শিশু ফাতেমা আক্তার। বয়স মাত্র ৫ বছর। সৎ মায়ের সাথে বসতি। বাস্তবতা বুঝে ওঠার আগেই চরম নিষ্ঠুরতার শিকার। সৎ মায়ের নিষ্ঠুরতায় এখন সে মৃত্যু যন্ত্রণায় ধুঁকছে। কোনো মতে বেঁচে গেলেও তার স্বাভাবিক সাংসারিক জীবন নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। শিশুটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কখনো মায়ের কোলে কখনো হাসপাতালের শয্যায় হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদছে পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশুটি। তার স্পর্শকাতর স্থানে ইনফেকশন হয়ে গেছে। শরীরের অন্যান্য স্থানে রয়েছে জখমের চিহ্ন।
নির্মম এই ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি ইউনিয়নের মানুরী এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে, মধ্যযুগীয় বর্বরতায় ফাতেমার গোপনাঙ্গে ইটের টুকরা এবং হাতপাখার হাতল ঢুকিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করেছে তারই সৎ মা রাণী বেগম।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানায় শিশুটির মামা বাদী হয়ে সৎ মা রাণী বেগম ও বাবা এমদাদুল্যাহ, চাচা সানা উল্যাহকে বিবাদী করে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তবে পুলিশ এখনো অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেনি।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, মেডিকেল রিপোর্ট হাতে আসলেই মামলা নেয়া হবে। অভিযোগটি থানার উপ-পরিদর্শক নাছির উদ্দিনকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে শিশুর বাবা ও চাচা নির্যাতিত শিশুটির মামার বিরুদ্ধে পৃথক একটি ভাংচুর ও লুটতরাজের অভিযোগ দিয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এমদাদুল্যাহ ও নাজমুন্নাহারের কনিষ্ঠ কন্যা ফাতেমা। দুই বছর আগে স্থানীয় সালিসে উভয়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। নাজমুন্নাহার বড় কন্যাকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে আর ছোট কন্যা ফতেমা রয়ে যায় এমদাদুল্যাহর কাছে। ক’দিনের মাথায়ই এমদাদ রিনা বেগমকে বিয়ে করে।
শিশুটির মামা ফারুক হোসেন জানান, ২০০৬ সালে ফরিদগঞ্জ এলাকার বালুমুড়া গ্রামের এমদাদুল্ল্যাহর সঙ্গে আমার বোন নাজমুন্নাহারের বিয়ে হয়। তাদের দুই কন্যা সন্তান আছে। কয়েক বছর ধরে স্বামীর নির্যাতনে নাজমুন্নাহার অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। দুই বছর আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক সালিসে সিদ্ধান্ত হয় সাত বছরের বড় মেয়েটি মায়ের কাছে এবং পাঁচ বছরের ছোট মেয়েটি থাকবে বাবার কাছে। এর ছয় মাস পরই রিনাকে বিয়ে করেন এমদাদুল্যাহ। মেয়ের ভরণ-পোষণের জন্য এমদাদুল্যাহর টাকা দেয়ার কথা থাকলেও কিছুদিন পর তা বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে নাজমুন্নাহারের ভাইদের সঙ্গে এমদাদুল্যাহর বিরোধ শুরু হয়।
তিনি আরো জানান, এরপর থেকেই নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। কাপড়, থালাবাটি ধোয়ানো থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করতে হতো ফাতেমাকে। পান থেকে চুন খসলেই চলতো নির্যাতন-মারধর। অবশেষে গত ২১ ডিসেম্বর রিনা বেগম ফাতেমার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন করে। ২৪ ডিসেম্বর প্রচ- মারধরের পর সে ফাতেমার গোপনাঙ্গে ইটের টুকরো হাতপাখার হাতল দিয়ে ঠেলে ঢুকিয়ে দেয়। প্রচ- যন্ত্রণায় ফাতেমা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে তাকে রিনা বেগম বাড়ির অদূরে ফেলে আসে। এ সময় ফাতেমার জ্ঞান ফিরে এলে তার চিৎকারের শব্দে পাড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। তার তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রামগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েভর্তি করায়, পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ২৬ ডিসেম্বর শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার তাকে ওসিসিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ওসিসির চিকিৎসক (সমন্বয়ক) ডাঃ বিলকিস বেগম সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটির গোপনাঙ্গে সংক্রমণ হয়েছে। মেয়েটি এখন কিছুটা সুস্থ, তবে ঝুঁকি রয়েই গেছে।
এদিকে শিশুটির মামারা মেয়েটিকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন। কারণ শিশুটির সৎ মা রিনা বেগম উল্টো তাদেরই বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে মামলা ঠুকে দিয়েছে। এখন শিশুটির আরোগ্যের পাশাপাশি মিথ্যা মামলায় হয়রানির উৎকণ্ঠায় স্বজনরা।
এ বিষয়ে এমদাদুল্যাহর বড় ভাই সানাউল্যাহ বলেন, ‘এটা ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রঞ্জিত কুমার দাস বলেন, এমদাদুল্যাহ বাদী হয়ে যেই অভিযোগটি দিয়েছে তা খতিয়ে দেখছি। জেনেছি শিশুটি হাসপাতালে ভর্তি। তার মামাদের পক্ষ থেকেও একটি অভিযোগ হয়েছে।