াজিষপুরে নববধূ রিমা আকতারের রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য’র কিনারা পাওয়া গেছে। রিমার পরিবার রিমাকে হত্যার যে অভিযোগ করেছিল তাই সত্যি হয়েছে। রিমা আত্মহত্যা করেনি। তাকে প্রবাসী স্বামীই নির্যাতন করার পর হত্যা করে সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে দেয়। এই হত্যাকান্ডে সহায়তা করে রিমার শাশুড়ি, স্বামীর মামা ও মামী। পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে নিজ স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে স্বামী আবু বক্কর। এই ঘটনায় নিহতের স্বামী আবু বক্কর, মামী পারভিন আকতারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বিয়ের একুশ দিনের মাথায় গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজ শয়ন কক্ষে স্বামী ও শ্বশুর পক্ষের হাতে খুনের শিকার হন রিমা। এই খুনকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দিতে প্রচারণা চালায় স্বামী পক্ষ।রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খলিল জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) গ্রেপ্তারকৃত স্বামী আবু বক্কর ও মামী পারভিন আকতারকে আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে থানা হাজতে জিজ্ঞাসাবাদে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি ও রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী আবু বক্কর তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে হত্যা করার কথা স্বীকার করে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্যে নেয়া হয়।
তবে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে কিনা তা জানাতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা খলিল। তাঁর কাছ থেকে জবানবন্দির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আসামি তার সঙ্গে আছে বলে জানিয়ে ব্যস্ততা দেখান। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই খলিল জানান, নববধূ হত্যাকান্ডের ঘটনায় রিমার ভাই তৌহিদুল আলম সুজন বাদি হয়ে গত বুধবার রাতেই স্বামী আবু বক্কর, শাশুড়ি সেলিনা আকতার, দেবর মো. ইব্রাহিম, মামা শ্বাশুর নজরুল ইসলাম ও মামী শাশুড়ি পারভিন আকতারকে আসামি করে রাউজান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। রিমার ভাই তৌহিদুল আলম সুজন বলেন ‘আমার বোন রিমাকে স্বামী, শাশুড়ি, দেবর, মামা ও মামী শাশুড়ি নির্যাতন করে হত্যা করেছে। রিমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্নস্থানে মারধরের দাগও রয়েছে। তাছাড়া হাতের কাঁচও ভাঙ্গা দেখা গেছে।’
রিমার খালাতো ভাই জিয়া বলেন ‘রিমার স্বামী আবু বক্করের সাথে তার মামী (বর্তমানে পুলিশের হাতে আটক) পারভিন আকতারের পরকিয়া সম্পর্ক রয়েছে। সেটা নিয়ে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে রিমাকে হত্যা করা হয়। জিয়া বলেন ‘গত বুধবার দুপুরে স্বামী আবু বক্কর তার রুমে একের পর আমার খালাতো বোন রিমার শরীরে লাথি মারে। মারতে মারতে এক পর্যায়ে তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। তার বুকে ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নির্যাতনে হত্যার পর স্বামী আবু বক্কর ও তার মা, মামা-মামী লাশ আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার জন্যে ওড়না দিয়ে নিজ শয়ন কক্ষের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেয়। নির্যাতনের সময় স্বামীর সাথে সহায়তা করে শাশুড়ি সেলিনা আকতার, দেবর মো. ইব্রাহিম, মামা শ্বাশুর নজরুল ইসলাম ও মামী শাশুড়ি পারভিন আকতার।’ রিমার জেঠা আকতার বলেন ‘আমাদের মেয়েকে তারা মেরে ফেলেছে।’ এলাকার একটি সূত্র জানায় রিমাকে মেরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে দরজা বন্ধ করে স্বামী আবু বক্কর বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর এসে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে প্রতিবেশীদের বুঝাতে চান তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।উল্লেখ্য, আবু বক্করের মামা ও আটককৃত মামীর বাড়ি পাশ্ববর্তি ফটিকছড়ি উপজেলার জাহানপুর এলাকায়।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাড়ে ১২টায় নববধূ রিমার ঝুলন্ত লাশের ব্যাপারে পুলিশের কাছে খবর দেয় স্বামী ও তার পরিবার। তারা এই ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করলেও লাশের বিভিন্ন আলামতে আত্মহত্যার চিত্র ফুটে না ওঠায় পুলিশের সন্দেহ হয়। বিকেলে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। এই ঘটনায় স্বামীকে ঘটনাস্থল থেকে ও রাতে ফটিকছড়ির শ্বশুর বাড়ি থেকে স্বামীর মামী পারভিন আকতারকে পুলিশ আটক করে। গত বুধবার রাতে থানা পুলিশের কাছে স্বামী আবু বক্কর স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করে।উল্লেখ্য, গৃহবধূ রিমা চিকদাইর ইউনিয়নের আবদুল জলিল সারাংয়ের বাড়ির প্রবাসী আহমদ উল্লাহর দ্বিতীয় কন্যা। তার স্বামী আবু বক্কর নোয়াজিশপুরের নকীব বাড়ির বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল বিভাগে চাকুরিতে নিয়োজিত মোহাম্মদ ইদ্রিসের পুত্র। রিমার স্বামী আগামী ৪ অক্টোবর মধ্যপ্রাচ্যের চাকুরিতে চলে যাওয়ার কথা ছিল। এদিকে এলাকাবাসী রিমার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন ।
শিরোনাম:
সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৫ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।