তলিয়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটিসহ ৩০ মিটার জায়গা ভাঙ্গলেই বস্তা পড়ে, না ভাঙ্গলে নয় জেলা প্রশাসকের ভাঙ্গনস্থল পরিদর্শন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায় রাক্ষুসে মেঘনা ও পদ্মার ক্রমাগত স্রোতের কারণে শহর রক্ষা বাঁধে আবারো ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ১২ আগস্ট বুধবার দিবাগত রাত ৯টায় পুরাণবাজার হরিসভা রোডস্থ মোড় এলাকার শহর রক্ষা বাঁধে এ ভাঙ্গন দেখা দেয়। বাঁধ সংলগ্ন স্থানের উপরিভাগে হঠাৎ ফাটল দেখা দিলে তা পার্শ্বস্থ দোকানদারদের নজরে আসে। মুহূর্তের মধ্যে এ সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে শত শত উৎসুক মানুষ তা দেখার জন্য ভাঙ্গন কবলিত স্থানে ছুটে আসেন। সংবাদ পেয়ে পুরাণবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ মাসুদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন এবং উৎসুক জনতাকে স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় নিরাপদ দূরত্বে রাখতে চেষ্টা করেন। এর মধ্যে ঘটনা সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমানকে জানানো হলে তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীকে তা অবহিত করেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী বাবুল আক্তার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মনজুরুল হক ও মোঃ আশ্রাফুল হক ঘটনাস্থলে আসেন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে আসেন এনএসআইয়ের ডিডি মোঃ আজিজুল হক, চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিমউদ্দিন, চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রহমান ঢালী, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ, নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্যাংকার মুজিবুর রহমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
ভাঙ্গন শুরুতেই স্থানীয় এমপি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে চাঁদপুর শহর যুবলীগ নেতা আব্দুল মালেক শেখ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন। শিক্ষামন্ত্রী ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীকে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা প্রদান করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ ভাঙ্গন প্রতিরোধে রংপুরের ৮ জন লেবার দ্বারা ভাঙ্গন কবলিত স্থানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে শুরু করলেও তা ছিল খুবই অপ্রতুল। এরই মধ্যে নদী গর্ভে তলিয়ে যায় রাস্তার উপরে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় গ্যাস ও বিদুৎ সংযোগ। মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় অমাবস্যার অন্ধকার নেমে আসলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় বিদ্যুতের কিছু সংযোগ প্রথমে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে পরে তারা পুনরায় পুরো বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করতে সক্ষম হন। রাত ১২টায় স্থানীয় পর্যায়ে কিছু লেবার যোগান দেওয়ায় ভাঙ্গন কবলিত স্থানে বাল্কহেড থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ কিছুটা গতি লাভ করে। কিন্তু এর মধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় প্রায় ৩০ মিটারের মত শহর রক্ষা বাঁধের অংশবিশেষ। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে হরিসভা সড়ক। সড়কের নিচ দিয়ে বেশ কিছু অংশে সুড়ঙ্গ দেখা দেয়। ক্রমাগত ঢেউয়ের কারণে এ সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়। সকাল হতে ভাঙ্গনকবলিত স্থানের পরিধি কিছুটা বাড়তে থাকে, দেখা দেয় আরো বেশ কিছু জায়গা জুড়ে ফাটল। তবে আগের রাতের মত নদীতে তলিয়ে যায়নি নতুন কোনো অংশ। গতকাল ১৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। তিনি যে কোনো উপায়ে হরিসভা সড়কটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রহমান ঢালীসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। পর্যায়ক্রমে ঘটনাস্থলে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জহির উদ্দিন আহম্মেদ, বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জাহিদ হোসেন প্রমুখ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জহির উদ্দিন জানান, চাঁদপুর একটি ব্যবসায়িক বন্দর, এ শহরের যে অনেক গুরুত্ব রয়েছে তা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু পরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ করা না হলে শহর রক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন রোধ করা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। আমরা এজন্যে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ২০০২-২০০৩ সালে শহর রক্ষায় ৩৩৬০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আজ বেশ কয়েক বছর অতিক্রম হলেও ওই বাঁধের অনেক স্থানই পুনরায় রক্ষণাবেক্ষণ না করতে পারার কারণে হঠাৎ হঠাৎ বাঁধে এ ভাঙ্গন দেখা দেয়। তারপর রয়েছে নদীর প্রচ- স্রোত। এ স্রোতের কারণে বাঁধের ভাঙ্গন প্রক্রিয়া আরো সহজ হয়। তিনি বলেন, বাঁধের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ৪শ’ ৫০ কোটি টাকার মত প্রয়োজন। যদি প্রয়োজনীয় এ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে এ ভাঙ্গন প্রক্রিয়া রোধ করা অনেকটা সহজ হবে।
তবে ক্রমাগত এ ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় পুরাণবাজারবাসীর মাঝে ধীরে ধীরে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ ভাঙ্গন প্রক্রিয়া প্রতিরোধ করা খুবই সহজ। যেভাবে আন্তরিকতার সাথে শহর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, সেভাবে বাঁধ রক্ষায় তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি। বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিলেই বালুর বস্তা পড়ে, আর না ভাঙ্গলে পড়ে না। মানুষের বাড়িঘর আর ভিটেমাটি নদীতে তলিয়ে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টনক নড়ে, নতুবা আর খবর থাকে না। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় ধরে নদীর পাড়ে বসবাস করে আসছি, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে যদি কিছু বলতে চেষ্টা করি তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ আমলে নেন না। তারা বলেন, না, না ঠিক আছে ভয় নাই, এখান দিয়ে ভাঙ্গবে না। কিন্তু পরক্ষণে যখন ঐ স্থান দিয়েই ভাঙ্গন দেখা দেয় তখন কথা হয় ভিন্ন, কিন্তু তাতে তাদের কোনো ক্ষতি হয় না। ক্ষতি হয় আমাদের। হারিয়ে যায় আমাদের বাপ-দাদার ভিটামাটি। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই। তারা এজন্যে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ মিনি কঙ্বাজার উচ্ছেদ ও নদীতে ড্রেজিং ব্যবস্থা এবং অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করারও দাবি জানান। তারা মনে করেন, জরুরি ভিত্তিতে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে যদি বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা না হয় তাহলে শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী হরিসভা রাস্তাটির সাথে সাথে বাণিজ্যিক বন্দর পুরাণবাজারও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নদীতে তলিয়ে যাবে মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, এতিমখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শত শত মানুষের বসতঘর। আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে হাজার হাজার মানুষ। তাই ভাঙ্গন প্রতিরোধে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক তা বাস্তবায়নে চাঁদপুরের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির আন্তরিক সুদৃষ্টি কামনা করেছেন পুরাণবাজারবাসী। তারা মনে করেন মেঘনার দুপাড়ে দুজন প্রভাবশালী মন্ত্রী রয়েছেন। একজন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি আর অপরজন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। তাদের দায়িত্বকালীন সময়ে পুরাণবাজারের এ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে, যা আমাদের ভাবতে খুবই কষ্ট হয়।
এবারের নদী ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় খুবই অসহায় অবস্থার মুখে পতিত হয়েছে হরিসভা এলাকার কয়েকশ’ পরিবার। তাদের গ্যাস বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাদের অনেকেই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটিয়েছেন। সহসাই যদি গ্যাস সংযোগ না দেয়া হয়, তাহলে গরীব অসহায় পরিবারগুলো জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হবে।
বর্ষা মৌসুমে বিগত ২/৩ বছর ধরে পুরাণবাজার শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে ভাঙ্গন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও তা প্রকট আকার ধারণ করে পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায়। আর এ ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায়, প্রতি বছরই বসবাসরত মানুষজন তাদের বাপ দাদার ভিটা মাটি হারাচ্ছে আর নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এমনই পরিস্থিতিতে এ বছরের ৩ জুলাই হরিসভা এলাকার মোড় সংলগ্ন (বর্তমান ভাঙ্গনকবলিত) স্থানসহ প্রায় ৩০ মিটার এলাকাজুড়ে শহর রক্ষা বাঁধ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বাঁধ রক্ষায় জিও ট্যাঙ্রে ব্যাগসহ সিসি বস্নক নদীতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে এলাকাবাসীর মাঝে দেখা দেয় পুনরায় ভাঙ্গন আতঙ্ক। তারা ঘটনাটি তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান মহোদয়কে জানান। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। ছুটে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোঃ বাবুল আক্তারসহ কর্মকর্তাগণ। তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুভব করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জরুরি ভিত্তিতে জিও ট্যাঙ্রে বালুভর্তি ব্যাগ ফেলার নির্দেশ দেন ঠিকাদারের লোকজনদেরকে। কিন্তু এ স্থানে বালুভর্তি ব্যাগ ফেলার ওয়ার্কওয়ার্ডার না থাকায় ঠিকাদারের লোকজন গুটি কয়েক ব্যাগ ফেলেই রণে ভঙ্গ দেয়। ফলে ভাঙ্গন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় গত ৬ জুলাই হরিসভা এলাকার মোড় সংলগ্ন স্থানটি মারাত্মক ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে পড়ে। তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেয় ঐতিহ্যবাহী জনপদ হরিসভা এলাকার রাস্তাটি। রাস্তাটি রক্ষায় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পুরাণবাজারবাসী। তারা জানান, হরিসভা রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। এ সড়কটি যদি বিলীন হয়ে যায় তাহলে নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী জনপদ। মানচিত্র থেকে মুছে যাবে পুরাণবাজার নামক শব্দটি। ঠিক এ রাস্তাটিই আবার ভাঙ্গনের মুখে পতিত হয় গত একদিন আগে। বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ চলাকালীন পুনরায় ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় ভাঙ্গন আতঙ্কসহ নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে। তাদের প্রশ্ন, আদৌ রক্ষা হবে কি শহর রক্ষা বাঁধ? রক্ষা পাবে কি পুরাণবাজার?
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই পুরাণবাজার শহর রক্ষা বাঁধের হরিসভা মন্দির সংলগ্ন স্থানে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দেয়। কয়েক ঘন্টা ভাঙ্গনের ফলে বাড়ি, ঘর, স্থাপনাসহ বিশাল অংশ জুড়ে নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। দীর্ঘ ২০/২২ বছর পর এ স্থানে এমন ভাঙ্গন প্রক্রিয়া দেখে এলাকার মানুষসহ পুরো পুরাণবাজারবাসীর মাঝে ভাঙ্গন আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। যদি ভাঙ্গন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে তাহলে তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। সেদিনের ভাঙ্গনকালীন সময় ভাঙ্গনকবলিত স্থানে ত্বরিৎগতিতে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের সকল বিভাগের কর্মকর্তাগণ। তারা যুদ্ধকালীন সময়ের মত বিশাল নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে পারলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করতে না পারায় শহর রক্ষা বাঁধের অনেকাংশ নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। সন্ধ্যা রাতে ভাঙ্গন শুরু হলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় প্রয়োজনীয় ট্রান্সপোর্টের জন্য। রাত ২টার পর শম্বুক গতিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ শুরু হয়। চাঁদপুরের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির যোগাযোগের মাধ্যমে ভাঙ্গন সংবাদ শুনে ঘটনাস্থল দেখার জন্য পর্যায়ক্রমে ছুটে আসেন পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তাঁরা ঘোষণা দেন, বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে যা যা করণীয় তার সবই করা হবে। যা শুনে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের মাঝে আশার আলো দেখা দেয়। সেই সময় ভাঙ্গন প্রতিরোধে গ্রহণ করা হয় সাময়িক ব্যাবস্থা। কথা ছিল বর্ষা পার হলে শুকনো মৌসুমে স্থায়ীভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরই মাঝে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর বিকেলে প্রায় আড়াইমাসের মাথায় হরিসভা মন্দির কমপ্লেঙ্রে কিছুটা উত্তরে গিয়ে পুনরায় শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয় (বর্তমান ভাঙ্গনকৃত স্থান)। তলিয়ে যায় বাঁধের পাশে থাকা কয়েকটি বাড়িঘরসহ বেশ কিছু অংশ। ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ। সেইসময়ও জরুরি ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ট্যাঙ্রে ব্যাগ ফেলে অবস্থা সাময়িকভাবে সামাল দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়েছিল, বর্ষা পার হয়ে গেলে শুকনা মৌসুমে শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণপূর্বক কাজ করা হবে। কিন্তু সেই সময় বর্ষা পার হওয়ার পরও সময়মত কাজ না করায় এখন আবার পুরাণবাজারের মানুষের মাঝে পুনরায় ভাঙ্গন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা না হলে বর্ষা মৌসুমে এ স্থানে প্রমত্তা মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিবে। ফলে ঐতিহ্যবাহী পুরাণবাজারের হরিসভা এলাকাসহ মন্দির, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরের স্থান, হাট বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি কিছুই রক্ষা হবে না। তলিয়ে যাবে পুরাণবাজারের ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র রাক্ষুসে মেঘনার অতল গর্ভে।