হাইমচর প্রতিনিধি-
হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীতে প্রকাশ্যে নিধন হচ্ছে মা ইলিশ। উপজেলার লামচরী হতে জালিয়ারচর পর্যন্ত আড়ৎগুলোর আশপাশে, বাগানে, ধনছে ৰেতে ও বিভিন্ন বাড়িতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশ। হাইমচর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল হতে মোটরসাইকেল ও সিএনজি স্কুটার নিয়ে ক্রেতারা এসে নামমাত্র মূল্যে নিরাপদে ইলিশ কিনে চলে যাচ্ছে। উপজেলা টাস্কফোর্স ও পুলিশ প্রশাসন অভিযান চালালেও এর কোনো প্রভাব পড়ছেনা জেলেদের উপর। স্থানীয়দের অভিযোগ ভাই-ভাই সিন্ডিকেট, এংরাজ দর্জি, রুহুল আমিন মেম্বার, সৈয়দ চকিদার, গিয়াস উদ্দিন সিকদার ও ক্ষমতাসীন দলের তৃতীয়সারির একজন নেতাসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হাত থাকায় প্রকাশ্যে মা ইলিশ নিধন হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাইমচর উপজেলার লামচরী হতে জালিয়ারচর পর্যনত্দ এবং মাঝের চরসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৪ ঘণ্টায়ই জেলেরা প্রকাশ্যে মা ইলিশ নিধন করছে। নিধনকৃত মা ইলিশ লামচরী এলাকার আবুল মেম্বারের বাড়ির বাগানে, কাটাখালীর দক্ষিণ পাশ্র্বে তফাদার বাড়িসহ বিভিন্ন বাড়িতে, পশ্চিম চরকৃষ্ণপুরের তাজুল বেপারীর বাড়ির আশপাশে, পুরাতন কলেজ মাঠের আশপাশের ধান ও ধনছে ক্ষেতে, হাইমচর পুরাতন বাজার এলাকার আড়ৎ-এর পার্শ্ববর্তী বাগান ও ধনছে ক্ষেত, চরভৈরবী বাজার সংলগ্ন মসজিদের পেছনে, জালিয়ারচর এলাকার বিভিন্ন বাগান ও বাড়িতে, মাঝের চরের দেলোয়ার পেদার আড়ৎ, সৈয়দ চকিদারের আড়ৎ, গিয়াস উদ্দিন সিকদারের আড়ৎসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার ইলিশ মাছ। ভোর হতে রাত ১০-১২টা পর্যন্ত বিক্রি চলে। ইলিশ বিক্রির স্পটগুলোতে হাইমচর ও পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল হতে মোটর সাইকেল ও সিএনজি স্কুটার নিয়ে নারী ও পুরুষ ক্রেতারা এসে নামমাত্র মূল্যে নিরাপদে ইলিশ কিনে চলে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ অভিযান চালালেও লোক দেখানো এ অভিযানের কোনো সুফল পাওয়া যায় না। অভিযোগ রয়েছে জেলে আড়ৎদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মা ইলিশ নিধনের এ মহোৎসব চালাচ্ছে। স্থানীয় কিছু যুবক বাধা দিলেও প্রভাবশালীদের কারণে তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। স্থানীয় যুবক রাছেল বেপারী জানান, গত শুক্রবার রাতে স্পীডবোটযোগে ১০-১২ জন ক্রেতা ৮-১০ বস্তা ইলিশ কিনে হাইমচর পুরাতন কলেজ এলাকাতে আসলে সে মাছগুলো আটক করে প্রশাসনকে জানানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রভাবশালীরা এসে মাছগুলো নিয়ে যায়। এভাবে বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত থাকায় কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে প্রশাসনেও কোনো সমন্বয় নেই।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, আমরা পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে নিয়মিত অভিযান চালাতে পারছি না। তারা নিজেরাই অভিযান চালায় কিন্তু আমাদেরকে কোনো তথ্য দেয় না। ইলিশ বিক্রির প্রধান স্পট কাটাখালীতে কোস্টগার্ডের তৎপরতায় মাছ বিক্রি বন্ধ হওয়ায় সচেতন হাইমচরবাসীর দাবি, উপজেলার মা ইলিশ নিধনের জোনগুলোতে অভিযানের বাকি দিনগুলোতে কোস্টগার্ডের সার্বৰণিক পাহারা বসিয়ে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করার বাস্তব পদক্ষেপ নেবেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।