শান্তিনগর বাজারের খুচরা বিক্রেতা জহির হোসেন জানান, হরতালের আগের দিনে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ডায়মন্ড আলু কিনেছিলেন ৫০ টাকায়। আর বিক্রি করেছিলেন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। সোমবার একই আলু প্রতি পাল্লা কিনেছেন ৯০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৮ টাকা। কাঁচা মরিচের ঝাঁঝটা একটু বেশিই দেখা গেছে। হরতালে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ টাকার মতো। শনিবার যে কাঁচা মরিচের দাম ছিল কেজি প্রতি ৫০ টাকা, সোমবার তা বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকায়। জহির হোসেন আরো জানান, এর আগেও অনেক হরতাল হয়েছে। তারা নির্বিঘ্নে সব মালামাল আনা-নেওয়া করেছেন। কিন্তু এখন খুবই ভয় লাগে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে খুবই আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই দোকান খুলছেন না বলেও দাবি করেন তিনি। মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা সুমন মিয়া জানান, শনিবার হরতালের আগে যে বেগুনের দাম প্রতি পাল্লা ( ৫ কেজি) ২০০ টাকা ছিল, একই বেগুন সোমবার কিনেছেন ২৫০ টাকায়। ২০০ টাকার ধনে পাতা দেড়গুণ দাম বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। শশা প্রতি কেজি ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকা। সুমন আরো জানান, শনিবার সিম প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) তারা কিনেছিলেন ১০০ টাকা দরে। সোমবার কিনেছেন ১৬০ টাকা দরে। ৬০ টাকার টমেটো ১০০ টাকা, ৭৫ টাকার পেঁপে ১০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। অন্যদিকে প্রতিটি কফিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গাজরের দাম।
হরতালে বাড়ছে সবজির দাম
নিজম্ব প্রতিবেদক: হরতালে রাজধানীতে বেড়ে গেছে সবজির দাম। দুই দিনের ব্যবধানে সবজি ভেদে কেজি প্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করতে না পারলে আরো দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার রাজধানীর পাইকারি বাজার কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ি বাজার এবং খুচরা বাজার মালিবাগ ও শান্তিনগর ঘুরে বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। ক্রেতারা দাবি করেছেন, অনেকটা কৃত্রিম ভাবেই দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা দাবি করেছেন, আড়তে দাম বেড়েছে। এতে তাদের করার কিছুই নেই। আর আড়তদাররা জানিয়েছেন ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। কৃত্রিম ভাবে দাম বাড়ানো হয়নি। কারওয়ানবাজারের আড়তদার সামছুল ইসলাম জানিয়েছেন, সবজি বহনকারী ট্রাক হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হলেও হরতালকারীরা তা মানছে না। দেশের অনেক স্থানেই সবজির ট্রাকে হামলা চালিয়েছে জামায়াত- শিবির। যে কারণে ট্রাক চালক ও মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ট্রাক ভাড়া দিতে চাচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেড় থেকে দ্বিগুণ ভাড়া পরিশোধ করে ট্রাক ভাড়া করতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক কারণেই দাম বেড়ে গেছে।সামছুল ইসলাম জানান, বগুড়া থেকে এক ট্রাক আলু আনতে স্বাভাবিকভাবে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু রোববার এক ট্রাক আলুর ভাড়া গুণতে হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক কারণে দাম বেড়েছে। প্রতি মণ আলুতে প্রায় ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি আদায় করাকে এই পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, সরকার যদি মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করতে না পারে, তাহলে সামনে আরো খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে নগরবাসীকে। মমতাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক আড়তদার কাজী মোস্তফা জানান, ঢাকায় দাম বেড়েছে সব সবজির। অন্যদিকে গ্রামে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিক্রির অভাবে। তিনি জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় মিষ্টি কুমড়া কিনে রেখেছেন ১ লাখ টাকার। বৃহস্পতিবার ঢাকায় আনার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাকের অভাবে আনতে পারছেন না। ২/৩ দিনের মধ্যে আনতে না পারলে সব মিষ্টি কুমড়া পচে যাবে। তার মতো অনেক ব্যবসায়ীকেই পথে বসতে হবে। বাবুল খান নামের এক ব্যাপারী জানান, স্বাভাবিক সময়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসতে একটি ট্রাক ভাড়া নেয় ৪ হাজার টাকা। কিন্তু হরতাল শুরু হওয়ার পর রোববার নিয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। কারওয়ানবাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক জানিয়েছেন, কারওয়ানবাজারে সবজির সরবরাহ এক পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে। তিনি জানান, প্রতি রাতে সারাদেশ থেকে প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক সবজি আসে। কিন্তু রোববার রাতে ১০০ ট্রাকও আসেনি।