চাঁদপুর হরিণা ও আলুর বাজার ফেরিঘাট এখন গাড়ির অপেক্ষায় ৩টি ফেরি সার্বক্ষণিক ঘাটে অবস্থান করে। হরতাল ও অবরোধে সহিংস ঘটনায় যানবাহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ফেরি চলাচল পূর্বের চেয়েও অনেকাংশে কমে গেছে। প্রায় দেড় মাস হরতাল অবরোধের কারণে ফেরি পারাপার কমে যাওয়ায় বিকল হওয়ার পথে ফেরি কস্তুরী, কামীনি ও কিশোরী নামক ফেরী। এতে করে সরকার ইজারাদারদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবৎ হরিণা ফেরিঘাট এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, ঘন্টার পর ঘন্টা নদীর দু’পারে ৩টি ফেরি গাড়ির অপেক্ষায় অবস্থান করছে। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় পূর্বের চেয়ে চার ভাগের এক ভাগ যানবাহন নিয়ে ফেরি পারাপার হচ্ছে।
হরিণা ফেরিঘাট এলাকার টার্মিনালে কোন যাত্রীবাহি বাসও ট্রাক পূর্বের মতো অবস্থান করতে দেখা যায়নি। কিছু মালবাহী ট্রাক আসলেও নির্ধারিত পরিমান ফেরিতে যানবাহন না উঠার কারণে পারাপার কমে গেছে। জানা যায়, হরতাল অবরোধের ৪৫ দিন চলমান থাকায় এ পর্যন্ত দিনে ৩ লক্ষ টাকা প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া ফেরীঘাটের দু’ পারের দু’ ঠিকাদার প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। পূর্বে ফেরিঘাটের কামিনী, কস্তুরী ও কিশোরী দিনে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ট্রিপ এপার থেকে ওপারে যানবাহন পারাপার করতো। হরতাল অবরোধের অচল অবস্থার কারণে বর্তমানে ৫ থেকে ৬ বার গাড়ি নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। এতে করে ঠিকাদার ও সরকার যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি যানবাহন মালিক শ্রমিকরাও তার চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
এছাড়া তিনটি ফেরীতে ৩ টি ক্যান্টিন রয়েছে। তাদের এ পর্যন্ত কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় হরিণা ফেরিঘাটের ইজারাদার টিটু গাজী জানায়, হরিণা ঘাটের ইজারা নেয়ার পর থেকে যানচলাচল স্বাভাবিক থাকাকালে কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু হরতাল ও অবরোধের কারণে পূর্বের মতো এখন আর মালবাহী গাড়ি ও যাত্রীবাহি চোখে দেখা যায়না। কিছু সংখ্যক গাড়ি পুলিশ পাহাড়ায় দিনের বেলায় আসার পর পারাপার হচ্ছে। চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের মতো যেভাবে পুলিশ পাহাড়ায় গাড়িগুলো পারাপার হচ্ছে, সেভাবে যদি এখানে পুলিশ পাহাড়ায় যানবাহন পারাপার হতো তাহলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকতো। হরিণা ঘাটে অবস্থানরত কয়েকজন ট্রাক চালক জানায়, দু’ দলের রশি টানাটানির কারণে দেশ অচল অবস্থায় রয়েছে। বিএনপি-জামাত শিবিরের নেতাকর্মীরা যেভাবে রাতের আধারে যানবাহনে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে তার ভয়ে ট্রাক চালকরা রাতে গাড়ি চালাচেছ না। সম্প্রতি চান্দ্রা ও ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে গাজির ব্রীজের কাছে পেট্রল ঢেলে পিকআপ ও সিএনজিতে অগ্নি সংযোগ করেছে। সেই ভয়ে এখন মানষ আরো আতঙ্কিত।
কস্তুরী ফেরির ক্যান্টিন ব্যবসায়ী জানায়, দেড় মাস যাবৎ ফেরীতে খুরিয়ে খুরিয়ে চলার কারণে ক্যান্টিনে কোন বিক্রি হচ্ছে না। ফেরীতে লোক সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় দু’ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ফেরীঘাটে আসা অপেক্ষমান এক বৃদ্ধা জানায়, দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও ফেরীতে গাড়ি না উঠার কারণে নদীর ওপার যেতে পারছিনা। কখন গাড়ি আসবে আর কখন ফেরি ছাড়বে সেই আসায় বসে আছি।
ফেরী ম্যানেজার ইমরান খান জানায়, হরতাল ও অবরোধের কারণে পূর্বের মতো যান চলাচল না করায় সরকার প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যেখানে ৩টি ফেরীতে ৩৫ বার পারাপার হতো সেখানে এখানে মাত্র ৫ থেকে ৬ বার খুব অল্প সংখ্যক গাড়ি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। এমন অবস্থা হতে থাকলে চাঁদপুরে ফেরী চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং চলাচলরত ফেরীগুলো বিকল হয়ে যেতে পারে।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ১৬ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।