৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে সহিংসতায় সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুই ভাই এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় একজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষে দুই ভাই এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা যান। এ ছাড়া বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে রাজধানীর বাইরে হরতাল চলছে। সোমবার ভোরে বরিশালে জামায়াতের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হন। ঝিনাইদহের কোঁটচাঁদপুরে রেললাইন উপড়ে ফেলেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ওফাপুর স্কুল মোড়ে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষে দুই ভাই নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়ার-সরসকাটি সড়কের ওফাপুর মোড়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা গাছের গুড়ি ফেলে পিকিটিং করলে। পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়।
খরব পেয়ে সেখানে বিজিবি গেলে তারা বিজিবির ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় বিজিবি তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ওফাপুর গ্রামের মৃত রহিম বঙ মোড়লের ছেলে রুহুল আমিন (৫২) ও তার ছোট ভাই আরিফ বিল্লাহ (৩০) মারা যান এবং একই গ্রামের সামছুর রহমান (৪০) সহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। সামছুর রহমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার উল্লাপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সংঘর্ষে এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছে। নিহত মাহফুজ (১৬) উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাতী ইউপির ফলিয়া গ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র ও স্থানীয় ফলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। সে ছাত্র শিবিরের সাথী কর্মী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ব দেলুয়া বাজার এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে পিকেটিং করে। এ সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে হরতালকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বলে উল্লাপাড়া মডেল থানার ওসি বিমান কুমার দাস জানান। এ সময় পুলিশের ৫ জন সদস্য আহত হয়। পরে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়ে হরতালকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় মাহফুজ, রেদওয়ান ও সোহেল নামে শিবিরের ৩ কর্মী গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হন। গুলিবিদ্ধ মাহফুজকে উল্লাপাড়া ২০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে নিহতের পরিবারের সদস্যরা লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অপর ২ জনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। এখান থেকে পুলিশ এক শিবির কর্মীকে আটক করেছে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, জেলার কোঁটচাঁদপুরে রেললাইন উপড়ে ফেলেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। ফলে খুলনা-ঈশ্বরদী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মেরামতের কাজ চলছে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, সোমবার সকালে বরিশালে হরতালের দ্বিতীয় দিনে জামায়াত-পুলিশ-ছাত্রলীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় জামায়াতের কর্মীরা ৩টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় এক জামায়াত নেতাকে আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে সহিংসতায় বহু হতাহতের ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়া হয়। এই হরতালের প্রথম দিন রবিবার ৬ জেলায় সহিংসতায় ২৪ জন মারা প্রাণ হারান।