প্রতিনিধি
চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ফেরিঘাট দিয়ে চট্টগ্রাম ও দক্ষিণাঞ্চলের সাথে চলাচলকারী বাস যাত্রীরা হয়রানীর শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে এ ফেরি দিয়ে যানবাহনের কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। খুলনা, বরিশাল, মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সাথে চাঁদপুরের উপর দিয়ে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
এ যোগাযোগের মাধ্যম হলো এ হরিণা ফেরিঘাট। এ ঘাটে চলাচলকারী গণপরিবহনের জন্য ঠিকাদার কর্তৃক ৬ জন লাইন ম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক পন্যবাহী পরিবহনের জন্য দু’ শিফ্টে আরো ৪জন লাইনম্যান রয়েছে। হরিণা ফেরিঘাট এলাকায় কমফোর্ড, দিদার, রোহান পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসসহ একটি পরিবহনের কাউন্টার রয়েছে। এসব কাউন্টারের লাইনম্যান দ্বায়িত্বে থাকা লোকজন যাত্রীবাহী বাসগুলোকে বিআইডব্লিউটিএ’র পার্কিং স্থানে প্রবেশ না করিয়ে রাস্তার উপর রেখে যানজটের সৃষ্টিকরে। দীর্ঘ সময় বাসে অবস্থানকারী যাত্রীরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে নানা ভয়ে ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। পবিত্র ঈদুল ফিতর ও আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক যাত্রী দ্রুত গন্ত্যব্যে পৌঁছার জন্য চট্টগ্রাম থেকে এসব গণপরিবহনের মাধ্যমে চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাটে এসে দীর্ঘসময় অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। তখন নারী যাত্রীরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বিড়াম্বনায় পড়তে হয়। সদ্য সমাপ্ত ঈদুল ফিতরের সময় দু’-তিনদিন পূর্ব থেকেই পর্যাপ্ত গণপরিবহন এ পথে চলাচল করেছে।
আর তখন এ লাইন ম্যানদের সহায়তায় নারী যাত্রীরা প্রকৃতির ডাকে বাস থেকে নামার পর নিজের ইজ্জত পর্যন্ত হারাতে হয়েছে। লোক লজ্জায় ঐসমস্ত নারীরা তাদের ইজ্জতহানির কথা কাউকে বলেনি। বিআইডব্লিইটিএ’র একটি সূত্র থেকে জানা যায়, চাঁদরাত ও তার আগের দিন স্থানীয় যুবকরা গৃহ বঁধূসহ তরুণীদের ইজ্জতহানি করেছে। স্থানীয় একটি ছিনতাইকারী চক্র মহিলা যাত্রীদের পানির মধ্যে ফেলে দিয়ে তাদের পার্স, ব্যানিটি ব্যাগ, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার পর্যন্ত ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। ভূক্তভোগী যাত্রীরা জানায়, আমরা বছরে একবার কি দু’বার এ পথ দিয়ে যাতায়াত করি। তাই লোক লজ্জায় কাউকে কিছু জানাইনি। বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, আমরা বাস চালকদেরকে নির্ধারিত স্থানে বাস প্রবেশ করার জন্য অনুরোধ করে থাকি। তাদেরকে আমরা এমনও বলেছি বাসগুলোকে ফেরিতে যাতায়াতের জন্য আমরা আগে প্রাধান্য দেব। আমাদের আয়ত্বে থাকা মালবাহী ট্রাক রাতের বেলায় যাতায়াত করবে। কিন্তু ঘাট ইজারাদারের নিয়োজিত লাইনম্যানরা ট্রাকগুলোকে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্ধারিত পার্কিং স্থানে প্রবেশ নাকরিয়ে রাস্তার উপরেই দাড় করিয়ে রাখে। আর এর ফলে বাস যাত্রীরাই নানা প্রকার বিপদে পড়তে হয়।
আরো জানা যায়, বর্তমানে এ ফেরি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণাঞ্চলে মোট ৮টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এর মধ্যে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৪টি বাস ও রাত ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত অপর ৪টি বাস চলাচল করে। দিনের চেয়ে রাতের বেলায় বাস যাত্রীরা সবচে’ বেশি ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হয়। আর নারী বাস যাত্রীরা এ সময়েই তাদের ইজ্জত হারাতে হয়।
চলতি বছরের ফেরিঘাট ডাক নেয়া ইজারাদার ছোট গাড়ি পারাপারে সরকারি নির্ধারিত টোল হচ্ছে মাত্র ৫৫ টাকা। কিন্তু সেখানে ফেরি ভাড়া নেয়া হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি। ছোট পিকআপ, মাইক্রো বাস সরকারি নির্ধারিত ফেরি ভাড়া ৮শ’ ৪০ টাকা। কিন্তু নেয়া হচ্ছে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। মাছের পোনার পিকআপ সরকারি ভাড়া ১৪শ’ টাকা, নেয়া হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ফেরিতে কর্মরত লোকজন গাড়ি পারাপারের সময় বকসিস বাবদ চালকদের কাছ থেকে গাড়ি প্রতি দেড় থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে বলে গাড়ি চালকরা জানায়। বিআইডব্লিউটি’এর কর্মকর্তারা নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের কাছে দাবি জানিয়েছেন সকল প্রকার যানবাহন যেনো, তার নির্দেশে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্ধারিত পার্কিংয়ে গাড়িগুলো পার্কিং করার ব্যবস্থা করেন। কেননা এ ঘাটটি বিআইডব্লিউটিএ’র পার্কিং স্থানটি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী নিজেই উদ্বোধন করেছিলেন। এখানে ট্রাক ও বাস যদি পার্কিং করা হয় তাহলে বাস যাত্রীরা নিরাপদে থাকতে পারবে।